Wednesday, August 17, 2011

 মুশফিক-বীরত্বের পরও সিরিজ হাতছাড়া


সিরিজে বাকি আরও দুটি ম্যাচ। তবে এর আগেই ৩-০ করে ফেলল স্বাগতিক জিম্বাবুয়ে! আর ব্যাটে-বলে সমানতালে ব্যর্থ হয়ে বাংলাদেশ করল সিরিজ হাতছাড়া।
ঘুরে দাঁড়ানো হলো না সাকিব আল হাসানদের। ৪ উইকেট, ৭ উইকেটের পর আজ তৃতীয় ওয়ানডেতে বাংলাদেশের হার ৫ রানে। সিরিজ হাতছাড়া হওয়ায় এখন বাংলাদেশ দলের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ ‘হোয়াইটওয়াশ’ ঠেকানো!
১০০ বলে ১০১ রান—৮ চার, ১ ছয়। বীরোচিত ইনিংস খেলে বাংলাদেশকে জয়ের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে গিয়েছিলেন মুশফিকুর রহিম। তবে নায়কের বদলে এখন উল্টো মুশফিককে ‘খলনায়ক’ বলেও আখ্যায়িত করতে পারেন অনেকে! ৫ বলে প্রয়োজন ছিল মাত্র ৬ রান। হাতে শুধু একটি উইকেট। এ অবস্থায় কী দরকার ছিল ওভাবে তুলে মারার? তাড়াহুড়ো করতে গিয়ে মুশফিক ক্যাচ-আউট হলেন—অলআউট হয়ে গেল বাংলাদেশও!
প্রথম দুই ম্যাচে দলের হার ডেকে এনেছিলেন ব্যাটসম্যানরা, ১৮৪ ও ১৮৮ রানে অলআউট হয়ে। আজ হার ডেকে আনার দায়িত্বটা যেন পড়েছিল বোলারদের ওপর! বাংলাদেশি বোলারদের চোখরাঙিয়ে মাসাকাদজা করলেন ৭৪ রান, টাইবু খেললেন ৮৩ রানের ইনিংস। এই দুই ব্যাটসম্যানের ব্যাটের ওপর ভর করে জিম্বাবুয়ের সংগ্রহ দাঁড়াল ২৫০! জিম্বাবুয়ের সফরে গিয়ে অসহায় সাকিব-তামিমদের কাছে সংগ্রহটা বিস্ময়েরই বটে!
হতাশার মধ্যেও ব্যাটসম্যানদের ধন্যবাদ না দিয়ে উপায় নেই। উদ্বোধনী জুটিতে এলো ৫০ রান। প্রথম দুই ম্যাচে ৪ ও ৩ করা তামিম ইকবাল খেললেন ৪৪ রানের ইনিংস। আশরাফুলের জায়গায় খেলতে আসা শুভাগত হোম অভিষেক ম্যাচে করলেন ৩২ রান। মুশফিকুর রহিম সেঞ্চুরি করলেন। কম কীসে!
সংক্ষিপ্ত স্কোর—
জিম্বাবুয়ে: ২৫০/৭ (৫০ ওভার)
টাইবু ৮৩, মাসাকাদজা ৭৪
রুবেল ৪১/২, সাকিব ৪৬/২
বাংলাদেশ: ২৪৫/অলআউট (৪৯.২ ওভার)
মুশফিক ১০১, তামিম ৪৪
উেসয়া ৪৭/৩, পোফু ৪৩/২, জারভিজ ৫২/২

Tuesday, August 9, 2011

এই পরাজয়ে বড় লজ্জা

জিম্বাবুয়ে: ৩৭০ ও ২৯১/৫ (ডিক্লে.)
বাংলাদেশ: ২৮৭ ও ২৪৪
ফল: জিম্বাবুয়ে ১৩০ রানে জয়ী

বড় সিরিজ-টিরিজ জিতলে শ্যাম্পেনে ভেজেন খেলোয়াড়েরা। নিজেদের দেশে খেলা হলে ল্যাপ অব অনারও দেয় কখনো কখনো। কিন্তু এক টেস্ট জিতেই?
হারারে টেস্টে জয়ের পর জিম্বাবুইয়ান খেলোয়াড়েরা শ্যাম্পেনে ভিজলেন। জাতীয় পতাকা গায়ে জড়িয়ে দিল ল্যাপ অব অনারও। টেস্ট ক্রিকেটে ব্যতিক্রমী আরেকটি ব্যাপারও ঘটল। খেলোয়াড়দের সবার গলায় পরিয়ে দেওয়া হলো স্বর্ণপদক।
এমনিতেই জিম্বাবুয়ের কাছে টেস্ট জয় মহার্ঘ্য এক ব্যাপার। ৮৪তম টেস্টে এটি মাত্র নবম জয়। শ্যাম্পেন-ল্যাপ অব অনার-স্বর্ণপদক এসবের কারণ অবশ্য অন্য। এটি তো শুধুই একটি টেস্ট জয় নয়। পাকিস্তান ও ভারতের বিপক্ষেও তো টেস্ট জিতেছে জিম্বাবুয়ে। সে সবকেও ছাপিয়ে গেছে বাংলাদেশের বিপক্ষে এই জয়। সাবেক অধিনায়ক ও বর্তমান প্রধান নির্বাচক অ্যালিস্টার ক্যাম্পবেল যেমন বললেন, ‘অনেক নিদ্রাহীন রাতের পর এই জয়।’
নিদ্রাহীন রাতের সঙ্গে ছিল অনেক লজ্জা, অনেক অপমানও। বর্ণবাদের কারণে দক্ষিণ আফ্রিকার নিষিদ্ধ হওয়া বাদ দিলে ক্রিকেট ইতিহাসে আর কোনো দেশের টেস্ট খেলার অধিকার কেড়ে নেওয়ার ঘটনা নেই। সাড়ে ছয় বছরের নির্বাসন শেষে জয় দিয়ে প্রত্যাবর্তন। জিম্বাবুইয়ান ক্রিকেটে কাল ছিল উ ৎ সবের দিন।
আর বাংলাদেশের ক্রিকেটে? অপমানের দিন। লজ্জার দিন। টেস্ট ক্রিকেট জিনিসটা কেমন প্রায় ভুলে যাওয়া সাতজনের সঙ্গে আনকোরা চারজনের এক দলের কাছে ১৩০ রানে পরাজয়টা যদি ‘লজ্জা’ নয় তো কী!’
খেলায় জয়-পরাজয় থাকেই। লজ্জা শব্দটা তখনই আসে, যখন পরাজয়টা এমন প্রতিরোধহীন আত্মসমর্পণ হয়। সেই প্রথম দিন থেকেই এই টেস্ট ম্যাচে জিম্বাবুয়ে শ্রেয়তর দল। এর সবকিছুকে তা ৎ পর্যহীন প্রমাণ করার সুযোগ হয়ে এসেছিল পঞ্চম ও শেষ দিনটি। অথচ সেদিনই সবচেয়ে করুণ চেহারায় দেখা দিল বাংলাদেশ দল। বাংলাদেশের ক্রিকেটও কি নয়!
হাতে ৭ উইকেট নিয়ে ২৬৩ রান। খুব সহজ নয়। কিন্তু পঞ্চম দিনের সঙ্গে বেমানান ব্যাটিং-উইকেট এটিকে অসম্ভব মনে করতে দিচ্ছিল না। দাবি ছিল একটাই, ব্যাটসম্যানদের একটু বিচারবুদ্ধি প্রয়োগ করে খেলা। আর একটা অবশ্যপালনীয় নিয়মের কথা মনে রাখা। তা হলো, বড় স্কোর তাড়া করতে হলে পার্টনারশিপ চাই। আর চাই প্রতি ঘণ্টা, প্রতিটি সেশন শেষে পরিস্থিতি বিবেচনা করে সে অনুযায়ী ব্যাটিং করা। এমন কোনো মহাকাশবিজ্ঞান নয়, খুবই সাধারণ ক্রিকেট-জ্ঞানের কথা।
অথচ লাঞ্চের মিনিট পনেরো পরে শেষ হয়ে যাওয়া টেস্ট ম্যাচ নিয়ে আলোচনাটাই কেমন হাস্যকর লাগছে! কাল বাংলাদেশের ইনিংস স্থায়ী হলো মাত্র ২৭.৩ ওভার। সবচেয়ে বড় পার্টনারশিপ ৫০ রানের। সেটি যখন, জিম্বাবুয়ে ক্রিকেটের লোকজন তখন পুরস্কার বিতরণীর প্রস্তুতিতে ব্যস্ত। আবদুর রাজ্জাক ব্যাটসম্যানদের ওপর রেগে গিয়েই কিনা হঠা ৎ ‘জয়াসুরিয়া’ হয়ে গেলেন। রাজ্জাকের ১৭ বলে পাঁচ চার ও তিন ছয়ে ৪৩ রানের ইনিংসটির কল্যাণেই অষ্টম উইকেটে ওই ফিফটি পার্টনারশিপ।

রাজ্জাকের ব্যাটিং দেখে এটি টেস্ট না ওয়ানডে, বোঝা যাচ্ছিল না। তবে সেই ধন্দে কি অন্যরাও ফেলেননি? মোহাম্মদ আশরাফুল ও মুশফিকুর রহিম ছাড়া আর কারও ব্যাটেই তো টেস্টের মেজাজ খুঁজে পাওয়া গেল না। টেস্টের মেজাজ মানে শুধু ঠেকিয়ে যাওয়া নয়, বল বুঝে একটু কম ঝুঁকি নিয়ে খেলা। অথচ সাকিব আল হাসান ও মাহমুদউল্লাহর ব্যাটিং দেখে কেউ ভুল করে ভাবতেই পারতেন, বুঝি ওয়ানডে ম্যাচের পাওয়ার প্লে চলছে!
১৬৭ রানে ৫ উইকেট পড়ে যাওয়ার পর নেমেছেন সাকিব। ওই পরিস্থিতিতে বড় একটা পার্টনারশিপ হলে তবেই জয়ের কথা ভাবনায় আসবে। এর আগ পর্যন্ত উইকেট না দেওয়াটাই হবে ধ্যানজ্ঞান। অথচ সাকিব সদর্পে জানালেন, ড্রয়ের কথা তিনি মাথায়ই আনেননি!
আত্মবিশ্বাস ভালো। তবে আত্মবিশ্বাস আর ঔদ্ধত্যের মাঝখানে সীমারেখা, সেটি পেরিয়ে গেলে বড় বিপদ হয়। কখনো কখনো তা টেনে আনে বড় লজ্জাও। যেমন আনল কাল। জিম্বাবুয়ে দল যখন আনন্দে মত্ত, বাংলাদেশের খেলোয়াড়েরা অধোবদন দর্শক। লাউড স্পিকারে উচ্চ স্বরে বাজছে জিম্বাবুইয়ান গান। আর বাংলাদেশ দলের সীমানা ছাড়িয়ে বাংলাদেশের ক্রিকেট ঘিরে যেন রবীন্দ্রনাথের নৃত্যনাট্যে চিত্রাঙ্গদার গ্লানিময় আক্ষেপ—লজ্জা লজ্জা হায় এ কী লজ্জা, মিথ্যা রূপ মোর মিথ্যা সজ্জা...