অস্ট্রেলিয়া: ৫০ ওভারে ৩৬১/৮
বাংলাদেশ: ৫০ ওভারে ২৯৫/৬
ফল: অস্ট্রেলিয়া ৬৬ রানে জয়ী
মিরপুর স্টেডিয়াম অনেকটা বিশ্বকাপের চেহারায় ফিরে গেল কাল। গ্যালারি প্রায় পূর্ণ। জয়-পরাজয়ের কথা ভুলে শুধু খেলার মূল উদ্দেশ্যের কথা ভাবলে সেই দর্শকদের খুব একটা অভিযোগ থাকার কথা নয়। খেলার মূল উদ্দেশ্য বিনোদন। সিরিজের তৃতীয় ও শেষ ম্যাচে দর্শকেরা ভালোই বিনোদিত হলো। এককথায় পয়সা উশুল।
সেই বিশ্বকাপের উদ্বোধনী ম্যাচের পর মিরপুরে খেলা মানেই রানের খরা। ব্যাটসম্যানদের প্রাণান্ত চেষ্টায় রান করা। অস্ট্রেলিয়া সিরিজের প্রথম দুই ম্যাচও একটু ব্যতিক্রম ছিল। তবে বাংলাদেশের দর্শকদের সেটি উপভোগ করার মতো পরিস্থিতি ছিল না। প্রথম ম্যাচে অস্ট্রেলিয়ার ২৭০, দ্বিতীয় ম্যাচে ওয়াটসনের ছক্কা-বৃষ্টি। তৃতীয় ম্যাচে বাংলাদেশ দলও দর্শকদের কিছু আনন্দের উপলক্ষ দিতে পারল।
লো-স্কোরিং ওয়ানডেরও মজা আছে। তবে সেটির পূর্বশর্ত রোমাঞ্চকর সমাপ্তি। হাই-স্কোরিং ম্যাচে ফলাফল যা-ই হোক, দর্শকদের লাফালাফি করার প্রচুর সুযোগ থাকে। ১০০ ওভারে ৬৫৬ রান। ৬৩টি চার ও ১৪টি ছয়। কালকের দিবারাত্রির ম্যাচও তা সেই সুযোগ ভালোই করে দিল। ওয়ানডের জন্য চরমতম দুঃস্বপ্ন এক ইনিংস শেষেই ম্যাচ শেষ হয়ে যাওয়াটাও সেই আনন্দে খুব একটা বাদ সাধতে পারল না। ৬৬ রানের পরাজয়, কিন্তু বিশ্বকাপ স্বপ্নভঙ্গ ও সিরিজের প্রথম দুই ম্যাচে অসহায় আত্মসমর্পণ বিবেচনায় এটিকেও বলতে হচ্ছে দীর্ঘ আন্তর্জাতিক মৌসুমের স্মরণীয় সমাপ্তি!
উইকেট ক্রিকেটের সবচেয়ে বড় রহস্যগুলোর একটি। মিরপুরের উইকেট আরও এককাঠি সরেস। এখানে উইকেট কখন যে কার দিকে তাকিয়ে হাসবে, সেটি দেব না জানন্তি। দ্বিতীয় ম্যাচে ওয়াটসনের ১৫ ছক্কার বিশ্ব রেকর্ডের পরও বাংলাদেশের খেলোয়াড়েরা বলছিলেন, ছক্কা মারতে পারলেই ব্যাটিং উইকেট হয়ে যায় না। উইকেট খুব ব্যাটিংবান্ধব ছিল না। তবে তৃতীয় ম্যাচের উইকেট ঠিকই ব্যাটসম্যানদের পরম বন্ধু হয়ে আবির্ভূত হলো। টসে জিতে সেই উইকেটে প্রথম ব্যাটিং করেই অস্ট্রেলিয়া ম্যাচের ফলাফল নিয়ে আলোচনা শেষ করে দিল।
জিততে হলে (!) বাংলাদেশকে করতে হতো ৩৬২ রান। ওয়ানডে ইতিহাসেই সাড়ে তিন শ রানের বেশি তাড়া করে জয়ের ঘটনা আছে মাত্র একটি। সেটি সর্বকালের সেরা চেজ—২০০৬ সালে অস্ট্রেলিয়ার ৪৩৪ রান তাড়া করে দক্ষিণ আফ্রিকার জয়।
এই মিরপুরে রেকর্ডটা আরও নিরুৎসাহজনক। এখানে পরে ব্যাটিং করে সবচেয়ে বেশি রান করে জয়ের রেকর্ড ২৯৭ রান। সেটি বাংলাদেশেরই বিপক্ষে (২০১০ সালে ভারত)। ওয়ানডে ইতিহাস বা মিরপুর মাঠের রেকর্ডের আগে অবশ্য অস্ট্রেলিয়া-বাংলাদেশ দ্বৈরথের রেকর্ডটা দেখা উচিত। বাংলাদেশের একটিই জয়। সেটি ২৪৯ রান তাড়া করে। ২০০৫ সালে কার্ডিফের সেই অবিস্মরণীয় ম্যাচে।
সেই রেকর্ডকে ১১২ রান বাড়িয়ে নেওয়া বাংলাদেশের অসাধ্য ছিল। তবে রেকর্ড কিন্তু বেশ কিছু হলো। ৬ উইকেটে ২৯৫ অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ রান (আগের সর্বোচ্চ কার্ডিফেরই ওই ২৪৯)। দ্বিতীয় উইকেটে ইমরুল কায়েস ও শাহরিয়ার নাফীসের ১৩৬ রান অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে যেকোনো জুটিতেই বাংলাদেশের নতুন রেকর্ড। এখানেও পেছনে পড়ল সেই কার্ডিফ (চতুর্থ উইকেটে আশরাফুল-হাবিবুলের ১৩০)। কার্ডিফের দুটি কীর্তিকে ছাড়িয়ে গিয়েও জয়টার পুনরাবৃত্তি করা গেল না, তার কারণ তো একটাই। ৩৬১ তাড়া করার মতো সামর্থ্য বাংলাদেশের এখনো হয়নি। বড় কোনো দলের বিপক্ষে আগে ব্যাট করেই এখনো তিন শ করতে পারেনি বাংলাদেশ (সর্বোচ্চ ভারতের বিপক্ষে ২৯৬, মিরপুর, ২০১০), অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে পরে ব্যাটিং করে ৩৬২ করবে কীভাবে!
ব্রেট লিকে বাইরে রেখে নামা অস্ট্রেলিয়া তাই কখনোই ম্যাচ নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েনি। তবে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের ভয়ডরহীন স্ট্রোক প্লেতে একটু চমকে তো অবশ্যই গেছে। চমকে দেওয়ার কাজটা প্রথম করেছেন যথারীতি তামিম ইকবাল। জনসনের প্রথম ওভারেই চার ও ছয়। ২০০ স্ট্রাইক রেটে ১৬ বলে ৩২ করে ফেলার পর জনসনের প্রায় ইয়র্কার বলে বোল্ড হয়েছেন। তবে ইমরুল ও শাহরিয়ার সেটিকে মোটেই ধাক্কা মনে করতে দেননি।
দ্বিতীয় ওয়ানডেতে ইমরুল কায়েসের ৪১ বলে ৫ করার ‘কীর্তি’ ১৯৭৫ বিশ্বকাপে ৬০ ওভার খেলে সুনীল গাভাস্কারের ৩৬ রানে অপরাজিত থাকার মতোই অবিশ্বাস্য। সেই ইমরুলই কাল রান আর বলে প্রায় সমতা রেখে ৯৫ বলে ৯৩। ওয়ানডেতে দ্বিতীয় সেঞ্চুরিটা প্রাপ্য ছিল। ওয়ানডেতে প্রথম উইকেট হিসেবে প্যাটিনসন তাঁকেই বেছে নেওয়ায় তা আর পাওয়া হলো না।
শাহরিয়ার নাফীস ৬০ রান করে জুনায়েদের দলে ফেরাটা খুব কঠিন বানিয়ে দিলেন। আর মাহমুদউল্লাহ ৬১ বলে অপরাজিত ৬৮ রানের ইনিংস খেলে বুঝিয়ে দিলেন, গত কিছুদিন বাংলাদেশ দলের জন্য মহা দুশ্চিন্তার চার নম্বর পজিশনটা তাঁরই প্রাপ্য। সেটি টিম ম্যানেজমেন্ট বুঝলেও মাহমুদউল্লাহর নিজেরই ওপরে ব্যাট করায় আপত্তি ছিল বলে শোনা যায়। এবার যদি তিনি দলের ভালোর সঙ্গে নিজের ভালোটাও বোঝেন।
প্রায় আড়াই বছর পর বাংলাদেশ দলে ফেরা অলক কাপালি ১৩ রানেই শেষ হয়ে না গেলে পরাজয়ের মধ্যেও ম্যাচটাতে আলোর ঝলকানিটা আরও তীব্র হতো। বোলিংয়ে আরও কিছু করতে পারতেন কি না, সেটি যে জানা গেল না সেই দায় অবশ্য অলকের নয়। ২ ওভারে ৮ রান দেওয়ার পরও তাঁকে আর বোলিং করাননি অধিনায়ক।
পয়লা বৈশাখের আবাহনের দিনে অস্ট্রেলিয়ার ইনিংসের শুরুটাও ছিল কালবৈশাখীর মতো। ৮ ওভারেই ওয়াটসন ও পন্টিংয়ের ৮০ রান। বোলাররা বল ফেলার জায়গা পাচ্ছেন না এমন অবস্থা। এই অবস্থায় পরিত্রাণের একমাত্র উপায় উইকেট তুলে নেওয়া। তা নিয়েই একটু স্বস্তিতে ফেরা গিয়েছিল। হাসি আর জনসনের ৭০ রানের ঝোড়ো জুটিটি খুব দ্রুতই কেড়ে নিয়েছে সেই স্বস্তি। তিন ম্যাচে তিন সেঞ্চুরি অস্ট্রেলিয়ার। ক্লার্ক ও ওয়াটসনের পর হাসি। চার বছরের মধ্যে তাঁর প্রথম ওয়ানডে সেঞ্চুরি।
জনসনের ২৪ বলে ৪১। পরে ৩ উইকেট। মাশরাফি ব্যাটিংয়েরই সুযোগ পাননি, তবে বোলিংয়ে দুজনের মধ্যে অনেক মিল। দুজনই ওয়ানডেতে ১৫০তম উইকেট পেলেন এই ম্যাচে। উইকেটও ৩টি করে। রান খরচেও কাছাকাছি। ৯ ওভারে জনসন ৬৭। মাশরাফি ৮০। প্রথম স্পেলের ৪ ওভারে ৪৩ রান দেওয়ার পর ব্যাটিং পাওয়ার প্লেতে মাশরাফির বোলিংকে মনে হচ্ছিল দুর্দান্ত প্রত্যাবর্তন। কিন্তু ৩ ওভারের দ্বিতীয় স্পেলের প্রথম ১৫ বলে ৭ রান দেওয়ার পর শেষ তিন বলে দিয়ে ফেললেন ১৬ রান। এখানেও জনসন—৪ ৬ ৬।
বাংলাদেশ আক্ষেপ করলে বোলিং নিয়েই করতে পারে। ব্যাটিংকে বলতে হবে গত কিছুদিনের মধ্যে সেরা। পরে ব্যাটিং করে অল্পের জন্য না পারলে ২০-২৫টা রান বেশি দিয়ে ফেলার আক্ষেপ থাকে। এখানে আক্ষেপটা ৬০-৬৫ রানের। এ কারণেই ২৯৫ রান করেও কপালে বড় পরাজয়!
বাংলাদেশ: ৫০ ওভারে ২৯৫/৬
ফল: অস্ট্রেলিয়া ৬৬ রানে জয়ী
মিরপুর স্টেডিয়াম অনেকটা বিশ্বকাপের চেহারায় ফিরে গেল কাল। গ্যালারি প্রায় পূর্ণ। জয়-পরাজয়ের কথা ভুলে শুধু খেলার মূল উদ্দেশ্যের কথা ভাবলে সেই দর্শকদের খুব একটা অভিযোগ থাকার কথা নয়। খেলার মূল উদ্দেশ্য বিনোদন। সিরিজের তৃতীয় ও শেষ ম্যাচে দর্শকেরা ভালোই বিনোদিত হলো। এককথায় পয়সা উশুল।
সেই বিশ্বকাপের উদ্বোধনী ম্যাচের পর মিরপুরে খেলা মানেই রানের খরা। ব্যাটসম্যানদের প্রাণান্ত চেষ্টায় রান করা। অস্ট্রেলিয়া সিরিজের প্রথম দুই ম্যাচও একটু ব্যতিক্রম ছিল। তবে বাংলাদেশের দর্শকদের সেটি উপভোগ করার মতো পরিস্থিতি ছিল না। প্রথম ম্যাচে অস্ট্রেলিয়ার ২৭০, দ্বিতীয় ম্যাচে ওয়াটসনের ছক্কা-বৃষ্টি। তৃতীয় ম্যাচে বাংলাদেশ দলও দর্শকদের কিছু আনন্দের উপলক্ষ দিতে পারল।
লো-স্কোরিং ওয়ানডেরও মজা আছে। তবে সেটির পূর্বশর্ত রোমাঞ্চকর সমাপ্তি। হাই-স্কোরিং ম্যাচে ফলাফল যা-ই হোক, দর্শকদের লাফালাফি করার প্রচুর সুযোগ থাকে। ১০০ ওভারে ৬৫৬ রান। ৬৩টি চার ও ১৪টি ছয়। কালকের দিবারাত্রির ম্যাচও তা সেই সুযোগ ভালোই করে দিল। ওয়ানডের জন্য চরমতম দুঃস্বপ্ন এক ইনিংস শেষেই ম্যাচ শেষ হয়ে যাওয়াটাও সেই আনন্দে খুব একটা বাদ সাধতে পারল না। ৬৬ রানের পরাজয়, কিন্তু বিশ্বকাপ স্বপ্নভঙ্গ ও সিরিজের প্রথম দুই ম্যাচে অসহায় আত্মসমর্পণ বিবেচনায় এটিকেও বলতে হচ্ছে দীর্ঘ আন্তর্জাতিক মৌসুমের স্মরণীয় সমাপ্তি!
উইকেট ক্রিকেটের সবচেয়ে বড় রহস্যগুলোর একটি। মিরপুরের উইকেট আরও এককাঠি সরেস। এখানে উইকেট কখন যে কার দিকে তাকিয়ে হাসবে, সেটি দেব না জানন্তি। দ্বিতীয় ম্যাচে ওয়াটসনের ১৫ ছক্কার বিশ্ব রেকর্ডের পরও বাংলাদেশের খেলোয়াড়েরা বলছিলেন, ছক্কা মারতে পারলেই ব্যাটিং উইকেট হয়ে যায় না। উইকেট খুব ব্যাটিংবান্ধব ছিল না। তবে তৃতীয় ম্যাচের উইকেট ঠিকই ব্যাটসম্যানদের পরম বন্ধু হয়ে আবির্ভূত হলো। টসে জিতে সেই উইকেটে প্রথম ব্যাটিং করেই অস্ট্রেলিয়া ম্যাচের ফলাফল নিয়ে আলোচনা শেষ করে দিল।
জিততে হলে (!) বাংলাদেশকে করতে হতো ৩৬২ রান। ওয়ানডে ইতিহাসেই সাড়ে তিন শ রানের বেশি তাড়া করে জয়ের ঘটনা আছে মাত্র একটি। সেটি সর্বকালের সেরা চেজ—২০০৬ সালে অস্ট্রেলিয়ার ৪৩৪ রান তাড়া করে দক্ষিণ আফ্রিকার জয়।
এই মিরপুরে রেকর্ডটা আরও নিরুৎসাহজনক। এখানে পরে ব্যাটিং করে সবচেয়ে বেশি রান করে জয়ের রেকর্ড ২৯৭ রান। সেটি বাংলাদেশেরই বিপক্ষে (২০১০ সালে ভারত)। ওয়ানডে ইতিহাস বা মিরপুর মাঠের রেকর্ডের আগে অবশ্য অস্ট্রেলিয়া-বাংলাদেশ দ্বৈরথের রেকর্ডটা দেখা উচিত। বাংলাদেশের একটিই জয়। সেটি ২৪৯ রান তাড়া করে। ২০০৫ সালে কার্ডিফের সেই অবিস্মরণীয় ম্যাচে।
সেই রেকর্ডকে ১১২ রান বাড়িয়ে নেওয়া বাংলাদেশের অসাধ্য ছিল। তবে রেকর্ড কিন্তু বেশ কিছু হলো। ৬ উইকেটে ২৯৫ অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ রান (আগের সর্বোচ্চ কার্ডিফেরই ওই ২৪৯)। দ্বিতীয় উইকেটে ইমরুল কায়েস ও শাহরিয়ার নাফীসের ১৩৬ রান অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে যেকোনো জুটিতেই বাংলাদেশের নতুন রেকর্ড। এখানেও পেছনে পড়ল সেই কার্ডিফ (চতুর্থ উইকেটে আশরাফুল-হাবিবুলের ১৩০)। কার্ডিফের দুটি কীর্তিকে ছাড়িয়ে গিয়েও জয়টার পুনরাবৃত্তি করা গেল না, তার কারণ তো একটাই। ৩৬১ তাড়া করার মতো সামর্থ্য বাংলাদেশের এখনো হয়নি। বড় কোনো দলের বিপক্ষে আগে ব্যাট করেই এখনো তিন শ করতে পারেনি বাংলাদেশ (সর্বোচ্চ ভারতের বিপক্ষে ২৯৬, মিরপুর, ২০১০), অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে পরে ব্যাটিং করে ৩৬২ করবে কীভাবে!
ব্রেট লিকে বাইরে রেখে নামা অস্ট্রেলিয়া তাই কখনোই ম্যাচ নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েনি। তবে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের ভয়ডরহীন স্ট্রোক প্লেতে একটু চমকে তো অবশ্যই গেছে। চমকে দেওয়ার কাজটা প্রথম করেছেন যথারীতি তামিম ইকবাল। জনসনের প্রথম ওভারেই চার ও ছয়। ২০০ স্ট্রাইক রেটে ১৬ বলে ৩২ করে ফেলার পর জনসনের প্রায় ইয়র্কার বলে বোল্ড হয়েছেন। তবে ইমরুল ও শাহরিয়ার সেটিকে মোটেই ধাক্কা মনে করতে দেননি।
দ্বিতীয় ওয়ানডেতে ইমরুল কায়েসের ৪১ বলে ৫ করার ‘কীর্তি’ ১৯৭৫ বিশ্বকাপে ৬০ ওভার খেলে সুনীল গাভাস্কারের ৩৬ রানে অপরাজিত থাকার মতোই অবিশ্বাস্য। সেই ইমরুলই কাল রান আর বলে প্রায় সমতা রেখে ৯৫ বলে ৯৩। ওয়ানডেতে দ্বিতীয় সেঞ্চুরিটা প্রাপ্য ছিল। ওয়ানডেতে প্রথম উইকেট হিসেবে প্যাটিনসন তাঁকেই বেছে নেওয়ায় তা আর পাওয়া হলো না।
শাহরিয়ার নাফীস ৬০ রান করে জুনায়েদের দলে ফেরাটা খুব কঠিন বানিয়ে দিলেন। আর মাহমুদউল্লাহ ৬১ বলে অপরাজিত ৬৮ রানের ইনিংস খেলে বুঝিয়ে দিলেন, গত কিছুদিন বাংলাদেশ দলের জন্য মহা দুশ্চিন্তার চার নম্বর পজিশনটা তাঁরই প্রাপ্য। সেটি টিম ম্যানেজমেন্ট বুঝলেও মাহমুদউল্লাহর নিজেরই ওপরে ব্যাট করায় আপত্তি ছিল বলে শোনা যায়। এবার যদি তিনি দলের ভালোর সঙ্গে নিজের ভালোটাও বোঝেন।
প্রায় আড়াই বছর পর বাংলাদেশ দলে ফেরা অলক কাপালি ১৩ রানেই শেষ হয়ে না গেলে পরাজয়ের মধ্যেও ম্যাচটাতে আলোর ঝলকানিটা আরও তীব্র হতো। বোলিংয়ে আরও কিছু করতে পারতেন কি না, সেটি যে জানা গেল না সেই দায় অবশ্য অলকের নয়। ২ ওভারে ৮ রান দেওয়ার পরও তাঁকে আর বোলিং করাননি অধিনায়ক।
পয়লা বৈশাখের আবাহনের দিনে অস্ট্রেলিয়ার ইনিংসের শুরুটাও ছিল কালবৈশাখীর মতো। ৮ ওভারেই ওয়াটসন ও পন্টিংয়ের ৮০ রান। বোলাররা বল ফেলার জায়গা পাচ্ছেন না এমন অবস্থা। এই অবস্থায় পরিত্রাণের একমাত্র উপায় উইকেট তুলে নেওয়া। তা নিয়েই একটু স্বস্তিতে ফেরা গিয়েছিল। হাসি আর জনসনের ৭০ রানের ঝোড়ো জুটিটি খুব দ্রুতই কেড়ে নিয়েছে সেই স্বস্তি। তিন ম্যাচে তিন সেঞ্চুরি অস্ট্রেলিয়ার। ক্লার্ক ও ওয়াটসনের পর হাসি। চার বছরের মধ্যে তাঁর প্রথম ওয়ানডে সেঞ্চুরি।
জনসনের ২৪ বলে ৪১। পরে ৩ উইকেট। মাশরাফি ব্যাটিংয়েরই সুযোগ পাননি, তবে বোলিংয়ে দুজনের মধ্যে অনেক মিল। দুজনই ওয়ানডেতে ১৫০তম উইকেট পেলেন এই ম্যাচে। উইকেটও ৩টি করে। রান খরচেও কাছাকাছি। ৯ ওভারে জনসন ৬৭। মাশরাফি ৮০। প্রথম স্পেলের ৪ ওভারে ৪৩ রান দেওয়ার পর ব্যাটিং পাওয়ার প্লেতে মাশরাফির বোলিংকে মনে হচ্ছিল দুর্দান্ত প্রত্যাবর্তন। কিন্তু ৩ ওভারের দ্বিতীয় স্পেলের প্রথম ১৫ বলে ৭ রান দেওয়ার পর শেষ তিন বলে দিয়ে ফেললেন ১৬ রান। এখানেও জনসন—৪ ৬ ৬।
বাংলাদেশ আক্ষেপ করলে বোলিং নিয়েই করতে পারে। ব্যাটিংকে বলতে হবে গত কিছুদিনের মধ্যে সেরা। পরে ব্যাটিং করে অল্পের জন্য না পারলে ২০-২৫টা রান বেশি দিয়ে ফেলার আক্ষেপ থাকে। এখানে আক্ষেপটা ৬০-৬৫ রানের। এ কারণেই ২৯৫ রান করেও কপালে বড় পরাজয়!