দলকে নিয়ে পরিকল্পনা করেন, প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করতে ফন্দি আঁটেন, দলকে প্রশিক্ষণ ও টেকনিক্যালি সহযোগিতা করেন, দলকে সাফল্যের মুখ দেখাতে কৌশল নির্ধারণ করেন, তিনি খেলেন না খেলান। হ্যাঁ, বলছিলাম কোচদের কথাই। খেলোয়াড়ের পাশাপাশি তারাও দলে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন। আর দলের সফলতা ও ব্যর্থতা অধিকাংশ নির্ভর করে তাদের ওপর। দলকে সাফল্যের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে যান। খেলোয়াড়দের উত্সাহ-প্রেরণা জোগান। দলকে জেতাতে আগে থেকেই রণকৌশল ঠিক করে রাখেন। কোন স্টাইলে ব্যাটিং আর বোলিং করতে হবে, ফিল্ডিং কীভাবে দিতে হবে, কার কোন স্থান পরিবর্তন করতে হবে, কোন বোলার বল করবে, এসব সিদ্ধান্ত নেন মূলত কোচরাই। তবে মাঠে দলনেতা এসব সিদ্ধান্ত প্রয়োগ করেন। পর্দার অন্তরালে থেকে যারা দলকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন তাদের নিয়ে আমাদের আজকের আয়োজন।
টিমোথি জন নেলসন (অস্ট্রেলিয়া)
এবারের বিশ্বকাপে অস্ট্রেলিয়ার কোচ টিমোথি জন নেলসন। গত বিশ্বকাপের পর জন বুকানন কোচের দায়িত্ব ছেড়ে দিলে অস্ট্রেলিয়ার কোচ হিসেবে দায়িত্ব নেন তিনি। বিশ্বচ্যাম্পিয়ন অস্ট্রেলিয়াকে পঞ্চমবারের মতো বিশ্বকাপ শিরোপা এনে দিতে তিনি সেভাবেই তৈরি করেছেন দলকে। জন নেলসন জম্মগ্রহণ করেন ব্রিটেনে ১৯৬৮ সালের ৫ মে। ১৯৯৯ সালে তিনি অবসরে যান। ২০০৭ সালে ৫ ফেব্রুয়ারি জন বুকাননের স্থলাভিষিক্ত হন তিনি।
গ্যারি কারস্টেন (ভারত)
এবারের বিশ্বকাপের হট ফেভারিট ভারত। কোচের দায়িত্বে আছেন দক্ষিণ আফ্রিকার সাবেক খেলোয়াড় গ্যারি কারস্টেন। ৪৩ বছর বয়সী গ্যারি ১৯৬৭ সালে ২৩ নভেম্বর দক্ষিণ আফ্রিকায় জন্মগ্রহণ করেন। প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেটার পল কারস্টেনের ভাই গ্যারি কারস্টেন দক্ষিণ আফ্রিকার হয়ে ১৮৫টি ওয়ানডে ও ১০১টি ম্যাচ খেলেছেন। তিনি দলের হয়ে টেস্টে ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ ২৭৫ রানের রেকর্ড গড়েছিলেন। ২০০৩ সালে ২৭৭ রান করে জ্যাক ক্যালিস এ রেকর্ড ভাঙেন। ২০০৮ সালে তিনি ভারতের কোচের দায়িত্ব নেন।
এন্ডি ফ্লাওয়ার (ইংল্যান্ড)
এন্ডি ফ্লাওয়ার জিম্বাবুয়ের সাবেক খেলোয়াড়। ২০০৭ সালে ইংল্যান্ড দলের গুরুদায়িত্ব নেন। ১৯৬৮ সালে দক্ষিণ আফ্রিকায় তিনি জম্মগ্রহণ করেন। ১৯৯২ সালে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলা শুরু করেন। তিনি মোট ৬৩টি টেস্ট ম্যাচ খেলেছেন। এরমধ্যে ছিল ১২টি সেঞ্চুরি আর ২৭টি হাফসেঞ্চুরি। ওয়ানডে ক্রিকেটেও তিনি সংগ্রহ করেছিলেন ৬৭৮৬ রান। ৪টি সেঞ্চুরি ও ৫৫টি হাফসেঞ্চুরি ছিল এর মধ্যে।
ট্রেভর বেলিস (শ্রীলঙ্কা)
ট্রেভর বেলিস। তিনি শ্রীলঙ্কা দলের কোচ। ১৯৬২ সালের ২১ ডিসেম্বর তিনি শ্রীলঙ্কাই জন্মগ্রহণ করেন। দেশের ক্রিকেটকে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে দিতে ২০০৭ সালে তিনি কোচের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। দেশকে ১৫ বছর পর আবারও শিরোপা এনে দিতে এবারের বিশ্বকাপে তিনিই থাকবেন কোচের দায়িত্বে। বিশ্বের যে কোনো ক্রিকেট দলকে টক্কর দিতে শ্রীলঙ্কান দলকে প্রশিক্ষণ দিয়ে আসছেন।
ওয়াকার ইউনুস (পাকিস্তান)
এক সময়ের বিশ্বের সবচেয়ে দ্রুতগতির পাকিস্তানি বোলার। নাম তার ওয়াকার ইউনুস। তবে পুরো নাম হচ্ছে ওয়াকার ইউনুস মাইতলা। তিনি ১৯৭১ সালে পাকিস্তানের পাঞ্জাবে জন্মগ্রহণ করেন। বর্তমানে পাকিস্তানের কোচের দায়িত্বে আছেন। ২০০৬ সালে তিনি দেশের বোলার কোচ হিসেবে দায়িত্ব পান। বিশ্বব্যাপী যখন পাকিস্তানি দলকে নিয়ে সমালোচনা আর অন্তর্কোন্দল, ফর্মহীনতা তখন ওয়াকার ইউনুস খুবই সতর্কভাবে এবারের বিশ্বকাপের জন্য দল গুছিয়েছেন। বিশ্বজয়ের স্বপ্নে শীর্ষদের এরই মধ্যে কৌশল ঠিক করে দিয়েছেন।
জন রাইটস (নিউজিল্যান্ড)
এবারের বিশ্বকাপে নিউজিল্যান্ডের কোচ হিসেবে আছেন জন রাইটস। ১৯৫৪ সালের ৫ জুলাই তিনি নিউজিল্যান্ডে জন্মগ্রহণ করেন। কিউইদের সাবেক এ অধিনায়ক কোচের অভিজ্ঞতা ১৮ বছরের। কিউইদের হয়ে ১৪৯টি ওয়ানডে ও ৮২টি টেস্ট ম্যাচ খেলেছেন। সংগ্রহে ছিল ৫৫৩৪ রান টেস্টে আর ৩৮৯১ রান ওয়ানডে ম্যাচে। ২০১০ সালে জন রাইটস নিউজিল্যান্ডের কোচের দায়িত্ব নেন।
জেমি সিডন্স (বাংলাদেশ)
টাইগারদের সাফল্যের পেছনে কাজ করে যাচ্ছেন অস্ট্রেলিয়ার সাবেক খেলোয়াড় জেমি সিডন্স। ১৯৬৪ সালে অস্ট্রেলিয়ায় তার জন্ম। ২০০৭ সালের ২৮ অক্টোবরে তিনি বাংলাদেশে কোচ হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। আগে তিনি ভিক্টোরিয়া ও সাউথ অস্ট্রেলিয়ার হয়ে খেলেছিলেন প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেট। ১৬ বছরের ক্যারিয়ারে তিনি মাত্র একটি ওয়ানডে ক্রিকেট খেলেন। তবে খেলায় অভিজ্ঞতা যাই হোক, তিনি কোচ হিসেবে বেশি সফল।
অ্যালন বুচার (জিম্বাবুয়ে)
জিম্বাবুয়ের কোচ অ্যালন বুচার। ১৯৫৪ সালে তিনি ইংল্যান্ডে জন্মগ্রহণ করেন। খেলতেন ইংলিশদের হয়ে। ২০১০ সালে তিনি জিম্বাবুয়ে দলের কোচের দায়িত্ব নেন।
ফিল সিমন্স (আয়ারল্যান্ড)
ফিল সিমন্স আয়ারল্যান্ডের কোচ। তিনি ১৯৬৩ সালের ১৮ এপ্রিল ত্রিনিদাদে জন্মগ্রহণ করেন। ওয়েস্ট ইন্ডিজের অলরাউন্ডার ছিলেন। খেলেছেন ২৬টি টেস্ট ও ১৪৩টি ওয়ানডে ম্যাচ। ২০০৭ সালে তিনি আইরিশদের কোচ হিসেবে যোগ দেন।
গিবসন (ওয়েস্ট ইন্ডিজ)
প্রথম বিশ্বকাপ চ্যাম্পিয়ন ওয়েস্ট ইন্ডিজের কোচ গিবসন। ১৯৬৯ সালের ১৬ মার্চ বার্বাডোজে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। ওয়েস্ট ইন্ডিজের হয়ে দুটি টেস্ট ও ১৫টি ওয়ানডে ম্যাচ খেলেছেন তিনি। ২০০৭ সালে ইংল্যান্ডের বোলিং কোচের দায়িত্ব পালন করেন।
পিটার ড্রিনেন (নেদারল্যান্ডস)
নেদারল্যান্ডসের কোচ হিসেবে আছেন পিটার ড্রিনেন। ১৯৫৫ সালে তিনি নেদারল্যান্ডসেই জন্মগ্রহণ করেন। ২০১০ সালে নিজের দেশে কোচ হিসেবে নিযুক্ত হন।
বেনজাইল (দক্ষিণ আফ্রিকা)
দক্ষিণ আফ্রিকার কোচের দায়িত্বে আছেন বেনজাইল। তিনি ১৯৬১ সালে দক্ষিণ আফ্রিকায় জন্মগ্রহণ করেন। ক্রিকেট জীবনে তিনি মাত্র দুটি ওয়ানডে ম্যাচ খেলেছেন।
পাডুমো ডাসানায়েক (কানাডা)
কানাডা দলে আছেন পাডুমো ডাসানায়েক। ১৯৭০ সালে তিনি শ্রীলঙ্কায় জন্মগ্রহণ করেন। তিনি কানাডা ও শ্রীলঙ্কার হয়ে খেলেছেন। ২০০৭ সালে তিনি কানাডার কোচের দায়িত্ব নেন।
এলডিন বেপটিন্স (কেনিয়া)
কেনিয়ার কোচ এলডিন বেপটিন্স। ১৯৬০ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ওয়েস্ট ইন্ডিজের হয়ে ৪৩টি ওয়ানডে ও ১০টি টেস্ট ম্যাচ খেলেছিলেন। ২০০৯ সালে তিনি কেনিয়ার কোচ হিসেবে দায়িত্ব পান।