Tuesday, February 8, 2011

পুঁজি হারিয়ে বিনিয়োগকারীরা এখন দিশেহারা


‘আপনারা আমার বুকে অস্ত্র ঠেকিয়ে একটি গুলি করেন। আমি মরতে চাই। আমি শেষ হয়ে গেছি। এভাবে বেঁচে থাকার চেয়ে মরাই ভালো।’ আজ সোমবার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) মূল ভবনের সামনে পুলিশকে লক্ষ্য করে এমন আকুতি করেন একজন বিনিয়োগকারী।
শুধু ওই বিনিয়োগকারীই নন, তাঁর মতো পুঁজি হারিয়ে আরও অনেকে এখন দিশেহারা। অনেকে শুরু করেন অস্বাভাবিক আচরণ। এক বিনিয়োগকারী সড়ক দ্বীপে থাকা একটি সাইনবোর্ড ভেঙে নিয়ে সেখানে কর্তব্যরত ক্যামেরাম্যানদের দিকে তেড়ে আসেন। এ সময় সেখানে অবস্থান করা বেশ কয়েকজন লোক তাঁর কাছ থেকে সাইনবোর্ডটি কেড়ে নেন। অনেককে আবার পুঁজি হারিয়ে কান্নাকাটি করতে দেখা যায়। অনেকে জুতা মিছিল করেন। কেউ কেউ আবার সড়কে আগুন জ্বালিয়ে অবরোধ সৃষ্টি করেন। মতিঝিলের শাপলা চত্বর থেকে ইত্তেফাক মোড় পর্যন্ত ডিএসইর সামনের সড়কে আজ সারা দিনই ছিল এমন চিত্র।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, প্রধান বিরোধী দলের ডাকা হরতালের দিনে আজ কোরাম পূর্ণ হওয়ায় বেলা ১১টায় ডিএসইতে লেনদেন শুরু হয়। গত দুই দিনের মতো আজও দরপতনের মধ্য দিয়ে শুরু হয় লেনদেন। পাঁচ মিনিটে ডিএসইর সাধারণ মূল্যসূচক ২৩৭ পয়েন্ট নেমে যায়। এরপর সূচক ঘুরে দাঁড়ালেও ১১টা ৫০ মিনিটের পর থেকে আবার পতন শুরু হয়, যা সারা দিনই অব্যাহত থাকে। তবে দুপুর একটার দিকে সূচক প্রায় ২৮০ পয়েন্ট পড়ে গেলে ক্ষতিগ্রস্ত বিনিয়োগকারীরা রাজপথে নেমে আসেন। প্রথমে সংখ্যা কম থাকলেও কিছুক্ষণের মধ্যে বিভিন্ন ব্রোকারেজ হাউস থেকে বিনিয়োগকারীরা রাস্তায় নামেন। তাঁরা ডিএসইর সামনের সড়কে আগুন জ্বালিয়ে অবরোধ করে দফায় দফায় বিক্ষোভ মিছিল করতে থাকেন। বিক্ষোভকারীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে কয়েকদফা ইট নিক্ষেপ করেন। তাঁরা অর্থমন্ত্রী ও বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরসহ এসইসির চেয়ারম্যান ও ডিএসইর প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে স্লোগান দেন। ওই সব ব্যক্তির পদত্যাগেরও দাবি করেন তাঁরা। বেশ কিছু বিনিয়োগকারী খালি গায়ে মিছিল করেন। একপর্যায়ে কিছু বিনিয়োগকারীকে সেখানে জুতা মিছিলও বের করতে দেখা যায়। দুপুর দুইটার দিকে একদল বিক্ষুব্ধ বিনিয়োগকারী মতিঝিলের জীবনবিমা টাওয়ারের (এসইসির কার্যালয়) নিচতলায় কাচ ভাঙচুর করেন। এ সময় চার/পাঁচটি যানও ভাঙচুর করা হয়।
বেলা সাড়ে তিনটার দিকে মতিঝিল শাপলা চত্বরের পাশে অবস্থিত আইএফআইসি ব্যাংক, এনসিসি ব্যাংক, সিটি ব্যাংক এবং ডিএসই ভবনের বিপরীত পাশের জনতা ব্যাংকের অফিসে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে কাচ ভাঙচুর করেন বিনিয়োগকারীরা। এ সময় পুলিশ ধাওয়া দিলে বিনিয়োগকারীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট নিক্ষেপ করেন। এ ছাড়া কয়েকটি ব্রোকারেজ হাউসেও ভাঙচুরের খবর পাওয়া যায়।
প্রায় তিন ঘণ্টা বন্ধ থাকার পর বেলা পৌনে চারটার দিকে মতিঝিলের শাপলা চত্বর থেকে ইত্তেফাক মোড় পর্যন্ত সড়কে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়।
বাজার পরিস্থিতি: আজ দিন শেষে ডিএসইতে সাধারণ মূল্যসূচক ৩২৪ দশমিক ৫১ পয়েন্ট বা ৪ দশমিক ৮২ শতাংশ কমে ৬ হাজার ৩৯৪ দশমিক ৫৩ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। লেনদেন হওয়া ২৫৫টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে দাম বেড়েছে ১২টির, কমেছে ২৪১টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে দুটি প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের দাম। আজ স্টক এক্সচেঞ্জটিতে ৬০৯ কোটি টাকার লেনদেন হয়েছে। গতকালও স্টক এক্সচেঞ্জটিতে ৪০৬ পয়েন্ট পতন হয়।
আজ ডিএসইতে লেনদেনে শীর্ষে থাকা ১০ প্রতিষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে ইউসিবিএল, গ্রামীণফোন, এনবিএল, বেক্সিমকো, তিতাস গ্যাস, এবি ব্যাংক, প্রাইম ব্যাংক, ইউনাইটেড এয়ারওয়েজ, পিপলস লিজিং অ্যান্ড ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস ও সাইথইস্ট ব্যাংক।
অপরদিকে চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জেও (সিএসই) আজ দরপতন হয়েছে। সিএসইর সাধারণ মূল্যসূচক আজ ৭৮৩ দশমিক ৭ পয়েন্ট কমে ১৮৪২৯ দশমিক ১৪ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। সিএসইতে লেনদেন হওয়া ১৮৮টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে দাম বেড়েছে মাত্র ছয়টির, কমেছে ১৮০টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে দুটি প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের দাম। আজ স্টক এক্সচেঞ্জটিতে ৮৪ কোটি টাকার লেনদেন হয়েছে।