শিরোনামটা দেওয়া বোধ হয় কিছুটা ভুল হলো। কারণ, বর্তমানে
ওয়েবসাইটে বিষয়ভিত্তিক বিজ্ঞাপনের জগতে গুগল অ্যাডসেন্সের রয়েছে একক
আধিপত্য। অন্যভাবে বলতে গেলে, বিষয়টা যখন ওয়েব বিজ্ঞাপনের, তখন সবার
প্রথম পছন্দ অ্যাডসেন্স। এই আধিপত্য গুগল এমনিতে পায়নি, অর্জন করে
নিয়েছে। নির্ঝঞ্ঝাট অর্থ লেনদেন, সাপোর্ট ফোরাম, বেশিআয়ের সুযোগ এবং এক
অ্যাকাউন্ট দিয়ে সবকটি অনুমোদিত ওয়েবসাইটে বিজ্ঞাপন প্রকাশবা দেখানোর
সুযোগ থাকায় মানুষের ঝোঁক অ্যাডসেন্সের দিকে। কিন্তু অ্যাডসেন্সে অনুমোদন
পাওয়া সহজ কথা নয়। বিভিন্ন দিক বিবেচনা করে তবেই গুগল অ্যাডসেন্স
অ্যাকাউন্ট ও ওয়েবসাইট অনুমোদন করে। তা ছাড়া বাংলাদেশসহ দক্ষিণ-এশীয়
দেশগুলোতে রয়েছে আরও প্রতিবন্ধকতা। সব মিলিয়ে নতুন ওয়েবসাইটের জন্য
অ্যাডসেন্সের অনুমোদন পাওয়া রীতিমতো স্বপ্নে পরিণত হয়েছে।
বর্তমানে
নিজস্ব ওয়েবসাইট বা ব্লগসাইটে বিজ্ঞাপন প্রদর্শন করে অর্থ উপার্জনকে অনেকে
মূল পেশা হিসেবে নিচ্ছেন। আবার এটাকে খণ্ডকালীন কাজ হিসেবেও নিচ্ছেন
অনেকে। এ ক্ষেত্রে মুখ্য বিষয় হচ্ছে ভিজিটর সংখ্যা, মানে কতজন আপনার
ওয়েবসাইট দেখছে। আপনার ওয়েবসাইটে যত বেশি ভিজিটর আসবে, তত আয় বাড়বে। আর
ওয়েবসাইট দেখার সংখ্যা বাড়াতে মানুষ বারবার সার্চ ইঞ্জিনে যে বিষয়গুলোর
খোঁজ করে, এমন বিষয়ের ওপর তথ্যবহুল ওয়েবসাইট তৈরি করলে বেশি সুবিধা
পাবেন।
যাঁরা এখনো ভাবছেন বিষয়ভিত্তিক বা কনটেক্সচুয়াল বিজ্ঞাপন কী,
তাঁদের জন্য বলে রাখি, আপনার ব্লগ কিংবা ওয়েবসাইটের কনটেন্ট, অর্থাৎ লেখা ও
ছবির বিষয়ের ওপর নির্ভর করে প্রাসঙ্গিক বিজ্ঞাপনই বিষয়ভিত্তিক বিজ্ঞাপন।
এর সবচেয়ে বড় সুবিধা হচ্ছে ওয়েবসাইট ব্যবহারকারী আপনার সাইটের সঙ্গে
সংগতিপূর্ণ বিজ্ঞাপন দেখতে পাচ্ছে। ফলে সেই বিজ্ঞাপনে ক্লিক করার হার বেড়ে
যায়, অর্থাৎ বিজ্ঞাপন থেকে আপনার আয় বেড়ে যাবে। বিজ্ঞাপন নেটওয়ার্ক
হিসেবে প্রথমে গুগল অ্যাডসেন্সে অনুমোদন পাওয়ার চেষ্টা করবেন। অ্যাডসেন্সে
অনুমোদন পেয়ে গেলে তো অবশ্যই ভালো। কিন্তু যদি অনুমোদন না পান তো সে
ক্ষেত্রে কি চুপচাপ বসে থাকা ঠিক হবে?
অ্যাডসেন্সের মতো রয়েছে আরও অনেক
বিজ্ঞাপন নেটওয়ার্ক, যেগুলোর মাধ্যমে আপনার ওয়েবসাইটের দেখার হারকে কাজে
লাগিয়ে পেতে পারেন নিয়মিত অর্থ। তবে বিজ্ঞাপন নেটওয়ার্ক নির্বাচনে কিছু
সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। বিশেষ করে খোঁজ নিতে হবে তারা মূলত কী ধরনের
বিজ্ঞাপন প্রদর্শন করে থাকে, তাদের সেবার মূলনীতি কী, টাকা উত্তোলনের
মাধ্যম ও উত্তোলনের সর্বনিম্ন পরিমাণ, কোনো ধরনের খরচ আছে কি না, কোন
অঞ্চলের ভিজিটরদের জন্য বিজ্ঞাপন প্রদর্শন করে থাকে ইত্যাদি। এখানে কিছু
নির্ভরযোগ্য বিজ্ঞাপন নেটওয়ার্কের খোঁজ দেওয়া হলো। এগুলো ছাড়া আরও
নেটওয়ার্ক রয়েছে।
চিতিকা
যুক্তরাষ্ট্রের
ম্যাসাচুসেটসভিত্তিক এই বিজ্ঞাপনী নেটওয়ার্ক প্রতিষ্ঠিত হয় ২০০৩ সালে।
বিজ্ঞাপন প্রদর্শনের ক্ষেত্রে তারা মূলত ব্যবহারকারীর ভৌগোলিক অবস্থান ও
ওয়েবসাইটের বিষয়বস্তুর ওপর প্রাধান্য দেয়। চিতিকা পেপ্যাল ক্লিকভিত্তিক
বিজ্ঞাপন প্রদর্শন করে। অর্থাৎ ভিজিটর যদি বিজ্ঞাপনে ক্লিক করে, তবেই আপনি
টাকা পাবেন। শুধু বিজ্ঞাপন প্রদর্শনের জন্য কোনো টাকা পাওয়া যায় না।
পেপ্যালের মাধ্যমে সর্বনিম্ন ১০ এবং চেকের মাধ্যমে সর্বনিম্ন ৫০ ডলার তোলা
যায়। মোবাইল ফোনের জন্য বিজ্ঞাপনসহ চিতিকার রয়েছে বিভিন্ন আকারের এমনকি
আপনার পছন্দমতো আকারের বিজ্ঞাপন তৈরির সুযোগ। তবে চিতিকা সম্পর্কে অভিযোগ
আছে যে তারা শুধু যুক্তরাষ্ট্রের ভিজিটরদের জন্য টাকা দেয়। ঠিকানা:
www.chitika.com
ইয়াহু-বিং নেটওয়ার্ক
দুই
সার্চ ইঞ্জিন ইয়াহু ও বিংয়ের যৌথ উদ্যোগে মিডিয়া ডট নেটের মাধ্যমে এই
বিজ্ঞাপন নেটওয়ার্ক পরিচালিত হয়। ইয়াহু ও বিং যৌথভাবে যেখানে বিজ্ঞাপন
সরবরাহ করছে, সেখানে বিজ্ঞাপনের বৈশিষ্ট্য নিয়ে আপনাকে ভাবতে হবে না। ছোট
কিংবা বড়, এমনকি অল্প ট্র্যাফিকের যেকোনো সচল ওয়েবসাইট তারা অনুমোদন করে
থাকে। বিভিন্ন আকার ও থিম থেকে আপনার প্রয়োজনীয় বিজ্ঞাপন বেছে নিতে
পারবেন। সেই সঙ্গে আপনার জন্য একজন ব্যক্তিগত প্রতিনিধির পরিচয় করিয়ে
দেওয়া হবে, যেকোনো প্রয়োজনে আপনি তাঁর কাছে সাহায্য পাবেন। পেপ্যাল কিংবা
চেকের মাধ্যমে সর্বনিম্ন ১০০ ডলার উত্তোলন করতে পারবেন। ঠিকানা:
www.media.net
ট্রাইবাল ফিউশন
আপনার
ব্লগ বা ওয়েবসাইটে যদি প্রতি মাসে কমপক্ষে পাঁচ লাখ ইউনিক ভিজিটর আসে,
তবেই কেবল আপনি ট্রাইবাল ফিউশনে নিবন্ধনের কথা ভাবতে পারেন। তবে এই
বিজ্ঞাপনী নেটওয়ার্কটি থেকে আপনি বেশ ভালো পরিমাণ টাকা উপার্জন করতে
পারবেন। চেকে বা ব্যাংক ট্রান্সফারে সর্বনিম্ন ১০০ ডলার উত্তোলন করা যায়।
ঠিকানা: www.tribalfusion.com
ম্যাড অ্যাডস মিডিয়া
এই
বিজ্ঞাপনী নেটওয়ার্ক গুগল, ইয়াহু এবং অন্যান্য বড় নেটওয়ার্ক থেকে
বিজ্ঞাপন সংগ্রহ করে প্রদর্শন করে। অনেকটা সহজেই অনুমোদন পাওয়া যায় আর তা
ছাড়া ক্লিকের পাশাপাশি বিজ্ঞাপন দেখা, অর্থাৎ ইম্প্রেশনের জন্যও আপনার
অ্যাকাউন্টে অর্থ জমা হতে থাকবে। ঠিকানা: www.madadsmedia.com
ক্লিকসর
অনুমোদন
পাওয়ার কোনো ঝামেলা নেই। যেকোনো সচল ওয়েবসাইটেই আপনি ক্লিকসর বিজ্ঞাপন
দিতে পারেন। তবে বিজ্ঞাপনের ধরন নির্বাচনে সতর্ক থাকতে হবে। কারণ, ব্যানার ও
লেখার বিজ্ঞাপন ছাড়া অন্যান্য বিজ্ঞাপনে আপনার ভিজিটরকে ঝামেলা পোহাতে
হতে পারে। পেপ্যাল অথবা চেকের মাধ্যমে সর্বনিম্ন ৫০ ডলার উত্তোলন করা যাবে।
ঠিকানা: www.clicksor.com
ইনফোলিংকস
ইন-টেক্সট
বিজ্ঞাপন। অর্থাৎ আপনার ওয়েবসাইটের কিওয়ার্ডের ওপর ভিত্তি করে লিংক
আকারে বিজ্ঞাপন থাকবে। কোনো ভিজিটর যদি সেই লিংকে ক্লিক করে, তবে ওয়েব
পাবলিশারের অ্যাকাউন্টে অর্থ জমা হবে। ২০০৭ সালে প্রতিষ্ঠিত এই বিজ্ঞাপনী
নেটওয়ার্কটি বর্তমানে ইন-টেক্সট বিজ্ঞাপনের পাশাপাশি ইন-সার্চ, ইন-ফ্রেম ও
ইন-ট্যাগ বিজ্ঞাপনী সেবা দিচ্ছে। ঠিকানা: www.infolinks.com
বাংলা ওয়েবসাইটের জন্য
অ্যাডসেন্সসহ অন্যান্য বিজ্ঞাপন নেটওয়ার্ক
সাধারণত বাংলায় তৈরি ওয়েবসাইটের জন্য বিজ্ঞাপন প্রদর্শন করে না কারণ
বাংলা ভাষায় লেখা নিবন্ধের কিওয়ার্ড নির্বাচন করতে তারা পারে না।
এ
ছাড়া আপনি সরাসরি সংশ্লিষ্ট কোম্পানির সঙ্গে যোগাযোগ করে আপনার ওয়েবসাইটে
বিজ্ঞাপন প্রদর্শনের আবেদন জানাতে পারেন। প্রথমে ওয়েবসাইটে বিজ্ঞাপনের
জন্য স্থান নির্ধারণ করে আপনার ওয়েবসাইটের বিষয়বস্তু, দৈনিক অথবা মাসিক
ইউনিক ভিজিটর, সর্বমোট পেজভিউ এবং কোন দেশ থেকে বেশি ভিজিট হচ্ছে, এসব
পরিসংখ্যান সরাসরি অথবা ই-মেইলে পাঠিয়ে দিন।