দেশের সেরা শিল্পীদের পাশাপাশি কানাডা, শ্রীলঙ্কা ও ভারতের জনপ্রিয় শিল্পীদের পরিবেশনায় বিশ্বকাপের জমকালো উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শেষ হলো। সন্ধ্যা ছয়টা ২০ মিনিটে ছায়ানটের শিল্পীদের জাতীয় সংগীতের মধ্য দিয়ে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের সূচনা হয়। এর পরই জুলফিকার রাসেলের কথায় বিশ্বকাপের স্বাগত ‘ও পৃথিবী এবার এসো...বাংলাদেশ নাও চিনে, ও পৃথিবী...তোমায় স্বাগত জানাই এই দিনে...গানটি গেয়ে শোনান ইবরার টিপু, বালাম, অর্ণব, মিলা, কণা ও এলিটা। গানটির সুর ও সংগীত পরিচালনা দুটোই করেছেন ইবরার টিপু। ইবরার টিপুর গানের পরই ১৪টি দেশের অধিনায়ককে সামনে রেখে ভারতের জনপ্রিয় শিল্পী সনু নিগম পরিবেশন করেন ‘লেটস গো ফর গ্লোরি’ গানটি।
স্বাগত সংগীতের পরই বেশ কিছুক্ষণ চলে বক্তৃতা পর্ব। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আইসিসি বিশ্বকাপ ক্রিকেটের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন ঘোষণার পরপরই শুরু হয় তিন দেশের বিভিন্ন ঐতিহ্যগত বিষয়গুলোর ওপর প্রামাণ্যচিত্র। তিন দেশের ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সাংস্কৃতিক বিষয়গুলো প্রাধান্য পায় এসব প্রামাণ্যচিত্রে।
ভারত ও শ্রীলঙ্কার ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির নানা পরিবেশনার পর মঞ্চে আসেন সাবিনা ইয়াসমিন। তিনি গেয়ে শোনান ‘উত্তর দক্ষিণ পূর্ব পশ্চিম’, ‘ও আমার রসিয়া বন্ধু রে’ এবং ‘একটি বাংলাদেশ’। সাবিনার গান শেষ হতে না হতেই মঞ্চে আসেন ফোক সম্রাজ্ঞি খ্যাত শিল্পী মমতাজ বেগম। তিনি ‘মরার কোকিলে’ ‘খায়রুন লো’, এবং ‘নান্টু ঘটক’—এই তিনটি গান গেয়ে শোনান। আর সবশেষে মঞ্চে আসেন উপমহাদেশের প্রখ্যাত কণ্ঠশিল্পী রুনা লায়লা। তাঁর পরিবেশনায় ছিল ‘শিল্পী আমি তোমাদেরই গান শোনাব’ এবং ‘দমাদম মাস্ত কালান্দার’ গানগুলো। এঁদের পরিবেশনা স্টেডিয়ামভর্তি দর্শক প্রাণভরে উপভোগ করেন। সাবিনা-রুনা-মমতাজের গানের পরই বাংলাদেশের ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির ওপর একটি চমত্কার প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শিত হয়। এর মাধ্যমে বিশ্ববাসী বাংলাদেশের রূপবৈচিত্র ও লড়াই-সংগ্রামের বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে জানতে পারে। এতে প্রাধান্য পায় ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন থেকে ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ, বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ, নববর্ষসহ বিভিন্ন উত্সব এবং চাকমা, রাখাইন, মারমা, সাঁওতাল, গারোদের সংস্কৃতিসহ আরও অনেক কিছু।
প্রামাণ্যচিত্রের পর মঞ্চে আসেন উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের অন্যতম আকর্ষণ কানাডার রকশিল্পী ব্রায়ান অ্যাডামস। তিনি পরিবেশন করেন ‘সামার ৬৯’সহ জনপ্রিয় আরও দুটি গান। সবশেষে বিশ্বকাপের থিম সং ‘আরও জোরে সবার আগে, চতুর্পার্শ্বে ক্রিকেট তাপে চার-ছক্কা মাঠ পেরিয়ে, খেলছে দ্যাখো দামাল ছেলে। পেরিয়ে বাধা, ঘূর্ণি ধাঁধা কিংবা গতির তুমুল কোনো ঝড়/বাতাস কেটে, তুমুল বেগে, হাজার উল্লাসে জয়ের নিশান গড়ো, মারো ঘুরিয়ে, জিতবে এবার জিতবে ক্রিকেট।’ গানটির পরিবেশনার মধ্য দিয়ে শেষ হয় এই বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠান।
গানটি গেয়েছেন রাঘব চ্যাটার্জি। সুর ও সংগীত পরিচালনা করেছেন শংকর-এহসান-লয়। গানটির গীতিকার বাংলাদেশের শেখ রানা।
পুরো কোরিওগ্রাফি পরিচালনা করেন ভারতের কোরিওগ্রাফার সন্তোষ শেঠজি।
বাংলাদেশ পর্ব পরিচালনা করেন নৃত্যশিল্পী শিবলী মহম্মদ ও শামীম আরা নিপা।
বিশ্বকাপ ক্রিকেটের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের সার্বিক দায়িত্বে ছিল উইজ ক্রাফট ও বাংলাদেশের এশিয়াটিক ইভেন্ট।