Monday, August 3, 2015

নীতিমালার খসড়া: সংবাদপত্র-টিভির ইন্টারনেট সংস্করণেরও নিবন্ধন লাগবে


‘জাতীয় অনলাইন গণমাধ্যম নীতিমালা- ২০১৫’র এই খসড়ার উপর আগামী ১২ অগাস্ট পর্যন্ত সবার মতামত নেবে তথ্য মন্ত্রণালয়।
শীর্ষ গণমাধ্যমগুলোর সম্পাদকদের নিয়ে আলোচনা করে এই নীতিমালার চূড়ান্ত খসড়া করা হবে বলে জানিয়েছেন তথ্যসচিব মরতুজা আহমদ।
তিনি সোমবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমরা অনলাইনগুলোকে শৃঙ্খলার মধ্যে এনে আরও গতিশীল করতে চাই। অনলাইন সংবাদপত্রের সঙ্গে সংবাদপত্র, টেলিভিশন এবং রেডিওগুলোর অনলাইনও নিবন্ধনের আওতায় আসবে।”
তথ্য প্রযুক্তির প্রসারে ভুরি ভুরি অনলাইন সংবাদপত্র গড়ে উঠলেও তাদের তদারকির কোনো ব্যবস্থা এখনও হয়নি। এসব সংবাদপত্রের অধিকাংশই নামমাত্র বলে অভিযোগ রয়েছে।  
তথ্যসচিব বলেন, বিদ্যমান অনলাইন গণমাধ্যমের মধ্যে কোনগুলো নিবন্ধন পাবে, তা বিধিমালার মাধ্যমে নির্ধারিত হবে।
নীতিমালার খসড়ায় বলা হয়েছে, “দেশে অনলাইন গণমাধ্যমের সংখ্যা বেড়েই চলছে।
“বিদ্যমান অবস্থায় এসব গণমাধ্যম কোনো স্বীকৃতি বা সুযোগ-সুবিধা পায় না। অন্যদিকে গণমাধ্যমের জাতীয় মান রক্ষা করাও সম্ভব হচ্ছে না।”
জনগণের মৌলিক অধিকার ও ব্যক্তি স্বাধীনতা সমুন্নত রেখে গণমাধ্যমগুলোর স্বাধীনতা ও দায়বদ্ধতা নিশ্চিত করাই নীতিমালা প্রণয়নের উদ্দেশ্য বলে খসড়ায় বলা হয়েছে।
নীতিমালা অনুযায়ী, সব অনলাইন গণমাধ্যমের সম্পাদকসহ সাংবাদিকদের শিক্ষাগত যোগ্যতা, অভিজ্ঞতা, আর্থিক সঙ্গতি, প্রয়োজনীয় অবকাঠামো ও বেতন কাঠামো বাস্তবায়নে বিধিবিধান মেনে চলতে হবে।
“কাগজ বা সম্প্রচারের জন্য নিবন্ধিত, ডিক্লারেশন বা লাইসেন্সপ্রাপ্ত গণমাধ্যমকে অনলাইন প্রচার, প্রকাশ বা সম্প্রচারের জন্য নিবন্ধিত হতে হবে।”
এসব অনলাইন গণমাধ্যমের নিবন্ধন দেওয়ার ক্ষেত্রে সরকার স্বতন্ত্র আইন বা বিধিমালা প্রণয়ন করবে উল্লেখ করে খসড়ায় বলা হয়েছে, এতে নিবন্ধন পদ্ধতি, যোগ্যতা-অযোগ্যতা ও বাতিলের বিধান রাখা হবে।
“তবে এই আইন বা বিধিমালা প্রণীত না হওয়া পর্যন্ত তথ্য মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত নেবে। শিগগিরই এই দায়িত্ব কমিশনের উপর ন্যস্ত করবে।”
নীতিমালা প্রণয়নের পর নিবন্ধিত অনলাইন গণমাধ্যমগুলো শর্ত সাপেক্ষে ‘ন্যায় ও সমতার ভিত্তিতে’ সরকারি সহায়তা পাবে বলেও খসড়ায় বলা হয়েছে।
খসড়া অনুযায়ী, অনলাইনের কোনো তথ্য-উপাত্তে কোনো নাগরিক বা প্রতিষ্ঠান সংক্ষুব্ধ হলে তিনি বা ওই প্রতিষ্ঠান তথ্য-উপাত্ত প্রকাশের ৩০ দিনের মধ্যে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে কমিশনে অভিযোগ দিতে পারবেন।
কমিশন সরেজমিনে অভিযোগ তদন্ত করে উভয় পক্ষের শুনানি শেষে ৬০ দিনের মধ্যে নিষ্পত্তির ব্যবস্থা করে সরকারের কাছে প্রয়োজনীয় সুপারিশ করবে।
কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হলে আইন-বিধি মোতাবেক শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও নীতিমালার খসড়ায় উল্লেখ রয়েছে।
খসড়া নীতিমালার আটটি অধ্যায়ে পটভূমি, নিবন্ধন, তথ্য-উপাত্ত প্রচার, প্রকাশ ও সম্প্রচার, বিজ্ঞাপন, তথ্য-উপাত্ত প্রকাশ বা সম্প্রচারের অনুপযুক্ততা, কমিশনসহ বিভিন্ন বিষয়ে বিস্তারিত বর্ণনা দেওয়া হয়েছে।

Saturday, July 25, 2015

সবজি ও ফল রপ্তানিতে বিপর্যয়

আপডেট:

বাংলাদেশের সবজি ও ফল রপ্তানিতে দুঃসংবাদ যেন পিছু ছাড়ছেই না। সর্বশেষ খবর হলো, পণ্য দুটির রপ্তানি মারাত্মকভাবে কমে গেছে।
বছরের বিভিন্ন সময়ে বাংলাদেশের কয়েকটি সবজি রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা এসেছে। আবার কিছু সবজি ও ফলের রপ্তানি সরকার নিজেই বন্ধ করে রেখেছে। এসবের কারণেই কমেছে সবজি ও ফলের রপ্তানি।
বাংলাদেশ রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) বলছে, সদ্য সমাপ্ত ২০১৪-১৫ অর্থবছরে দেশ থেকে ১০ কোটি ৩২ লাখ ডলারের সবজি রপ্তানি হয়েছে। এই রপ্তানিতে লক্ষ্যমাত্রা তো পূরণ হয়ইনি, উল্টো আগের বছরের চেয়ে কমেছে ৩০ শতাংশ। ২০১৩-১৪ অর্থবছরে রপ্তানি হয়েছিল ১৪ কোটি ৭৫ লাখ ডলারের সবজি।
একইভাবে সদ্য সমাপ্ত অর্থবছরে ফল রপ্তানি হয়েছে ৩ কোটি ৮৪ লাখ ডলারের। এ ক্ষেত্রে আগের বছরের চেয়ে রপ্তানি কমেছে ৩৮ শতাংশ। ওই বছর ৬ কোটি ১৮ লাখ ডলারের ফল রপ্তানি হয়েছিল।
এসব বিষয়ে ইপিবির ভাইস চেয়ারম্যান সুভাশীষ বসু প্রথম আলোকে বলেন, ইউরোপে ফাইটোস্যানিটারি সনদ (পিসি বা স্বাস্থ্য সনদ) ছাড়াই সবজি ও ফলের অনেক চালান গেছে। সেসব পণ্য ফেরতও এসেছে। বারবার একই ঘটনা ঘটায় কিছু পণ্যের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। এসব কারণে কৃষি মন্ত্রণালয় সবজি ও ফল রপ্তানিতে কড়াকড়ি আরোপ করেছে। মন্ত্রণালয় বলে দিয়েছে যে নিবন্ধিত রপ্তানিকারক ছাড়া কেউ সবজি ও ফল রপ্তানি করতে পারবে না। অনেকেই এখনো নিবন্ধন করেননি। এসব কারণে রপ্তানি কমেছে।
বাংলাদেশ থেকে গত অর্থবছরের ১০ মাসে ৭০ হাজার টন আলু রপ্তানি হয়। এর মধ্যে রাশিয়ায় গেছে ১৪ হাজার টন। কিন্তু এরপরই ৬ মে বাংলাদেশি আলু আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে রাশিয়া। সম্ভাবনাময় বাজারটি বন্ধ হয়ে যায়। এর ওপর থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম এবং ফিলিপাইনও কিছুদিন ধরে বাংলাদেশের আলু আমদানি করছে না বলে রপ্তানিকারকদের সূত্রে জানা গেছে।
বাংলাদেশি সবজি ও ফলে কয়েক দফায় ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া ও পোকা পাওয়ায় ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) এসব পণ্যে নিষেধাজ্ঞা আরোপের হুমকি দেয়। এরই পরিপ্রেক্ষিতে কৃষি মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর (ডিএই) গত ২৭ এপ্রিল দেশ থেকে ইইউভুক্ত দেশগুলোতে তিন ধরনের সবজি ও ফল রপ্তানি নিষিদ্ধ করে। এগুলো হলো অ্যামারেনথাস প্রজাতি (লালশাক ও ডাঁটাশাক), সাইট্রাস প্রজাতি (জারা লেবু ছাড়া অন্যান্য লেবু) এবং ত্রিকোসানথেস প্রজাতি (করলা, চিচিঙা, ধুন্দল ও পটোল)। এসব সবজি ও ফলের পিসি ইস্যু করা বন্ধ করে দিয়েছে ডিএই। এই পিসি ছাড়া কোনো সবজি-ফল রপ্তানি করা যায় না। এসব পণ্যকে ইইউ ‘ক্রিটিক্যাল কমোডিটি’-এর তালিকায় রেখেছে।
এ ছাড়া গত বছরের ফেব্রুয়ারি থেকেই বাংলাদেশি পানের ওপর ইইউর রপ্তানি নিষেধাজ্ঞা চলছে। গত ২৬ জুন নিষেধাজ্ঞার মেয়াদ আরও এক বছর বাড়ানো হয়েছে।
বাংলাদেশ ফল ও সবজি এবং এ-সংক্রান্ত পণ্য রপ্তানিকারক সমিতির (বিএফভিএপিইএ) তথ্য অনুযায়ী, দেশ থেকে যত সবজি ও ফল রপ্তানি হয়, তার ৪৭-৪৮ শতাংশই যায় ইউরোপে। কিন্তু ইউরোপে নিষেধাজ্ঞার কারণে রপ্তানিতে বড় ধরনের প্রভাব পড়েছে।
একাধিক রপ্তানিকারক জানান, বাংলাদেশ থেকে ইউরোপীয় আমদানিকারকেরা শুধু পান কিনতেন না। পানের সঙ্গে শসা, বেগুনের মতো সবজিরও কার্যাদেশ দিতেন। এখন পানের রপ্তানি বন্ধ থাকায় তাঁরা অন্য দেশ থেকে এসব পণ্য আমদানি করছেন।
আবার বাংলাদেশ থেকে রপ্তানি হওয়া প্রধান সবজির মধ্যে আছে বেগুন, কাঁকরোল, করলা, চিচিঙা। কিন্তু এসব পণ্যের রপ্তানি সরকার নিজেই বন্ধ করে রেখেছে।
একজন রপ্তানিকারক জানান, আমদানিকারকেরা আমাদের এক টন বেগুনের সঙ্গে ১০০ কেজি শসা নিত। এখন যেহেতু তারা মূল সবজি বেগুনই নিতে পারছে না, তাই তারা ঐচ্ছিক সবজি শসা নিতেও আগ্রহ দেখাচ্ছে না।
ফরমালিনের আতঙ্কে ২০১৩-১৪ অর্থবছরে ফলের রপ্তানি বেশ কমে যায়। কিন্তু এবার তা না থাকায় ফলের রপ্তানি বাড়বে বলে ধারণা করা হচ্ছিল। সে অনুযায়ী আম ও লিচুর রপ্তানি ভালো হয়েছে।
তবে ফল ও সবজি রপ্তানিকারক সমিতি বলছে, বাংলাদেশ থেকে যত ফল রপ্তানি হয়, তার ৫০ শতাংশই লেবু। আর এই লেবুর ওপরই সরকার রপ্তানি নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে রেখেছে।
সমিতির সভাপতি এস এম জাহাঙ্গীর হোসেন রপ্তানি কমে যাওয়ার আরেকটি কারণের কথা জানালেন। তাঁর মতে, বিমানে পণ্য পরিবহনে বাড়তি খরচ আর কার্গোতে জায়গা কম পাওয়ার কারণে সবজি ও ফল বেশি রপ্তানি করা যাচ্ছে না।
জাহাঙ্গীর হোসেনের অভিযোগ, বিদেশি এয়ারলাইনসে যেখানে প্রতি কেজি সবজি রপ্তানির ভাড়া ১৩০-১৩২ টাকা, সেখানে বাংলাদেশ বিমান নেয় ১৮০ টাকা। আবার তিনটি বোয়িং বিমান লন্ডনে যায়। প্রতি ফ্লাইটে ৩০ টন সবজি ও ফল ধরে। সে অনুযায়ী যদি ৯০ টনের জায়গা পাওয়া যেত, তাহলে রপ্তানি কয়েক গুণ বাড়ত।