ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি হয়নি। গত বিশ্বকাপের মতো এবার আর ভারতকে বধ করা যায়নি। কিন্তু তাতে কী! টাইগাররা ভারতকে জবাবটা মন্দ দেয়নি। অন্তত তুলোধুনো তো করেছে ভারতের আগ্রাসী বোলার শ্রীশান্তকে। আর বেচারা ধোনি তো তাতে ভয়ই পেয়ে গিয়েছিলেন। আর কী চাই!
বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচে বাংলাদেশের পারফরমেন্সে হতাশ হয়েছেন, এমন মানুষ খুব কমই পাওয়া যাবে। ভারতের মতো শক্তিশালী ব্যাটিংনির্ভর দলের বিপক্ষে শুরুতে ফিল্ডিং করার সিদ্ধান্তটা না নিলে ফলাফলটা হয়তো অন্য রকমও হতে পারত। আমাদের ব্যাটসম্যানরা এমন আশা বেশ ভালোভাবেই জাগিয়ে তুলেছিলেন। আর গতকালকের নখ-দন্তহীন বোলিং আক্রমণ মাশরাফির অনুপস্থিতিটা বারবারই মনে করিয়ে দিচ্ছিল।
তবে ৮৭ রানের হার দিয়ে শুরু হলেও প্রাপ্তিটা কিন্তু একেবারেই কম না টাইগারদের। ঘরের মাটিতে বিশ্বকাপের যে উত্তেজনা তাতে অন্তত পানি ঢেলে দেননি ইমরুল-তামিম-সাকিবরা। বরং বাংলাদেশের আপামর ক্রিকেটপাগল মানুষকে অন্তত কিছুক্ষণের জন্য হলেও আনন্দে মাতিয়েছিলেন তারা। বিশেষত ইমরুল কায়েস।
উপলক্ষটা করে দিয়েছিলেন শ্রীশান্ত। মাঠের উগ্র আচরণের কারণে হয়তো শুরু থেকেই ভারতীয় এই ফাস্ট বোলারের ওপর আলাদাভাবেই কিছুটা ক্ষুব্ধ ছিল বাংলাদেশ সমর্থকেরা। যেন টাইগাররা শুধু শ্রীশান্তকে উড়িয়ে দিতে পেরেছে বলেই আলাদাভাবে খুশি বাংলাদেশের মানুষ। মাত্র পাঁচ ওভার বল করে বেচারা শ্রীশান্ত দিয়েছেন ৫৭ রান।
ইনিংসের প্রথম ওভারে বল করতে আসলেন শ্রীশান্ত। একটা চারসহ সেই ওভারে তামিম নিলেন আট রান। শ্রীশান্ত দ্বিতীয় ওভারে মুখোমুখি হলেন ইমরুল কায়েসের। এই ওভার থেকেও এল আট রান। তবে এবার দুটাই চার। কিন্তু শ্রীশান্তের তৃতীয় ওভারটা রীতিমতো দুঃস্বপ্নে পরিণত করলেন ইমরুল। শুরুতেই একটা সিঙ্গেল নিয়ে ইমরুলকে স্ট্রাইকে পাঠালেন তামিম। দ্বিতীয় বলেই চার। তৃতীয় বলে স্কোয়ার লেগ দিয়ে আবারও বল চলে গেল সীমানার বাইরে। আম্পায়ার নো বলের ইশারা করতেই দর্শকদের উল্লাস আরও বেড়ে গেল। ফ্রি-হিট। এবার আরও হাত খুলে ব্যাট চালালেন ইমরুল। সেই স্কোয়ার লেগ দিয়ে আবারও চার। দর্শকেরা যেন প্রায় ফেটে পড়ল উল্লাসে। ওভারের পঞ্চম বলটা ইমরুল খেললেন রক্ষণাত্মক ভঙ্গিতে। কোনো রান হলো না। এবার টিভি স্ক্রিনে শ্রীশান্তকে একপলক দেখা যেতেই মাশরাফির বাক্য ধার করে এক দর্শককে বলতে শোনা গেল, ‘দাঁড়া, ধরে দেবানি!’ এই কথার মান রাখতেই বোধহয় পরের বলটা আবারও সীমানার বাইরে পাঠালেন ইমরুল। চার! শ্রীশান্ত যে রীতিমতো নাজেহাল হয়ে পড়েছেন, তার প্রমাণ পাওয়া গেল পরের বলটায়। বলটা ডেলিভারি দিলেন উইকেটের প্রায় বাইরে দিয়ে। এত বড় ওয়াইড, যে উইকেটরক্ষক ধোনি অনেক চেষ্টা করেও বলটা আটকাতে পারলেন না। ওয়াইড বলে আবারও চার। ওভারের শেষ বলটাও যদি সীমানার বাইরে যেত, তাহলে বোধহয় ষোলকলা পূর্ণ হতো। কিন্তু এবার শুধু এক রান। ওই ওভার থেকে এসেছিল মোট ২৪ রান। ধোনি পরবর্তী ওভারে আর শ্রীশান্তের হাতে বল তুলে দেওয়ার সাহস দেখালেন না। তিন ওভারে ৪০ রান দিয়ে প্রথম স্পেল শেষ করলেন ভারতীয় এই ফাস্ট বোলার।
ইমরুল আউট হয়ে যাওয়ার পর দ্বিতীয় স্পেলে আরও দুই ওভার বল করেছিলেন তিনি। কিন্তু এবারও তাঁকে খুব বেশি স্বস্তিতে থাকতে দিলেন না তামিম আর সাকিব। একটা চারসহ ওই দুই ওভার থেকে বাংলাদেশের অধিনায়ক আর সহ-অধিনায়ক নিলেন ১৭ রান। পরে আর শ্রীশান্তের হাতে বল তুলে দেননি ধোনি। ভারতের বিশ্বকাপ মিশন জয় দিয়ে শুরু হলেও শ্রীশান্তের স্বপ্নে বোধহয় বেশ কিছুদিন হানা দিতে পারে ইমরুল, সাকিব, তামিমদের ব্যাট। দুঃস্বপ্ন হয়ে!