Monday, March 28, 2011

 দলে ফিরলেন অলক-মাশরাফি, বাদ আশরাফুল-জুনায়েদ

দেশের মাটিতে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে একদিনের সিরিজের জন্য দল ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। আজ রোববার এ দল ঘোষণা করা হয়।
দল থেকে বাদ পড়েছেন মোহাম্মদ আশরাফুল ও জুনায়েদ সিদ্দিক। এ ছাড়া দলে নেই নাঈম ইসলাম ও নাজমুল হোসেন।
১৪ সদস্যের দলে ফেরাদের তালিকায় আছেন মাশরাফি বিন মুর্তজা ও অলক কাপালি। তবে দলে ডাক পেলেও মাশরাফি অস্ট্রেলিয়া সিরিজে খেলবেন কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে। দলে আছেন শুনে তিনি বলেছেন, ‘আমি দেড় মাস প্র্যাকটিসে নেই। ফিটনেসের কী অবস্থা জানি না। স্ত্রী অসুস্থ থাকায় তাকে নিয়েই ব্যস্ত বেশি। নির্বাচকদের বলেছি, অনুশীলনে গিয়ে যদি নিজেকে ফিট মনে হয় তাহলেই শুধু অস্ট্রেলিয়া সিরিজে অবশ্যই খেলব। নয়তো সরে দাঁড়াব।’
দলে জুনায়েদকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে নতুন মুখ ডানহাতি ব্যাটসম্যান শুভাগত হোমকে। গত প্রিমিয়ার ক্রিকেট লিগে সিসিএসের হয়ে ১৬ ম্যাচে ৪৭৬ (গড় ৩১.৭৩) রান করে সর্বোচ্চ রান করাদের তালিকায় সপ্তম স্থানে ছিলেন ডানহাতি এই ব্যাটসম্যান।
দক্ষিণ আফ্রিকা সফরের জন্য ঘোষিত ‘এ’ দলে ছিলেন শুভাগত। তাঁকে জাতীয় দলে এনে জুনায়েদকে করা হলো ‘এ’ দলের সহ-অধিনায়ক।
বাংলাদেশ দল: সাকিব আল হাসান (অধিনায়ক), তামিম ইকবাল (সহ-অধিনায়ক), মাশরাফি বিন মুর্তজা, ইমরুল কায়েস, শাহরিয়ার নাফীস, রকিবুল হাসান, অলক কাপালি, শুভাগত হোম, মুশফিকুর রহিম, মাহমুদউল্লাহ, আবদুর রাজ্জাক, মোহাম্মদ সোহরাওয়ার্দী, রুবেল হোসেন ও শফিউল ইসলাম। স্ট্যান্ডবাই: নাজমুল হোসেন।
আগামী ৯ এপ্রিল থেকে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে তিন ম্যাচের সিরিজটি শুরু হচ্ছে।

Saturday, March 26, 2011

 সেমিফাইনালে উপমহাদেশের তিন প্রতিনিধি

পাকিস্তান, ভারতের পর শ্রীলঙ্কা। ইংল্যান্ডকে তছনছ করে শ্রীলঙ্কা সেমিফাইনালে উঠে যাওয়ায় বিশ্ব ক্রিকেটের ইতিহাসে নতুন অধ্যায় যোগ হলো। শেষ চারের লড়াইয়ে এই উপমহাদেশের প্রতিনিধিই তিনটি। বিশ্বকাপ ক্রিকেটের ইতিহাসে এমন ঘটনা এবারই প্রথম!
১৯৭৫ থেকে বিশ্বকাপের শুরু। এবারের আসরটা দশম। এর আগে সেমিফাইনালের লড়াইয়ে সর্বোচ্চ দুটি করে প্রতিনিধি ছিল মোট চারটি আসরে। এই তালিকায় একটা মিলও খুঁজে পাবেন আপনি। ১৯৮৩ আর ১৯৮৭ সালের আসরের কথাই ধরুন। ওই দুই আসরে উপমহাদেশের প্রতিনিধিত্ব করেছিল ভারত ও পাকিস্তান। আর ১৯৯৬ ও ২০০৩ সালের শেষ চারের লড়াইয়ে উপমহাদেশের প্রতিনিধিত্ব করেছিল ভারত ও শ্রীলঙ্কা।

 উদ্বোধনী জুটিতেই শেষ চারে শ্রীলঙ্কা

সেই ১৯৭৫ সালে শুরু। ৩৬ বছরেও বিশ্বকাপ বন্ধ্যাত্ব ঘোচা হলো না ইংল্যান্ডের! গত বিশ্বকাপে বিদায় হয়েছিল সুপার এইট থেকে। এবার অ্যান্ড্রু স্টাউসরা স্বপ্ন দেখছিলেন ইতিহাস নতুন করে লেখার। কিন্তু চার বছর পরও ভাগ্যের চাকা থামল ওই আগের জায়গাতেই। কোয়ার্টার ফাইনাল থেকেই আজ ইংলিশদের বিদায় করে সেমিফাইনালে উঠে গেছে শ্রীলঙ্কা।
সেঞ্চুরি করলেন দুই উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান তিলকরত্নে দিলশান ও উপুল থারাঙ্গা। জয়টাও উদ্বোধনী জুটিতেই! কলম্বোয় আজকের ১০ উইকেটের জয় ফাইনালে ওঠার লড়াইয়েও লঙ্কানদের পাথেয় হয়ে থাকবে। ২৯ মার্চ নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সেমিফাইনালের লড়াইটা যে হবে এখানেই!
সেমিফাইনালের টিকিট পেতে চাই ২৩০ রান। চেনাজানা কন্ডিশনে লক্ষ্যটা খুব বেশি কঠিন ছিল না। তাই বলে এত সহজে! শ্রীলঙ্কার কেউ এমন একটা জয় কখনো কল্পনাও করেছেন কি না, সন্দেহ আছে। যা কল্পনাতেও আসার মতো নয়, সেটিই বাস্তবে করে দেখিয়েছেন তিলকরত্নে দিলশান ও উপুল থারাঙ্গা।
শ্রীলঙ্কার জয়ের প্রাথমিক কাজটা করে দিয়েছেন বোলাররা ইংল্যান্ডকে মাত্র ২২৯ রানে আটকে দিয়ে। দলীয় ৩১ রানেই দুই উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান সাজঘরে। ইংলিশদের প্রাথমিক বিপর্যয় কাটে জোনাথন ট্রট ও রাভি বোপারার ৬৪ রানের জুটিতে। ট্রট ও এউইন মরগানের হাফ সেঞ্চুরিতে শেষ পর্যন্ত ইংল্যান্ডের সংগ্রহ দাঁড়ায় ৬ উইকেটে ২২৯ রান। কিন্তু শ্রীলঙ্কার মতো দলের বিপক্ষে এ রান যে মামুলি, তা ইংলিশদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছেন দিলশান ও থারাঙ্গা।
সংক্ষিপ্ত
ইংল্যান্ড ২২৯/৬ (৫০ ওভার)
ট্রট ৮৬, মরগান ৫০
মুরালি ৫৪/২
শ্রীলঙ্কা ২৩১/০ (৩৯.৩ ওভার)
দিলশান ১০৮* , থারাঙ্গা ১০২*

পারল না দক্ষিণ আফ্রিকা, সেমিফাইনালে নিউজিল্যান্ড

ম্যাচের আগে তারা ছিল নিরঙ্কুশ ফেবারিট। মিরপুরের আকাশে বাতাসে যেন নিরুচ্চারে জয়ধ্বনি ছড়িয়ে পড়েছিল দক্ষিণ আফ্রিকার। সেমিফাইনালে খেলবে বলে কলম্বোর টিকিট পর্যন্ত কেটে রেখেছিল তারা। কিন্তু রাত দশটায় মিরপুরে ছড়িয়ে পড়ল গ্রায়েম স্মিথদের নীরব কান্না। মাত্র ২২১ রানের পুঁজি নিয়েই ৪৯ রানে জিতে গেল নিউজিল্যান্ড। সেই নিউজিল্যান্ড যারা এই মাঠেই পাঁচ মাস আগে বাংলাদেশের কাছে হয়েছে ‘ধবলধোলাই’। জয়ের জন্য ২২২ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে গিয়ে ৪৩.২ ওভারে ১৭২ রানে গুটিয়ে গেল পরাক্রমশালী দক্ষিণ আফ্রিকা। লড়াইটাকে শেষ পর্যন্ত হাড্ডাহাড্ডিও বলা যাচ্ছে না। কিন্তু যা নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে, তা হলো দক্ষিণ আফ্রিকা সেই ‘চোকার্স’ই থেকে গেছে। আসল পরীক্ষার সামনে বুক চিতিয়ে দাঁড়াতে পারে না তারা পালিয়ে যায়।
বাংলাদেশ নেই। তার পরও খেলা শুরু হওয়ার অল্প সময়ের মধ্যে ভরে গেল গ্যালারি। জেসি রাইডার বাউন্ডারি মারছেন তাতেও হাততালি, ডেল স্টেইন উইকেট নিচ্ছেন তাতেও হাততালি। বাংলাদেশে বিশ্বকাপের শেষ ম্যাচে দর্শক দেখাল, তারা আসলেই ক্রিকেটপিয়াসী। বাংলাদেশ নেই তো কী হয়েছে, মাঠে তো ক্রিকেটই হচ্ছে!
মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে হওয়া আগের কোয়ার্টার ফাইনালাটা, কিংবা ওয়েস্ট ইন্ডিজ আর দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে বাংলাদেশ দলের দুটি ম্যাচ দর্শকদের চূড়ান্ত হতাশা ‘উপহার’ দিয়েছে। এই তিন ম্যাচ দেখে যদি কেউ কোনো ধরনের ক্রিকেটীয় আনন্দ পেয়ে থাকেন, তিনি অবশ্যই সর্বোচ্চ ব্যতিক্রম। সে তুলনায় কাল কিছুটা ক্রিকেট তো অবশ্যই হয়েছে। মাত্র ১৬ রানে দুই ওপেনার মার্টিন গাপটিল আর ব্রেন্ডন ম্যাককালামকে হারিয়েও নিউজিল্যান্ডের ম্যাচে থাকাটা আরেকবার হতাশ হওয়া থেকে বাঁচিয়েছে দর্শকদের।
অক্রিকেটীয় কর্মকাণ্ডের সঙ্গে ধুন্ধুমার ব্যাটিংয়ের জন্য রাইডারকে এ দেশের মানুষও চেনে। ব্যাট হাতে তাঁর উইকেটে আসার পর সে কারণেই হয়তো নেচে উঠেছিল গ্যালারির একাংশ। হতাশ করেননি রাইডার।্র১২১ বলে ৮৩ রানের ইনিংসে ওরকম মারমার কাটকাট ব্যাটিং না হলেও ১৬ রানে ২ উইকেট পড়ে যাওয়া ম্যাচে ওটাই বিনোদনের খোরাক হলো। তৃতীয় উইকেটে রস টেলরের সঙ্গে ১১৪ রানের জুটি। তাতে নিউজিল্যান্ড বোলাররা অল্প হলেও যেমন লড়াইয়ের রসদ পেল, নিখাদ ক্রিকেটীয় বিনোদন পেতে আসা দর্শকদের থলেটাও খালি থাকল না। অন্তত দক্ষিণ আফ্রিকা ব্যাটিংয়ে নামার আগ পর্যন্ত একটা জমাট কোয়ার্টার ফাইনালের আশা সবার মনেই ছিল। ক্রিকেট মানে চূড়ান্ত অনিশ্চিত একটা ব্যাপার। ২২১ রানের ম্যাচেও তো কত কিছুই হতে পারে!
দক্ষিণ আফ্রিকা ২ উইকেটে ১০৮ রানে পৌঁছে যাওয়ায় মনে হচ্ছিল, ক্রিকেটীয় অনিশ্চয়তা বোধ হয় নির্বাসনে চলে গেছে। কিন্তু ১৩ রানের মধ্যে ৩ উইকেট পড়ে যাওয়ার পর ম্যাচ হঠাৎই দোদুল্যমান। ‘চোকার্স’ শব্দটা আবারও দক্ষিণ আফ্রিকার সঙ্গী হয়ে যায় কি না, শুরু হয়ে গেল এই আলোচনাও।
রাইডার ৮৩, টেলর ৪৩, স্টাইরিস ১৬ আর উইলিয়ামসন ৩৮—নিউজিল্যান্ড ইনিংসে দুই অঙ্কের রান আর কেবল অতিরিক্ত ১৪! ১৬ রানে ২ উইকেট পড়ে যাওয়ার পর রাইডার ও টেলর মিলে ১১৪ রানের জুটি নিউজিল্যান্ডকে ভালো একটা ভিত্তি দিয়েছিল। কিন্তু এর পরই উচ্চাভিলাষী শট নিতে গিয়ে নিউজিল্যান্ড ইনিংসের পতন।
২২২ রানের টার্গেট ছুঁতে অবশ্য খুব বেশি শট খেলার প্রয়োজন ছিল না। কিন্তু দক্ষিণ আফ্রিকার আসল প্রতিপক্ষ তো নিউজিল্যান্ড ছিল না, ছিল চিরন্তন সেই দুর্বলতার জায়গাটা। নিস্তরঙ্গ মনে হতে থাকা ম্যাচে তাই হঠাৎই তুমুল উত্তেজনা। ‘চোকার্স’ শব্দটা দ্রুত এসে জড়িয়ে ধরল স্মিথদের।

Saturday, March 12, 2011

দুটি ম্যাচই জিততে আত্মবিশ্বাসী সাকিব:

অনিশ্চয়তায় পড়েছিল বাংলাদেশের কোয়ার্টার ফাইনাল খেলার স্বপ্ন। ইংল্যান্ড হারানোয় সেই আশঙ্কা অনেকটাই কেটে গেছে। হল্যান্ডের বিপক্ষে অনুষ্ঠেয় ম্যাচে জয় আসাটা প্রত্যাশিত। সঙ্গে দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারাতে পারলে তো কথাই নেই। হারলেও শেষ আটে যাওয়ার সম্ভাবনা শেষ হয়ে যাবে না। নির্ভর করবে অন্য দলের খেলার উপর। তবে কারও দিকে তাকিয়ে থাকা নয়, দুটি ম্যাচে জিতেই কোয়ার্টার ফাইনালে যেতে আত্মবিশ্বাসী অধিনায়ক সাকিব আল হাসান।
‘আমাদের আরও দুটি ম্যাচ রয়েছে। দুটি জিতলে কোন কথা নেই। একটিতে হারলে তাকিয়ে থাকতে হবে অন্য দলের উপর। কিন্তু দুটি ম্যাচ জিতেই কোয়ার্টার ফাইনালে যেতে চাই আমরা’—ম্যাচ পরবর্তী পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে বলেন সাকিব আল হাসান।
১৬৯ রানে ৮ উইকেট পড়ে যাওয়ার পরও জয়। তাত্ক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় যেন বিশ্বাস হচ্ছিল না অধিনায়ক সাকিবেরও, ‘আমি তো ভেবেছিলাম হেরে গেছি। শফিউল ও মাহমুদউল্লাহ অবিশ্বাস্য ব্যাটিং করে আমাদের জয় এনে দিয়েছে।’

 টাইগারদের জয়:

আশরাফুলের জায়গায় দলে এসেই ম্যাচজয়ী ইনিংস। দল তো বটেই, সঙ্গে মাহমুদউল্লাহ যেন জয়ী ঘোষণা করলেন নি�অনেকটা ঘোষণা দিয়েই জয়! ওয়েস্ট ইন্ডিজের কাছে বড় হার। নিজেদের ওয়ানডে ইতিহাসে সর্বনিম্ন ৫৮ রানে অল আউট হওয়ার গ্লানি। সব হতাশা পেছনে ফেলে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ঘুরে দাঁড়ানোর প্রত্যয় ছিল টাইগারদের। চট্টগ্রামে সেই প্রত্যয়কে বাস্তবতায় রূপ দিয়ে সমর্থকদের ২ উইকেটের জয় উপহার দিলেন টাইগাররা।
বোলাররা ইংল্যান্ডকে গুটিয়ে দেন ২২৫ রানে। ৬০ রানের নজরকাড়া ইনিংস খেললেন ইমরুল কায়েস। তামিম ইকবাল, সাকিব আল হাসান এনে দিলেন যথাক্রমে ৩৮ ও ৩২ রান। শফিউল ইসলাম আর মাহমুদউল্লাহ অপরাজিত থাকেন যথাক্রমে ২৪ ও ২১ রানে। সংখ্যাতাত্ত্বিক বিবেচনায় পিছিয়ে, তবু ‘ইংলিশ বধ’ কাব্যের রচয়িতা শফিউল ইসলাম আর মাহমুদউল্লাহই!
৩০ ওভার শেষে সংগ্রহ ছিল তিন উইকেটে ১৪৯। কিন্তু দলীয় ১৫৫ রানে ইমরুল কায়েসের বিদায়ের পরই হঠাত্ বিপর্যয়। ১৬৯ রানের মাথায় নেই বাংলাদেশের অষ্টম উইকেট। কিন্তু ইংল্যান্ডের প্রাপ্তি বলতে এতটুকুই!
আর কোন উইকেটের দেখা পায়নি ইংলিশ বোলাররা। একইভাবে বলতে হয়, কোন উইকেট শিকার করতে দেননি মাহমুদউল্লাহ আর শফিউল ইসলাম। এ দুজনের অবিচ্ছিন্ন ৫৮ রানের জুটিই যে এক ওভার বাকি থাকতেই জয় এনে দেয় বাংলাদেশকে!
দলীয় ৩২ রানে প্রথম, আর ৫৩ রানে তৃতীয় উইকেটের পতন ইংল্যান্ডের। এর পর ট্রট ও এউইন মরগানের ১০৯ রানের জুটি। ব্যক্তিগত ৬৩ রানে নাঈম ইসলামের শিকারে পরিণত হন মরগান। ৬৭ রানে থাকা জোনাথন ট্রটকে ফেরান সাকিব।
ব্যতিক্রম ছিলেন এই মরগান ও ট্রট। এ দুজন ছাড়া বাংলাদেশের দুর্দান্ত বোলিং, ফিল্ডিংয়ের কাছে অসহায়ত্ব প্রকাশ করেছেন ইংলিশ ব্যাটসম্যানদের সবাই। যার পরিণতি, দুই বল বাকি থাকতেই ইনিংস শেষ। দিবা-রাত্রির এই ম্যাচে টস জিতে ফিল্ডিং নেন সাকিব আল হাসান। দ্রুত তিনটি উইকেট তুলে নিয়ে অধিনায়কের সিদ্ধান্তের যথার্থতা এনে দেন বোলাররা। নাঈম ইসলাম, আবদুর রাজ্জাক ও সাকিব প্রত্যেকে দুটি করে উইকেট শিকার করেন।

Monday, March 7, 2011

 সাকিব আল হাসান লিখছেন এখনো সব শেষ হয়ে যায়নি


একে তো ম্যাচটা ওভাবে হারলাম, তার ওপর হারের পর সবার যে রকম প্রতিক্রিয়া দেখলাম, তারপর রাতটা খুব ভালো কেটেছে বলব না। তবে সকালে ঘুম থেকে উঠে মন ভালো হয়ে গেছে। ছাত্র বয়সী একদল সমর্থক হোটেলে ফুল নিয়ে এসেছিল আমার সঙ্গে দেখা করতে। আগের রাতে দর্শকদের আচরণের জন্য তারা দুঃখ প্রকাশ করল এবং দুঃসময়েও বাংলাদেশ দলের প্রতি অব্যাহত সমর্থন দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিল।
বাংলাদেশে আসলে দুই ধরনের দর্শক-সমর্থকই আছে। আমি বলব, যারা খারাপ সময়েও আমাদের পাশে থাকে, তারাই প্রকৃত সমর্থক। খেলায় উত্থান-পতন থাকবে। ভালো সময়ে হাততালি দেবেন, আর খারাপ সময়ে গালাগাল করবেন, ইট-পাথর ছুড়বেন, তাহলে আপনি কেমন সমর্থক?
ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ম্যাচ হারার পর কিছু দর্শক খুব উচ্ছৃঙ্খল আচরণ করেছে। অনেকে ক্রিকেটারদের উদ্দেশে অশোভন মন্তব্য করেছে। ওয়েস্ট ইন্ডিজ খেলোয়াড়দের বাসে ঢিল মারার মতো কাজও করেছে কেউ কেউ। আমার ধারণা, এসব যারা করে, তাদের বেশির ভাগেরই ক্রিকেট সম্পর্কে পুরো ধারণা নেই। তারা বোঝে শুধু জয়-পরাজয়। কাজেই তাদের এই আচরণ নিয়ে আমাদের কোনো আফসোসও নেই। আপনি যতই বলুন, এসব তাদের দিক থেকে হতেই থাকবে। সুতরাং এই প্রতিক্রিয়াকে আমরা পাত্তা দিতে চাচ্ছি না। দুনিয়ায় ভালো-খারাপ মিলিয়েই মানুষ। সকালে ফুল নিয়ে যারা এসেছে, এ রকম ভালো মানুষও তো এ দেশে আছে!
শিক্ষিত কিংবা রুচিশীল মানুষ বা যাঁরা কাজের মধ্যে থাকেন, তাঁদের কষ্টের প্রকাশ কখনো এমন দুঃখজনক হতে পারে না। আমরা খারাপ খেললে তাঁদেরও খারাপ লাগে। কিন্তু সেই খারাপ লাগাটা তাঁরা এভাবে প্রকাশ করেন না। তাঁরা বরং আমাদের কষ্টটা বুঝতে চেষ্টা করেন। বাংলাদেশ দল খারাপ খেললে মানুষ কষ্ট পায়, আমরা কি আনন্দে থাকি? সবচেয়ে বেশি কষ্ট যে আমাদেরই, সেটা অনেকেই বুঝতে চায় না।
সবচেয়ে খারাপ লাগে, যখন দেখি জাতীয় দলের সাবেক ক্রিকেটাররাও আর দশজন সাধারণ দর্শকের মতো কথা বলেন। তাঁরা অনেক বোঝেন, অনেক খেলেছেন, এ রকম পরিস্থিতিতেও অনেকবারই পড়েছেন। তাঁদের কথাগুলোই তাই বেশি হতাশাজনক। একটা জিনিস অন্তত তাঁদের চিন্তা করা উচিত, তাঁরা কী ক্রিকেট খেলে এসেছেন। আমি চাই না কাউকে ছোট করতে। তবে কে কত দূর খেলে এসেছেন, সেটা রেকর্ড ঘাঁটলেই পাওয়া যায়। আমরা জানি, কার কেমন রেকর্ড আছে, কারা কোন ক্রিকেট খেলে এসেছেন, কী ধরনের ক্রিকেট খেলে এসেছেন। এটা স্বীকার করি, তাঁরা ওই সময় শুরু না করলে আমরা হয়তো আজ এই পর্যন্ত আসতে পারতাম না। তবে আমার মনে হয় না, বাংলাদেশে এমন কোনো ক্রিকেটার আছেন, যিনি এ রকম বাজে পরিস্থিতিতে পড়েননি। গত টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের পর এই প্রথম আমরা এমন একটা পরিস্থিতিতে পড়লাম। আমরা দু-তিন বছরে একদিন যে পরিস্থিতিতে পড়ছি, আমাদের তো মনে হয়, তাঁরা প্রায়ই সে রকম পরিস্থিতিতে পড়তেন! ভালো পরিস্থিতির দেখা পেতেন মাঝেমধ্যে। কাজেই সবারই বোধ হয় একটু বুঝেশুনে কথা বলা উচিত। তবে সব সাবেক ক্রিকেটারই যে এমন বলছেন, তা নয়। অনেকে আমাদের দিকে সমর্থনের হাতও বাড়িয়ে দিচ্ছেন। এই সমর্থন আমাদের কাছে মহার্ঘ্য।
আমার কাছে ১ রানে হারলে যা, ১০০ রানে হারলেও তা, ১০০০ রানে হারলেও তা-ই। হার হারই, জয় জয়ই। আমি কোনো পার্থক্য দেখি না। তার পরও ৫৮ রানে অলআউট হওয়ার পর দলের সবার মনই খারাপ ছিল। ড্রেসিংরুমে, হোটেলে সবাই সবাইকে সান্ত্বনা ও সাহস দেওয়ার চেষ্টা করেছি। এখনো তো সব শেষ হয়ে যায়নি—সামনে তিনটি ম্যাচ আছে। কোচও আমাদের সঙ্গে কথা বলেছেন। পরের ম্যাচগুলোতে ভালো খেলার জন্য অনুপ্রাণিত করার চেষ্টা করছেন। তিনটি ম্যাচের মধ্যে দুটো জিতলেও পরের রাউন্ডে যাওয়ার ভালো সুযোগ থাকবে। খেলার আগেই তাই হেরে বসা যাবে না। আমরা জানি, ভালো ক্রিকেট খেলার সামর্থ্য আমাদের আছে। একটা ম্যাচ খারাপ হলেও ওটা নিয়ে এত চিন্তার কিছু নেই।
অনেকে বলছেন, সেদিন নাকি আমাদের কোনো পরিকল্পনাই ছিল না! এটা কি সম্ভব? কেউ কি কোনো দিন পরিকল্পনা ছাড়া খেলতে নামে? হ্যাঁ, হতে পারে আমাদের পরিকল্পনাটা কাজে লাগেনি। তবে আট নম্বর ব্যাটসম্যান উইকেটে থাকা পর্যন্তও আমার মনে হয়েছে হয়তো একটা জুটি হবে, মোটামুটি একটা রান দাঁড়াবে। ওয়েস্ট ইন্ডিজ বোলাররা খুব অসাধারণ বোলিং না করলেও ভালো জায়গায় বল ফেলেছে। ওরা খুব দৃঢ়প্রতিজ্ঞও ছিল। আর আমরা নিজেদের প্রয়োগ করার দিক দিয়ে ঠিক উল্টো। ভালো ব্যাটিং করিনি, ভালো ক্রিকেট খেলিনি।
তবে আবারও বলি, এখনো সব শেষ হয়ে যায়নি। আমাদের এখন প্রথম কাজ পরের ম্যাচটাতে ভালো ক্রিকেট খেলা। তারপর যা হওয়ার হবে।

Saturday, March 5, 2011

দুঃস্বপ্নের এক দিন


৫৮! ৫৮!! ৫৮!!! 
শুধুই একটা সংখ্যা।
শুধুই একটা সংখ্যা!
এই ৫৮ শুধুই একটি সংখ্যা নয়। নিদারুণ স্বপ্নভঙ্গের একটা গল্প লেখা এতে। দুঃখ আছে, হতাশা আছে, একটু লজ্জাও বোধ হয় মিশে আছে এই ৫৮-তে। বিশ্বকাপের আলোয় ঝলমলে বাংলাদেশে একটু কি আঁধারও নামিয়ে আনল এই ৫৮!
ক্রিকেটে মাঝেমধ্যে এমন কিছু দিন আসে, যেটির কোনো ব্যাখ্যা মেলে না। ব্যাটিং-বোলিংয়ের সীমানা ছাড়িয়ে যা পৌঁছে যায় অব্যাখ্যনীয় রহস্যময়তায়। কাল মিরপুর স্টেডিয়ামে নেমে এল তেমনই একটা দিন। স্বপ্নের মায়াঞ্জন চোখে ঘুম ভেঙেছিল যে দিনটির, বিকেল আসতে আসতে স্বপ্নভঙ্গের বেদনায় কাতর নিকষ কালো হয়ে গেল সেটিই।
৫৮! ৫৮!! ৫৮!!! ওয়ানডেতে একটা দল কীভাবে ৫৮ রানে অলআউট হতে পারে! বিস্ময়চিহ্নগুলো থাকুক, তবে ঘটনা এটাও যে ওয়ানডেতে ৩৫ রানে ইনিংস শেষ হয়ে যাওয়ার ঘটনাও আছে। কাল বাংলাদেশের ৫৮, ওয়ানডেতে তো নয়ই, বিশ্বকাপেরও সর্বনিম্ন স্কোর নয়। বিশ্বকাপে এর চেয়েও ছোট স্কোর আছে আরও তিনটি। তবে বাংলাদেশের কপালে ঠিকই লজ্জার তিলক এঁকে দিল একটা ‘রেকর্ড’—বিশ্বকাপে কোনো টেস্ট খেলুড়ে দেশের সর্বনিম্ন স্কোর এটাই।
বিশ্বকাপে বাংলাদেশের সর্বনিম্ন স্কোর—এটা তো না বললেও চলছে (আগের সর্বনিম্ন ১০৮, বিপক্ষ দক্ষিণ আফ্রিকা, ব্লুমফন্টেইন, ২০০৩)। ওয়ানডেতেই বাংলাদেশের ব্যাটিংয়ের করুণতম গল্প এই ৫৮। ২০০৮ সালে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ডারউইনে ৭৪ রানকেও যা অনেক ‘ভালো’ মনে করাচ্ছে!
প্রত্যাশার সঙ্গে চরমতম প্রতারণার গল্পও এই ৫৮। বিশ্বকাপের গ্রুপিং হওয়ার পরই বাংলাদেশ পাখির চোখ করেছিল এই ম্যাচটাকে। ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেট অনেক দিন ধরে নামছে তো নামছেই। মাঝখানে ওদের মাটিতে ওদের হোয়াইটওয়াশ করে এসেছে বাংলাদেশ। বিশ্বকাপ আসতে আসতে ওয়ানডে র্যাঙ্কিংয়েও বাংলাদেশ পেছনে ফেলে দিয়েছে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে। এই ম্যাচের আগে ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান অধিনায়ক ড্যারেন স্যামিকে তাই ‘বাংলাদেশই ফেবারিট কি না’ এই প্রশ্নেরও উত্তর দিতে হয়েছে। এই একটা ম্যাচ, যেটিতে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই দেখার প্রত্যাশায় তাকিয়ে ছিল বিশ্বকাপ। এই একটা ম্যাচ, যেটির বাংলাদেশকে উৎসবের রঙে রাঙানোর কথা ছিল। সেই ম্যাচ কিনা ৩১.১ ওভারেই শেষ!
সেটিও তো ৫৯ রান করতেই ওয়েস্ট ইন্ডিজ ১২.২ ওভার লাগিয়ে ফেলল বলে। বাংলাদেশের ইনিংস তো ১৯ ওভারও স্থায়ী হলো না! কী ব্যাখ্যা এই ব্যাটিংয়ের? ব্যাখ্যা একটাই—কোনো ব্যাখ্যা নেই। কেমার রোচ নিয়মিতই ১৪৫ কিলোমিটারের আশপাশে বল করেছেন। এমন গতির বল কি বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা আর খেলেননি! ড্যারেন স্যামি একেবারে জায়গামতো বল ফেলেছেন। কিন্তু সেটি কি আর আনপ্লেয়েবল কিছু ছিল! সুলিমান বেন ফ্লাইটের খেলা দেখিয়েছেন। এর চেয়ে অনেক ভালো স্পিনারকেও কি বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা তুলাধোনা করেননি!
ইনিংসের তৃতীয় বলেই তামিম ইকবালের আউট হয়ে যাওয়াটা বড় একটা ধাক্কা ছিল। তাই বলে সেটি তো আর এমন ধাক্কা নয় যে হুড়মুড় করে ভেঙে পড়বে বাংলাদেশের ইনিংস! একজন ব্যাটসম্যানও স্রোতের বিরুদ্ধে বুক চিতিয়ে দাঁড়াতে পারলেন না। উইকেটে যাওয়া-আসার মিছিল দেখে রোচকে মনে হলো ম্যালকম মার্শাল! বেনকে আলফ ভ্যালেন্টাইন! স্যামিকে বোঝাতে কোনো ওয়েস্ট ইন্ডিয়ানের নাম মনে পড়ছে না, ধরে নিন ইংলিশ কন্ডিশনে ব্রায়ান স্ট্যাথাম!
স্যামি করলেন সর্বোচ্চ ৭ ওভার। রোচ ৬, বেন ৫.৫। আর কোনো বোলারকে বলই হাতে নিতে হলো না। ১৮.৫ ওভারে মাত্র ৫৮ রানে কোনো ইনিংস শেষ হয়ে যাওয়ার পর অবধারিতভাবে প্রশ্ন উঠবে উইকেট নিয়ে। এখানে উঠছে না। উইকেটে কোনো জুজু ছিল না। ম্যাচ-উত্তর সংবাদ সম্মেলনে বোলিংয়ের প্রশংসা করতে গিয়ে ড্যারেন স্যামি, ‘এটা যে একেবারেই ফ্লাট উইকেট ছিল’ মনে করিয়ে দিতে ভুললেন না। জানালেন, উইকেট ব্যাটসম্যানদের দিকে তাকিয়ে হাসছিল বলে টসে জিতলে তিনিও প্রথমে ব্যাটিংই করতেন।
৫৮ রানের তাই কোনো ক্রিকেটীয় ব্যাখ্যা নেই। তাহলে কি চাপ? পাহাড়প্রমাণ প্রত্যাশার চাপেই এমন চিড়েচ্যাপ্টা হয়ে গেলেন বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা? নাকি চিরন্তন সেই আপ্তবাক্যেই খুঁজতে হবে কারণ—ক্রিকেটে এমন কিছু দিন আসে, যেটির কোনো ব্যাখ্যা মেলে না। কারণ নিয়ে বিতর্ক থাকতে পারে, তবে সেটির ফল নিয়ে খুব একটা থাকার কথা নয়। বিশ্বকাপ ইতিহাসে জঘন্যতম ব্যাটিং প্রদর্শনীটা সম্ভবত এটাই। সাকিব আল হাসান যথার্থই বলেছেন, শুধু বাংলাদেশের এই দলের নয়, এটা বাংলাদেশ ক্রিকেটের জন্যই ‘ব্যাড ডে’।
‘খারাপ দিন’টা ‘সবচেয়ে খারাপ দিন’-এ পরিণত হলো ম্যাচ শেষ হওয়ার ঘণ্টা দেড়েকের মধ্যেই। সেটির দায় ক্রিকেট দলের নয়। সমর্থকদের আবেগের বাড়াবাড়ির। আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে জয়ের পর যা হয়েছে, সেটি ছিল বাড়াবাড়ি। কালকের বিপর্যয়ের পর যা হলো, সেটি তো অবশ্যই। বাংলাদেশের ইনিংস শেষ হওয়ার আগেই মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে দর্শক। শেষ ২-৩টি উইকেট পড়ার সময় তুমুল করতালি উঠেছে গ্যালারি থেকে। মাঠে ঢিল-টিলও পড়েছে। অগ্রহণযোগ্য হলেও প্রত্যাশাভঙ্গের নিদারুণ হতাশায় তা-ও সেটির একটা ব্যাখ্যা পাওয়া যায়। কিন্তু খেলা শেষে যা হলো, সেটির কী ব্যাখ্যা?
ওয়েস্ট ইন্ডিজের টিম বাসের কাচ ভাঙল ঢিলে। বাস থেকে ক্রিস গেইলের টুইট মুহূর্তেই ক্রিকেট-বিশ্বে ছড়িয়ে দিল সেই খবর। বিশ্বকাপের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানকে ঘিরে উৎসবমুখর জনতা ক্রিকেট-বিশ্বে অন্য আলোয় আলোকিত করেছিল বাংলাদেশকে। আর কাল ক্রিস গেইল টুইটারে লিখলেন, তিনি এই দেশে আর এক মুহূর্তও থাকতে চান না।
এটি বোধ হয় ৫৮ রানে অলআউট হওয়ার চেয়েও অনেক বড় লজ্জা।