Tuesday, February 8, 2011

সংবাদপত্রের সমালোচনা করলেন প্রধানমন্ত্রী


সংবাদপত্রের সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, মন্ত্রীদের সমালোচনা হচ্ছে বা হবে, এটা ঠিক। তবে পত্রিকাগুলো অনেক সময়ই অসত্য, বানোয়াট তথ্য দিয়ে সংবাদ পরিবেশন করে। এর প্রতিকার হওয়া উচিত।
আজ সোমবার রাশেদ খান মেননের বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রী বলেন, মন্ত্রীর সমালোচনা করবেন, এটা সাংবিধানিক অধিকার, এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু পত্রিকাগুলো যখন মিথ্যা, বানোয়াট, ভিত্তিহীন সংবাদ পরিবেশন করে তখন এর প্রতিকার কী হবে। আপনিও যে আজকের অবস্থায় পড়বেন না, তারই বা নিশ্চয়তা কী? কাল যখন আপনি এ অবস্থায় পড়বেন তখন কী হবে, এটা ভেবে দেখা উচিত।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘যোগাযোগসচিব আমার কাছে কোনো চিঠি পাঠাননি। আইন অনুসারে তিনি এটা পাঠাতে পারেন না। মন্ত্রী আমার কাছে চিঠি পাঠিয়েছেন। আজ এটি আমি দেখেছি। প্রধানমন্ত্রীর কাছে ফাইল যাওয়ার আগেই গণমাধ্যমে কীভাবে তা যায়, এর রহস্যও জানা দরকার।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর সাম্প্রতিক যুক্তরাজ্য সফরের কথা তুলে ধরে বলেন, ‘একটি পত্রিকা সম্পাদকীয় লিখে ফেলল, আমি নাকি হলিডে কাটাতে গেছি, আয়েশ করতে গেছি। অথচ আমি যুক্তরাজ্য পৌঁছে কর্মব্যস্ত সময় কাটিয়েছি। সেখানে গিয়ে আমি দুই ঘণ্টাও বিশ্রাম পেলাম না। সেখানকার প্রধানমন্ত্রী, স্পিকার, অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে আমাকে কাজ করতে হয়েছে।’
প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের এ পর্যায়ে মাগরিবের নামাজের বিরতি হয়। এরপর অধিবেশন শুরু হলে তোফায়েল আহমেদ পয়েন্ট অব অর্ডারে ফ্লোর চান। কিন্তু স্পিকার তাঁকে ফ্লোর না দিয়ে বলেন, এ বিষয়ের ওপর আলোচনার আর কোনো সুযোগ নেই। তোফায়েল আহমেদ তখন কিছু না বলে বসে পড়েন।
এ সময় আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি ও স্বতন্ত্র সদস্যরা একযোগে যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের পাঠানো চিঠি নিয়ে পয়েন্ট অব অর্ডারে কৌশলে বক্তব্য দেন।
সরকারি দলের সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত বলেন, সংসদ নেতার বক্তব্যের পর আলোচনা শেষ হয়ে যায়, এটা ঠিক। স্পিকারের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘সবার মুখ খুলে দেন। শত ফুল ফুটতে দিতে হবে।’
আওয়ামী লীগের আবদুল মতিন খসরু বলেন, উচ্চ আদালতের রায়েই পরিষ্কারভাবে সাংসদদের মর্যাদা ঠিক করা রয়েছে। সাংসদ হলেন দেশের মালিক জনগণের প্রতিনিধি। আর আমলারা হলেন জনগণের কর্মচারীদের প্রতিনিধি। জনগণকে অপমান বা অবমূল্যায়ন করার সুযোগ কারও নেই।
জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের মাঈন উদ্দীন খান বাদল বলেন, সংসদ বোবা এবং বধিরদের জায়গা নয়। তিনি সাংসদদের কথা বলতে দেওয়ার দাবি জানিয়ে বলেন, ‘সংসদে আজ ইশান কোণে মেঘ দেখছি। এটি ভালো লক্ষণ নয়।’ তিনি বলেন, প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীরা কোথাও ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্স অনুসারে সাংসদদের ওপর নন। কিন্তু তা নিয়ে আজ প্রশ্ন তোলার চেষ্টা করা হচ্ছে। তিনি বলেন, ‘বিরোধী দল আসে না, আমাদের সংসদে কথা বলতে দেন। ওনারা আসুক বা না আসুক, আমাদের কথায় মানুষের কথার প্রতিধ্বনি থাকবে। নইলে এ সংসদে মানুষের কথার প্রতিধ্বনি হবে না।’
এ সময় সংসদে সভাপতিত্বকারী ডেপুটি স্পিকার বিষয়টি সংসদীয় দলের সভায় উত্থাপন করার পরামর্শ দেন।
স্বতন্ত্র সাংসদ ফজলুল আজিম বলেন, ‘গত বৃহস্পতিবার তোফায়েল আহমেদের বক্তব্যের পক্ষে সংসদের সবাই ছিলেন। কিন্তু আজ সেই প্রবীণ সদস্যের ব্যাপারে একজন সচিব যে কাজ করেছেন, তা অমর্যাদাকর। অধিকার ক্ষুণ্নের কথা যদি সংসদে বলতে না পারি, তাহলে কী হবে। সংসদ থেকে বেরিয়ে গিয়ে বিরোধী দলের মতো কি হরতাল করব?’ তিনি বলেন, ‘অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে আমরা শুদ্ধ হচ্ছি না, ক্রমশ ড্রেনের দিকে যাচ্ছি। বিরোধী দলকে আশ্বাস দিচ্ছেন সংসদে এলে সব কথা বলার সুযোগ দেওয়া হবে। কিন্তু এখন সরকারি দলই সে সুযোগ পাচ্ছে না।’
এর আগে এ বিষয়ে রাশেদ খান মেননের বক্তব্যের সময় সরকারি দলের সাংসদেরা টেবিল চাপড়ে তাঁকে সমর্থন জানান। আরও কয়েকজন সাংসদ তখন ফ্লোর চাইলে প্রধানমন্ত্রী দাঁড়িয়ে বক্তৃৃতা দিতে শুরু করেন।