Wednesday, August 17, 2011

 মুশফিক-বীরত্বের পরও সিরিজ হাতছাড়া


সিরিজে বাকি আরও দুটি ম্যাচ। তবে এর আগেই ৩-০ করে ফেলল স্বাগতিক জিম্বাবুয়ে! আর ব্যাটে-বলে সমানতালে ব্যর্থ হয়ে বাংলাদেশ করল সিরিজ হাতছাড়া।
ঘুরে দাঁড়ানো হলো না সাকিব আল হাসানদের। ৪ উইকেট, ৭ উইকেটের পর আজ তৃতীয় ওয়ানডেতে বাংলাদেশের হার ৫ রানে। সিরিজ হাতছাড়া হওয়ায় এখন বাংলাদেশ দলের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ ‘হোয়াইটওয়াশ’ ঠেকানো!
১০০ বলে ১০১ রান—৮ চার, ১ ছয়। বীরোচিত ইনিংস খেলে বাংলাদেশকে জয়ের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে গিয়েছিলেন মুশফিকুর রহিম। তবে নায়কের বদলে এখন উল্টো মুশফিককে ‘খলনায়ক’ বলেও আখ্যায়িত করতে পারেন অনেকে! ৫ বলে প্রয়োজন ছিল মাত্র ৬ রান। হাতে শুধু একটি উইকেট। এ অবস্থায় কী দরকার ছিল ওভাবে তুলে মারার? তাড়াহুড়ো করতে গিয়ে মুশফিক ক্যাচ-আউট হলেন—অলআউট হয়ে গেল বাংলাদেশও!
প্রথম দুই ম্যাচে দলের হার ডেকে এনেছিলেন ব্যাটসম্যানরা, ১৮৪ ও ১৮৮ রানে অলআউট হয়ে। আজ হার ডেকে আনার দায়িত্বটা যেন পড়েছিল বোলারদের ওপর! বাংলাদেশি বোলারদের চোখরাঙিয়ে মাসাকাদজা করলেন ৭৪ রান, টাইবু খেললেন ৮৩ রানের ইনিংস। এই দুই ব্যাটসম্যানের ব্যাটের ওপর ভর করে জিম্বাবুয়ের সংগ্রহ দাঁড়াল ২৫০! জিম্বাবুয়ের সফরে গিয়ে অসহায় সাকিব-তামিমদের কাছে সংগ্রহটা বিস্ময়েরই বটে!
হতাশার মধ্যেও ব্যাটসম্যানদের ধন্যবাদ না দিয়ে উপায় নেই। উদ্বোধনী জুটিতে এলো ৫০ রান। প্রথম দুই ম্যাচে ৪ ও ৩ করা তামিম ইকবাল খেললেন ৪৪ রানের ইনিংস। আশরাফুলের জায়গায় খেলতে আসা শুভাগত হোম অভিষেক ম্যাচে করলেন ৩২ রান। মুশফিকুর রহিম সেঞ্চুরি করলেন। কম কীসে!
সংক্ষিপ্ত স্কোর—
জিম্বাবুয়ে: ২৫০/৭ (৫০ ওভার)
টাইবু ৮৩, মাসাকাদজা ৭৪
রুবেল ৪১/২, সাকিব ৪৬/২
বাংলাদেশ: ২৪৫/অলআউট (৪৯.২ ওভার)
মুশফিক ১০১, তামিম ৪৪
উেসয়া ৪৭/৩, পোফু ৪৩/২, জারভিজ ৫২/২

Tuesday, August 9, 2011

এই পরাজয়ে বড় লজ্জা

জিম্বাবুয়ে: ৩৭০ ও ২৯১/৫ (ডিক্লে.)
বাংলাদেশ: ২৮৭ ও ২৪৪
ফল: জিম্বাবুয়ে ১৩০ রানে জয়ী

বড় সিরিজ-টিরিজ জিতলে শ্যাম্পেনে ভেজেন খেলোয়াড়েরা। নিজেদের দেশে খেলা হলে ল্যাপ অব অনারও দেয় কখনো কখনো। কিন্তু এক টেস্ট জিতেই?
হারারে টেস্টে জয়ের পর জিম্বাবুইয়ান খেলোয়াড়েরা শ্যাম্পেনে ভিজলেন। জাতীয় পতাকা গায়ে জড়িয়ে দিল ল্যাপ অব অনারও। টেস্ট ক্রিকেটে ব্যতিক্রমী আরেকটি ব্যাপারও ঘটল। খেলোয়াড়দের সবার গলায় পরিয়ে দেওয়া হলো স্বর্ণপদক।
এমনিতেই জিম্বাবুয়ের কাছে টেস্ট জয় মহার্ঘ্য এক ব্যাপার। ৮৪তম টেস্টে এটি মাত্র নবম জয়। শ্যাম্পেন-ল্যাপ অব অনার-স্বর্ণপদক এসবের কারণ অবশ্য অন্য। এটি তো শুধুই একটি টেস্ট জয় নয়। পাকিস্তান ও ভারতের বিপক্ষেও তো টেস্ট জিতেছে জিম্বাবুয়ে। সে সবকেও ছাপিয়ে গেছে বাংলাদেশের বিপক্ষে এই জয়। সাবেক অধিনায়ক ও বর্তমান প্রধান নির্বাচক অ্যালিস্টার ক্যাম্পবেল যেমন বললেন, ‘অনেক নিদ্রাহীন রাতের পর এই জয়।’
নিদ্রাহীন রাতের সঙ্গে ছিল অনেক লজ্জা, অনেক অপমানও। বর্ণবাদের কারণে দক্ষিণ আফ্রিকার নিষিদ্ধ হওয়া বাদ দিলে ক্রিকেট ইতিহাসে আর কোনো দেশের টেস্ট খেলার অধিকার কেড়ে নেওয়ার ঘটনা নেই। সাড়ে ছয় বছরের নির্বাসন শেষে জয় দিয়ে প্রত্যাবর্তন। জিম্বাবুইয়ান ক্রিকেটে কাল ছিল উ ৎ সবের দিন।
আর বাংলাদেশের ক্রিকেটে? অপমানের দিন। লজ্জার দিন। টেস্ট ক্রিকেট জিনিসটা কেমন প্রায় ভুলে যাওয়া সাতজনের সঙ্গে আনকোরা চারজনের এক দলের কাছে ১৩০ রানে পরাজয়টা যদি ‘লজ্জা’ নয় তো কী!’
খেলায় জয়-পরাজয় থাকেই। লজ্জা শব্দটা তখনই আসে, যখন পরাজয়টা এমন প্রতিরোধহীন আত্মসমর্পণ হয়। সেই প্রথম দিন থেকেই এই টেস্ট ম্যাচে জিম্বাবুয়ে শ্রেয়তর দল। এর সবকিছুকে তা ৎ পর্যহীন প্রমাণ করার সুযোগ হয়ে এসেছিল পঞ্চম ও শেষ দিনটি। অথচ সেদিনই সবচেয়ে করুণ চেহারায় দেখা দিল বাংলাদেশ দল। বাংলাদেশের ক্রিকেটও কি নয়!
হাতে ৭ উইকেট নিয়ে ২৬৩ রান। খুব সহজ নয়। কিন্তু পঞ্চম দিনের সঙ্গে বেমানান ব্যাটিং-উইকেট এটিকে অসম্ভব মনে করতে দিচ্ছিল না। দাবি ছিল একটাই, ব্যাটসম্যানদের একটু বিচারবুদ্ধি প্রয়োগ করে খেলা। আর একটা অবশ্যপালনীয় নিয়মের কথা মনে রাখা। তা হলো, বড় স্কোর তাড়া করতে হলে পার্টনারশিপ চাই। আর চাই প্রতি ঘণ্টা, প্রতিটি সেশন শেষে পরিস্থিতি বিবেচনা করে সে অনুযায়ী ব্যাটিং করা। এমন কোনো মহাকাশবিজ্ঞান নয়, খুবই সাধারণ ক্রিকেট-জ্ঞানের কথা।
অথচ লাঞ্চের মিনিট পনেরো পরে শেষ হয়ে যাওয়া টেস্ট ম্যাচ নিয়ে আলোচনাটাই কেমন হাস্যকর লাগছে! কাল বাংলাদেশের ইনিংস স্থায়ী হলো মাত্র ২৭.৩ ওভার। সবচেয়ে বড় পার্টনারশিপ ৫০ রানের। সেটি যখন, জিম্বাবুয়ে ক্রিকেটের লোকজন তখন পুরস্কার বিতরণীর প্রস্তুতিতে ব্যস্ত। আবদুর রাজ্জাক ব্যাটসম্যানদের ওপর রেগে গিয়েই কিনা হঠা ৎ ‘জয়াসুরিয়া’ হয়ে গেলেন। রাজ্জাকের ১৭ বলে পাঁচ চার ও তিন ছয়ে ৪৩ রানের ইনিংসটির কল্যাণেই অষ্টম উইকেটে ওই ফিফটি পার্টনারশিপ।

রাজ্জাকের ব্যাটিং দেখে এটি টেস্ট না ওয়ানডে, বোঝা যাচ্ছিল না। তবে সেই ধন্দে কি অন্যরাও ফেলেননি? মোহাম্মদ আশরাফুল ও মুশফিকুর রহিম ছাড়া আর কারও ব্যাটেই তো টেস্টের মেজাজ খুঁজে পাওয়া গেল না। টেস্টের মেজাজ মানে শুধু ঠেকিয়ে যাওয়া নয়, বল বুঝে একটু কম ঝুঁকি নিয়ে খেলা। অথচ সাকিব আল হাসান ও মাহমুদউল্লাহর ব্যাটিং দেখে কেউ ভুল করে ভাবতেই পারতেন, বুঝি ওয়ানডে ম্যাচের পাওয়ার প্লে চলছে!
১৬৭ রানে ৫ উইকেট পড়ে যাওয়ার পর নেমেছেন সাকিব। ওই পরিস্থিতিতে বড় একটা পার্টনারশিপ হলে তবেই জয়ের কথা ভাবনায় আসবে। এর আগ পর্যন্ত উইকেট না দেওয়াটাই হবে ধ্যানজ্ঞান। অথচ সাকিব সদর্পে জানালেন, ড্রয়ের কথা তিনি মাথায়ই আনেননি!
আত্মবিশ্বাস ভালো। তবে আত্মবিশ্বাস আর ঔদ্ধত্যের মাঝখানে সীমারেখা, সেটি পেরিয়ে গেলে বড় বিপদ হয়। কখনো কখনো তা টেনে আনে বড় লজ্জাও। যেমন আনল কাল। জিম্বাবুয়ে দল যখন আনন্দে মত্ত, বাংলাদেশের খেলোয়াড়েরা অধোবদন দর্শক। লাউড স্পিকারে উচ্চ স্বরে বাজছে জিম্বাবুইয়ান গান। আর বাংলাদেশ দলের সীমানা ছাড়িয়ে বাংলাদেশের ক্রিকেট ঘিরে যেন রবীন্দ্রনাথের নৃত্যনাট্যে চিত্রাঙ্গদার গ্লানিময় আক্ষেপ—লজ্জা লজ্জা হায় এ কী লজ্জা, মিথ্যা রূপ মোর মিথ্যা সজ্জা...

Thursday, April 14, 2011

পরাজয়েও দর্শকের প্রাপ্তি বি নোদন

অস্ট্রেলিয়া: ৫০ ওভারে ৩৬১/৮
বাংলাদেশ: ৫০ ওভারে ২৯৫/৬
ফল: অস্ট্রেলিয়া ৬৬ রানে জয়ী

মিরপুর স্টেডিয়াম অনেকটা বিশ্বকাপের চেহারায় ফিরে গেল কাল। গ্যালারি প্রায় পূর্ণ। জয়-পরাজয়ের কথা ভুলে শুধু খেলার মূল উদ্দেশ্যের কথা ভাবলে সেই দর্শকদের খুব একটা অভিযোগ থাকার কথা নয়। খেলার মূল উদ্দেশ্য বিনোদন। সিরিজের তৃতীয় ও শেষ ম্যাচে দর্শকেরা ভালোই বিনোদিত হলো। এককথায় পয়সা উশুল।
সেই বিশ্বকাপের উদ্বোধনী ম্যাচের পর মিরপুরে খেলা মানেই রানের খরা। ব্যাটসম্যানদের প্রাণান্ত চেষ্টায় রান করা। অস্ট্রেলিয়া সিরিজের প্রথম দুই ম্যাচও একটু ব্যতিক্রম ছিল। তবে বাংলাদেশের দর্শকদের সেটি উপভোগ করার মতো পরিস্থিতি ছিল না। প্রথম ম্যাচে অস্ট্রেলিয়ার ২৭০, দ্বিতীয় ম্যাচে ওয়াটসনের ছক্কা-বৃষ্টি। তৃতীয় ম্যাচে বাংলাদেশ দলও দর্শকদের কিছু আনন্দের উপলক্ষ দিতে পারল।
লো-স্কোরিং ওয়ানডেরও মজা আছে। তবে সেটির পূর্বশর্ত রোমাঞ্চকর সমাপ্তি। হাই-স্কোরিং ম্যাচে ফলাফল যা-ই হোক, দর্শকদের লাফালাফি করার প্রচুর সুযোগ থাকে। ১০০ ওভারে ৬৫৬ রান। ৬৩টি চার ও ১৪টি ছয়। কালকের দিবারাত্রির ম্যাচও তা সেই সুযোগ ভালোই করে দিল। ওয়ানডের জন্য চরমতম দুঃস্বপ্ন এক ইনিংস শেষেই ম্যাচ শেষ হয়ে যাওয়াটাও সেই আনন্দে খুব একটা বাদ সাধতে পারল না। ৬৬ রানের পরাজয়, কিন্তু বিশ্বকাপ স্বপ্নভঙ্গ ও সিরিজের প্রথম দুই ম্যাচে অসহায় আত্মসমর্পণ বিবেচনায় এটিকেও বলতে হচ্ছে দীর্ঘ আন্তর্জাতিক মৌসুমের স্মরণীয় সমাপ্তি!
উইকেট ক্রিকেটের সবচেয়ে বড় রহস্যগুলোর একটি। মিরপুরের উইকেট আরও এককাঠি সরেস। এখানে উইকেট কখন যে কার দিকে তাকিয়ে হাসবে, সেটি দেব না জানন্তি। দ্বিতীয় ম্যাচে ওয়াটসনের ১৫ ছক্কার বিশ্ব রেকর্ডের পরও বাংলাদেশের খেলোয়াড়েরা বলছিলেন, ছক্কা মারতে পারলেই ব্যাটিং উইকেট হয়ে যায় না। উইকেট খুব ব্যাটিংবান্ধব ছিল না। তবে তৃতীয় ম্যাচের উইকেট ঠিকই ব্যাটসম্যানদের পরম বন্ধু হয়ে আবির্ভূত হলো। টসে জিতে সেই উইকেটে প্রথম ব্যাটিং করেই অস্ট্রেলিয়া ম্যাচের ফলাফল নিয়ে আলোচনা শেষ করে দিল।
জিততে হলে (!) বাংলাদেশকে করতে হতো ৩৬২ রান। ওয়ানডে ইতিহাসেই সাড়ে তিন শ রানের বেশি তাড়া করে জয়ের ঘটনা আছে মাত্র একটি। সেটি সর্বকালের সেরা চেজ—২০০৬ সালে অস্ট্রেলিয়ার ৪৩৪ রান তাড়া করে দক্ষিণ আফ্রিকার জয়।
এই মিরপুরে রেকর্ডটা আরও নিরুৎসাহজনক। এখানে পরে ব্যাটিং করে সবচেয়ে বেশি রান করে জয়ের রেকর্ড ২৯৭ রান। সেটি বাংলাদেশেরই বিপক্ষে (২০১০ সালে ভারত)। ওয়ানডে ইতিহাস বা মিরপুর মাঠের রেকর্ডের আগে অবশ্য অস্ট্রেলিয়া-বাংলাদেশ দ্বৈরথের রেকর্ডটা দেখা উচিত। বাংলাদেশের একটিই জয়। সেটি ২৪৯ রান তাড়া করে। ২০০৫ সালে কার্ডিফের সেই অবিস্মরণীয় ম্যাচে।
সেই রেকর্ডকে ১১২ রান বাড়িয়ে নেওয়া বাংলাদেশের অসাধ্য ছিল। তবে রেকর্ড কিন্তু বেশ কিছু হলো। ৬ উইকেটে ২৯৫ অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ রান (আগের সর্বোচ্চ কার্ডিফেরই ওই ২৪৯)। দ্বিতীয় উইকেটে ইমরুল কায়েস ও শাহরিয়ার নাফীসের ১৩৬ রান অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে যেকোনো জুটিতেই বাংলাদেশের নতুন রেকর্ড। এখানেও পেছনে পড়ল সেই কার্ডিফ (চতুর্থ উইকেটে আশরাফুল-হাবিবুলের ১৩০)। কার্ডিফের দুটি কীর্তিকে ছাড়িয়ে গিয়েও জয়টার পুনরাবৃত্তি করা গেল না, তার কারণ তো একটাই। ৩৬১ তাড়া করার মতো সামর্থ্য বাংলাদেশের এখনো হয়নি। বড় কোনো দলের বিপক্ষে আগে ব্যাট করেই এখনো তিন শ করতে পারেনি বাংলাদেশ (সর্বোচ্চ ভারতের বিপক্ষে ২৯৬, মিরপুর, ২০১০), অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে পরে ব্যাটিং করে ৩৬২ করবে কীভাবে!
ব্রেট লিকে বাইরে রেখে নামা অস্ট্রেলিয়া তাই কখনোই ম্যাচ নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েনি। তবে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের ভয়ডরহীন স্ট্রোক প্লেতে একটু চমকে তো অবশ্যই গেছে। চমকে দেওয়ার কাজটা প্রথম করেছেন যথারীতি তামিম ইকবাল। জনসনের প্রথম ওভারেই চার ও ছয়। ২০০ স্ট্রাইক রেটে ১৬ বলে ৩২ করে ফেলার পর জনসনের প্রায় ইয়র্কার বলে বোল্ড হয়েছেন। তবে ইমরুল ও শাহরিয়ার সেটিকে মোটেই ধাক্কা মনে করতে দেননি।
দ্বিতীয় ওয়ানডেতে ইমরুল কায়েসের ৪১ বলে ৫ করার ‘কীর্তি’ ১৯৭৫ বিশ্বকাপে ৬০ ওভার খেলে সুনীল গাভাস্কারের ৩৬ রানে অপরাজিত থাকার মতোই অবিশ্বাস্য। সেই ইমরুলই কাল রান আর বলে প্রায় সমতা রেখে ৯৫ বলে ৯৩। ওয়ানডেতে দ্বিতীয় সেঞ্চুরিটা প্রাপ্য ছিল। ওয়ানডেতে প্রথম উইকেট হিসেবে প্যাটিনসন তাঁকেই বেছে নেওয়ায় তা আর পাওয়া হলো না।
শাহরিয়ার নাফীস ৬০ রান করে জুনায়েদের দলে ফেরাটা খুব কঠিন বানিয়ে দিলেন। আর মাহমুদউল্লাহ ৬১ বলে অপরাজিত ৬৮ রানের ইনিংস খেলে বুঝিয়ে দিলেন, গত কিছুদিন বাংলাদেশ দলের জন্য মহা দুশ্চিন্তার চার নম্বর পজিশনটা তাঁরই প্রাপ্য। সেটি টিম ম্যানেজমেন্ট বুঝলেও মাহমুদউল্লাহর নিজেরই ওপরে ব্যাট করায় আপত্তি ছিল বলে শোনা যায়। এবার যদি তিনি দলের ভালোর সঙ্গে নিজের ভালোটাও বোঝেন।
প্রায় আড়াই বছর পর বাংলাদেশ দলে ফেরা অলক কাপালি ১৩ রানেই শেষ হয়ে না গেলে পরাজয়ের মধ্যেও ম্যাচটাতে আলোর ঝলকানিটা আরও তীব্র হতো। বোলিংয়ে আরও কিছু করতে পারতেন কি না, সেটি যে জানা গেল না সেই দায় অবশ্য অলকের নয়। ২ ওভারে ৮ রান দেওয়ার পরও তাঁকে আর বোলিং করাননি অধিনায়ক।
পয়লা বৈশাখের আবাহনের দিনে অস্ট্রেলিয়ার ইনিংসের শুরুটাও ছিল কালবৈশাখীর মতো। ৮ ওভারেই ওয়াটসন ও পন্টিংয়ের ৮০ রান। বোলাররা বল ফেলার জায়গা পাচ্ছেন না এমন অবস্থা। এই অবস্থায় পরিত্রাণের একমাত্র উপায় উইকেট তুলে নেওয়া। তা নিয়েই একটু স্বস্তিতে ফেরা গিয়েছিল। হাসি আর জনসনের ৭০ রানের ঝোড়ো জুটিটি খুব দ্রুতই কেড়ে নিয়েছে সেই স্বস্তি। তিন ম্যাচে তিন সেঞ্চুরি অস্ট্রেলিয়ার। ক্লার্ক ও ওয়াটসনের পর হাসি। চার বছরের মধ্যে তাঁর প্রথম ওয়ানডে সেঞ্চুরি।
জনসনের ২৪ বলে ৪১। পরে ৩ উইকেট। মাশরাফি ব্যাটিংয়েরই সুযোগ পাননি, তবে বোলিংয়ে দুজনের মধ্যে অনেক মিল। দুজনই ওয়ানডেতে ১৫০তম উইকেট পেলেন এই ম্যাচে। উইকেটও ৩টি করে। রান খরচেও কাছাকাছি। ৯ ওভারে জনসন ৬৭। মাশরাফি ৮০। প্রথম স্পেলের ৪ ওভারে ৪৩ রান দেওয়ার পর ব্যাটিং পাওয়ার প্লেতে মাশরাফির বোলিংকে মনে হচ্ছিল দুর্দান্ত প্রত্যাবর্তন। কিন্তু ৩ ওভারের দ্বিতীয় স্পেলের প্রথম ১৫ বলে ৭ রান দেওয়ার পর শেষ তিন বলে দিয়ে ফেললেন ১৬ রান। এখানেও জনসন—৪ ৬ ৬।
বাংলাদেশ আক্ষেপ করলে বোলিং নিয়েই করতে পারে। ব্যাটিংকে বলতে হবে গত কিছুদিনের মধ্যে সেরা। পরে ব্যাটিং করে অল্পের জন্য না পারলে ২০-২৫টা রান বেশি দিয়ে ফেলার আক্ষেপ থাকে। এখানে আক্ষেপটা ৬০-৬৫ রানের। এ কারণেই ২৯৫ রান করেও কপালে বড় পরাজয়!

Thursday, April 7, 2011


শুভাগত হোম চৌধুরীর জন্য এই ম্যাচটা নিজেকে চেনানোর। অলক কাপালির জন্য ঔজ্জ্বল্য ফিরিয়ে আনার। বিসিবি একাদশের হয়ে ফতুল্লা স্টেডিয়ামে আজ অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে প্রস্তুতি ম্যাচটা দুই রকম হয়ে ধরা দিচ্ছে দুজনের কাছে।
অলক আশাবাদী, এই ম্যাচ তাঁকে দেবে আত্মবিশ্বাস, ‘অনেক দিন পর কোনো আন্তর্জাতিক দলের বিপক্ষে খেলব। এখানে ভালো করে ওয়ানডের দলে জায়গা করে নিতে চাই। চেষ্টা করব নিজের খেলাটা খেলতে। যেসব ভুলত্রুটি ধরা পড়বে, সিরিজে খেলার সুযোগ পেলে সেগুলো শুধরে নেব।’ শুধু ব্যাটসম্যান হিসেবেই নয়, আজকের ম্যাচে লেগ স্পিনার হিসেবেও অবদান রাখতে চান আড়াই বছর পর জাতীয় দলে ফেরা অলক, ‘আমি চেষ্টা করব, বোলিংটাও ভালো করতে। বোলিং-ব্যাটিং দুই ভাবেই অবদান রাখতে চাই।’
জাতীয় দলে খেলার আশা ছিল। তবে অস্ট্রেলিয়া সিরিজেই যে দলে ডাক পেয়ে যাবেন, সে আশা করেননি। দলে নবাগত শুভাতগত হোম তবু নিজেকে প্রমাণ করার ব্যাপারে আশাবাদী, ‘সিরিজে খেলার সুযোগ পেলে ভালো কিছু করার চেষ্টা করব। এই কয়েক বছর অন্যান্য জায়গায় যেভাবে খেলে এসেছি সেভাবেই খেলার চেষ্টা করব।’ শুভাগতের এই মিশনটা শুরু হয়ে যাচ্ছে আজ থেকেই।
প্রস্তুতি ম্যাচটা চ্যালেঞ্জ রকিবুল হাসানের জন্যও। ঘরোয়া ক্রিকেটে টুকটাক অধিনায়কত্ব করলেও কোনো বিদেশি দলের বিপক্ষে যে এই প্রথম নেতৃত্বের সুযোগ পেলেন তিনি!

Monday, March 28, 2011

 দলে ফিরলেন অলক-মাশরাফি, বাদ আশরাফুল-জুনায়েদ

দেশের মাটিতে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে একদিনের সিরিজের জন্য দল ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। আজ রোববার এ দল ঘোষণা করা হয়।
দল থেকে বাদ পড়েছেন মোহাম্মদ আশরাফুল ও জুনায়েদ সিদ্দিক। এ ছাড়া দলে নেই নাঈম ইসলাম ও নাজমুল হোসেন।
১৪ সদস্যের দলে ফেরাদের তালিকায় আছেন মাশরাফি বিন মুর্তজা ও অলক কাপালি। তবে দলে ডাক পেলেও মাশরাফি অস্ট্রেলিয়া সিরিজে খেলবেন কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে। দলে আছেন শুনে তিনি বলেছেন, ‘আমি দেড় মাস প্র্যাকটিসে নেই। ফিটনেসের কী অবস্থা জানি না। স্ত্রী অসুস্থ থাকায় তাকে নিয়েই ব্যস্ত বেশি। নির্বাচকদের বলেছি, অনুশীলনে গিয়ে যদি নিজেকে ফিট মনে হয় তাহলেই শুধু অস্ট্রেলিয়া সিরিজে অবশ্যই খেলব। নয়তো সরে দাঁড়াব।’
দলে জুনায়েদকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে নতুন মুখ ডানহাতি ব্যাটসম্যান শুভাগত হোমকে। গত প্রিমিয়ার ক্রিকেট লিগে সিসিএসের হয়ে ১৬ ম্যাচে ৪৭৬ (গড় ৩১.৭৩) রান করে সর্বোচ্চ রান করাদের তালিকায় সপ্তম স্থানে ছিলেন ডানহাতি এই ব্যাটসম্যান।
দক্ষিণ আফ্রিকা সফরের জন্য ঘোষিত ‘এ’ দলে ছিলেন শুভাগত। তাঁকে জাতীয় দলে এনে জুনায়েদকে করা হলো ‘এ’ দলের সহ-অধিনায়ক।
বাংলাদেশ দল: সাকিব আল হাসান (অধিনায়ক), তামিম ইকবাল (সহ-অধিনায়ক), মাশরাফি বিন মুর্তজা, ইমরুল কায়েস, শাহরিয়ার নাফীস, রকিবুল হাসান, অলক কাপালি, শুভাগত হোম, মুশফিকুর রহিম, মাহমুদউল্লাহ, আবদুর রাজ্জাক, মোহাম্মদ সোহরাওয়ার্দী, রুবেল হোসেন ও শফিউল ইসলাম। স্ট্যান্ডবাই: নাজমুল হোসেন।
আগামী ৯ এপ্রিল থেকে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে তিন ম্যাচের সিরিজটি শুরু হচ্ছে।

Saturday, March 26, 2011

 সেমিফাইনালে উপমহাদেশের তিন প্রতিনিধি

পাকিস্তান, ভারতের পর শ্রীলঙ্কা। ইংল্যান্ডকে তছনছ করে শ্রীলঙ্কা সেমিফাইনালে উঠে যাওয়ায় বিশ্ব ক্রিকেটের ইতিহাসে নতুন অধ্যায় যোগ হলো। শেষ চারের লড়াইয়ে এই উপমহাদেশের প্রতিনিধিই তিনটি। বিশ্বকাপ ক্রিকেটের ইতিহাসে এমন ঘটনা এবারই প্রথম!
১৯৭৫ থেকে বিশ্বকাপের শুরু। এবারের আসরটা দশম। এর আগে সেমিফাইনালের লড়াইয়ে সর্বোচ্চ দুটি করে প্রতিনিধি ছিল মোট চারটি আসরে। এই তালিকায় একটা মিলও খুঁজে পাবেন আপনি। ১৯৮৩ আর ১৯৮৭ সালের আসরের কথাই ধরুন। ওই দুই আসরে উপমহাদেশের প্রতিনিধিত্ব করেছিল ভারত ও পাকিস্তান। আর ১৯৯৬ ও ২০০৩ সালের শেষ চারের লড়াইয়ে উপমহাদেশের প্রতিনিধিত্ব করেছিল ভারত ও শ্রীলঙ্কা।

 উদ্বোধনী জুটিতেই শেষ চারে শ্রীলঙ্কা

সেই ১৯৭৫ সালে শুরু। ৩৬ বছরেও বিশ্বকাপ বন্ধ্যাত্ব ঘোচা হলো না ইংল্যান্ডের! গত বিশ্বকাপে বিদায় হয়েছিল সুপার এইট থেকে। এবার অ্যান্ড্রু স্টাউসরা স্বপ্ন দেখছিলেন ইতিহাস নতুন করে লেখার। কিন্তু চার বছর পরও ভাগ্যের চাকা থামল ওই আগের জায়গাতেই। কোয়ার্টার ফাইনাল থেকেই আজ ইংলিশদের বিদায় করে সেমিফাইনালে উঠে গেছে শ্রীলঙ্কা।
সেঞ্চুরি করলেন দুই উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান তিলকরত্নে দিলশান ও উপুল থারাঙ্গা। জয়টাও উদ্বোধনী জুটিতেই! কলম্বোয় আজকের ১০ উইকেটের জয় ফাইনালে ওঠার লড়াইয়েও লঙ্কানদের পাথেয় হয়ে থাকবে। ২৯ মার্চ নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সেমিফাইনালের লড়াইটা যে হবে এখানেই!
সেমিফাইনালের টিকিট পেতে চাই ২৩০ রান। চেনাজানা কন্ডিশনে লক্ষ্যটা খুব বেশি কঠিন ছিল না। তাই বলে এত সহজে! শ্রীলঙ্কার কেউ এমন একটা জয় কখনো কল্পনাও করেছেন কি না, সন্দেহ আছে। যা কল্পনাতেও আসার মতো নয়, সেটিই বাস্তবে করে দেখিয়েছেন তিলকরত্নে দিলশান ও উপুল থারাঙ্গা।
শ্রীলঙ্কার জয়ের প্রাথমিক কাজটা করে দিয়েছেন বোলাররা ইংল্যান্ডকে মাত্র ২২৯ রানে আটকে দিয়ে। দলীয় ৩১ রানেই দুই উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান সাজঘরে। ইংলিশদের প্রাথমিক বিপর্যয় কাটে জোনাথন ট্রট ও রাভি বোপারার ৬৪ রানের জুটিতে। ট্রট ও এউইন মরগানের হাফ সেঞ্চুরিতে শেষ পর্যন্ত ইংল্যান্ডের সংগ্রহ দাঁড়ায় ৬ উইকেটে ২২৯ রান। কিন্তু শ্রীলঙ্কার মতো দলের বিপক্ষে এ রান যে মামুলি, তা ইংলিশদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছেন দিলশান ও থারাঙ্গা।
সংক্ষিপ্ত
ইংল্যান্ড ২২৯/৬ (৫০ ওভার)
ট্রট ৮৬, মরগান ৫০
মুরালি ৫৪/২
শ্রীলঙ্কা ২৩১/০ (৩৯.৩ ওভার)
দিলশান ১০৮* , থারাঙ্গা ১০২*

পারল না দক্ষিণ আফ্রিকা, সেমিফাইনালে নিউজিল্যান্ড

ম্যাচের আগে তারা ছিল নিরঙ্কুশ ফেবারিট। মিরপুরের আকাশে বাতাসে যেন নিরুচ্চারে জয়ধ্বনি ছড়িয়ে পড়েছিল দক্ষিণ আফ্রিকার। সেমিফাইনালে খেলবে বলে কলম্বোর টিকিট পর্যন্ত কেটে রেখেছিল তারা। কিন্তু রাত দশটায় মিরপুরে ছড়িয়ে পড়ল গ্রায়েম স্মিথদের নীরব কান্না। মাত্র ২২১ রানের পুঁজি নিয়েই ৪৯ রানে জিতে গেল নিউজিল্যান্ড। সেই নিউজিল্যান্ড যারা এই মাঠেই পাঁচ মাস আগে বাংলাদেশের কাছে হয়েছে ‘ধবলধোলাই’। জয়ের জন্য ২২২ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে গিয়ে ৪৩.২ ওভারে ১৭২ রানে গুটিয়ে গেল পরাক্রমশালী দক্ষিণ আফ্রিকা। লড়াইটাকে শেষ পর্যন্ত হাড্ডাহাড্ডিও বলা যাচ্ছে না। কিন্তু যা নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে, তা হলো দক্ষিণ আফ্রিকা সেই ‘চোকার্স’ই থেকে গেছে। আসল পরীক্ষার সামনে বুক চিতিয়ে দাঁড়াতে পারে না তারা পালিয়ে যায়।
বাংলাদেশ নেই। তার পরও খেলা শুরু হওয়ার অল্প সময়ের মধ্যে ভরে গেল গ্যালারি। জেসি রাইডার বাউন্ডারি মারছেন তাতেও হাততালি, ডেল স্টেইন উইকেট নিচ্ছেন তাতেও হাততালি। বাংলাদেশে বিশ্বকাপের শেষ ম্যাচে দর্শক দেখাল, তারা আসলেই ক্রিকেটপিয়াসী। বাংলাদেশ নেই তো কী হয়েছে, মাঠে তো ক্রিকেটই হচ্ছে!
মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে হওয়া আগের কোয়ার্টার ফাইনালাটা, কিংবা ওয়েস্ট ইন্ডিজ আর দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে বাংলাদেশ দলের দুটি ম্যাচ দর্শকদের চূড়ান্ত হতাশা ‘উপহার’ দিয়েছে। এই তিন ম্যাচ দেখে যদি কেউ কোনো ধরনের ক্রিকেটীয় আনন্দ পেয়ে থাকেন, তিনি অবশ্যই সর্বোচ্চ ব্যতিক্রম। সে তুলনায় কাল কিছুটা ক্রিকেট তো অবশ্যই হয়েছে। মাত্র ১৬ রানে দুই ওপেনার মার্টিন গাপটিল আর ব্রেন্ডন ম্যাককালামকে হারিয়েও নিউজিল্যান্ডের ম্যাচে থাকাটা আরেকবার হতাশ হওয়া থেকে বাঁচিয়েছে দর্শকদের।
অক্রিকেটীয় কর্মকাণ্ডের সঙ্গে ধুন্ধুমার ব্যাটিংয়ের জন্য রাইডারকে এ দেশের মানুষও চেনে। ব্যাট হাতে তাঁর উইকেটে আসার পর সে কারণেই হয়তো নেচে উঠেছিল গ্যালারির একাংশ। হতাশ করেননি রাইডার।্র১২১ বলে ৮৩ রানের ইনিংসে ওরকম মারমার কাটকাট ব্যাটিং না হলেও ১৬ রানে ২ উইকেট পড়ে যাওয়া ম্যাচে ওটাই বিনোদনের খোরাক হলো। তৃতীয় উইকেটে রস টেলরের সঙ্গে ১১৪ রানের জুটি। তাতে নিউজিল্যান্ড বোলাররা অল্প হলেও যেমন লড়াইয়ের রসদ পেল, নিখাদ ক্রিকেটীয় বিনোদন পেতে আসা দর্শকদের থলেটাও খালি থাকল না। অন্তত দক্ষিণ আফ্রিকা ব্যাটিংয়ে নামার আগ পর্যন্ত একটা জমাট কোয়ার্টার ফাইনালের আশা সবার মনেই ছিল। ক্রিকেট মানে চূড়ান্ত অনিশ্চিত একটা ব্যাপার। ২২১ রানের ম্যাচেও তো কত কিছুই হতে পারে!
দক্ষিণ আফ্রিকা ২ উইকেটে ১০৮ রানে পৌঁছে যাওয়ায় মনে হচ্ছিল, ক্রিকেটীয় অনিশ্চয়তা বোধ হয় নির্বাসনে চলে গেছে। কিন্তু ১৩ রানের মধ্যে ৩ উইকেট পড়ে যাওয়ার পর ম্যাচ হঠাৎই দোদুল্যমান। ‘চোকার্স’ শব্দটা আবারও দক্ষিণ আফ্রিকার সঙ্গী হয়ে যায় কি না, শুরু হয়ে গেল এই আলোচনাও।
রাইডার ৮৩, টেলর ৪৩, স্টাইরিস ১৬ আর উইলিয়ামসন ৩৮—নিউজিল্যান্ড ইনিংসে দুই অঙ্কের রান আর কেবল অতিরিক্ত ১৪! ১৬ রানে ২ উইকেট পড়ে যাওয়ার পর রাইডার ও টেলর মিলে ১১৪ রানের জুটি নিউজিল্যান্ডকে ভালো একটা ভিত্তি দিয়েছিল। কিন্তু এর পরই উচ্চাভিলাষী শট নিতে গিয়ে নিউজিল্যান্ড ইনিংসের পতন।
২২২ রানের টার্গেট ছুঁতে অবশ্য খুব বেশি শট খেলার প্রয়োজন ছিল না। কিন্তু দক্ষিণ আফ্রিকার আসল প্রতিপক্ষ তো নিউজিল্যান্ড ছিল না, ছিল চিরন্তন সেই দুর্বলতার জায়গাটা। নিস্তরঙ্গ মনে হতে থাকা ম্যাচে তাই হঠাৎই তুমুল উত্তেজনা। ‘চোকার্স’ শব্দটা দ্রুত এসে জড়িয়ে ধরল স্মিথদের।

Saturday, March 12, 2011

দুটি ম্যাচই জিততে আত্মবিশ্বাসী সাকিব:

অনিশ্চয়তায় পড়েছিল বাংলাদেশের কোয়ার্টার ফাইনাল খেলার স্বপ্ন। ইংল্যান্ড হারানোয় সেই আশঙ্কা অনেকটাই কেটে গেছে। হল্যান্ডের বিপক্ষে অনুষ্ঠেয় ম্যাচে জয় আসাটা প্রত্যাশিত। সঙ্গে দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারাতে পারলে তো কথাই নেই। হারলেও শেষ আটে যাওয়ার সম্ভাবনা শেষ হয়ে যাবে না। নির্ভর করবে অন্য দলের খেলার উপর। তবে কারও দিকে তাকিয়ে থাকা নয়, দুটি ম্যাচে জিতেই কোয়ার্টার ফাইনালে যেতে আত্মবিশ্বাসী অধিনায়ক সাকিব আল হাসান।
‘আমাদের আরও দুটি ম্যাচ রয়েছে। দুটি জিতলে কোন কথা নেই। একটিতে হারলে তাকিয়ে থাকতে হবে অন্য দলের উপর। কিন্তু দুটি ম্যাচ জিতেই কোয়ার্টার ফাইনালে যেতে চাই আমরা’—ম্যাচ পরবর্তী পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে বলেন সাকিব আল হাসান।
১৬৯ রানে ৮ উইকেট পড়ে যাওয়ার পরও জয়। তাত্ক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় যেন বিশ্বাস হচ্ছিল না অধিনায়ক সাকিবেরও, ‘আমি তো ভেবেছিলাম হেরে গেছি। শফিউল ও মাহমুদউল্লাহ অবিশ্বাস্য ব্যাটিং করে আমাদের জয় এনে দিয়েছে।’

 টাইগারদের জয়:

আশরাফুলের জায়গায় দলে এসেই ম্যাচজয়ী ইনিংস। দল তো বটেই, সঙ্গে মাহমুদউল্লাহ যেন জয়ী ঘোষণা করলেন নি�অনেকটা ঘোষণা দিয়েই জয়! ওয়েস্ট ইন্ডিজের কাছে বড় হার। নিজেদের ওয়ানডে ইতিহাসে সর্বনিম্ন ৫৮ রানে অল আউট হওয়ার গ্লানি। সব হতাশা পেছনে ফেলে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ঘুরে দাঁড়ানোর প্রত্যয় ছিল টাইগারদের। চট্টগ্রামে সেই প্রত্যয়কে বাস্তবতায় রূপ দিয়ে সমর্থকদের ২ উইকেটের জয় উপহার দিলেন টাইগাররা।
বোলাররা ইংল্যান্ডকে গুটিয়ে দেন ২২৫ রানে। ৬০ রানের নজরকাড়া ইনিংস খেললেন ইমরুল কায়েস। তামিম ইকবাল, সাকিব আল হাসান এনে দিলেন যথাক্রমে ৩৮ ও ৩২ রান। শফিউল ইসলাম আর মাহমুদউল্লাহ অপরাজিত থাকেন যথাক্রমে ২৪ ও ২১ রানে। সংখ্যাতাত্ত্বিক বিবেচনায় পিছিয়ে, তবু ‘ইংলিশ বধ’ কাব্যের রচয়িতা শফিউল ইসলাম আর মাহমুদউল্লাহই!
৩০ ওভার শেষে সংগ্রহ ছিল তিন উইকেটে ১৪৯। কিন্তু দলীয় ১৫৫ রানে ইমরুল কায়েসের বিদায়ের পরই হঠাত্ বিপর্যয়। ১৬৯ রানের মাথায় নেই বাংলাদেশের অষ্টম উইকেট। কিন্তু ইংল্যান্ডের প্রাপ্তি বলতে এতটুকুই!
আর কোন উইকেটের দেখা পায়নি ইংলিশ বোলাররা। একইভাবে বলতে হয়, কোন উইকেট শিকার করতে দেননি মাহমুদউল্লাহ আর শফিউল ইসলাম। এ দুজনের অবিচ্ছিন্ন ৫৮ রানের জুটিই যে এক ওভার বাকি থাকতেই জয় এনে দেয় বাংলাদেশকে!
দলীয় ৩২ রানে প্রথম, আর ৫৩ রানে তৃতীয় উইকেটের পতন ইংল্যান্ডের। এর পর ট্রট ও এউইন মরগানের ১০৯ রানের জুটি। ব্যক্তিগত ৬৩ রানে নাঈম ইসলামের শিকারে পরিণত হন মরগান। ৬৭ রানে থাকা জোনাথন ট্রটকে ফেরান সাকিব।
ব্যতিক্রম ছিলেন এই মরগান ও ট্রট। এ দুজন ছাড়া বাংলাদেশের দুর্দান্ত বোলিং, ফিল্ডিংয়ের কাছে অসহায়ত্ব প্রকাশ করেছেন ইংলিশ ব্যাটসম্যানদের সবাই। যার পরিণতি, দুই বল বাকি থাকতেই ইনিংস শেষ। দিবা-রাত্রির এই ম্যাচে টস জিতে ফিল্ডিং নেন সাকিব আল হাসান। দ্রুত তিনটি উইকেট তুলে নিয়ে অধিনায়কের সিদ্ধান্তের যথার্থতা এনে দেন বোলাররা। নাঈম ইসলাম, আবদুর রাজ্জাক ও সাকিব প্রত্যেকে দুটি করে উইকেট শিকার করেন।

Monday, March 7, 2011

 সাকিব আল হাসান লিখছেন এখনো সব শেষ হয়ে যায়নি


একে তো ম্যাচটা ওভাবে হারলাম, তার ওপর হারের পর সবার যে রকম প্রতিক্রিয়া দেখলাম, তারপর রাতটা খুব ভালো কেটেছে বলব না। তবে সকালে ঘুম থেকে উঠে মন ভালো হয়ে গেছে। ছাত্র বয়সী একদল সমর্থক হোটেলে ফুল নিয়ে এসেছিল আমার সঙ্গে দেখা করতে। আগের রাতে দর্শকদের আচরণের জন্য তারা দুঃখ প্রকাশ করল এবং দুঃসময়েও বাংলাদেশ দলের প্রতি অব্যাহত সমর্থন দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিল।
বাংলাদেশে আসলে দুই ধরনের দর্শক-সমর্থকই আছে। আমি বলব, যারা খারাপ সময়েও আমাদের পাশে থাকে, তারাই প্রকৃত সমর্থক। খেলায় উত্থান-পতন থাকবে। ভালো সময়ে হাততালি দেবেন, আর খারাপ সময়ে গালাগাল করবেন, ইট-পাথর ছুড়বেন, তাহলে আপনি কেমন সমর্থক?
ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ম্যাচ হারার পর কিছু দর্শক খুব উচ্ছৃঙ্খল আচরণ করেছে। অনেকে ক্রিকেটারদের উদ্দেশে অশোভন মন্তব্য করেছে। ওয়েস্ট ইন্ডিজ খেলোয়াড়দের বাসে ঢিল মারার মতো কাজও করেছে কেউ কেউ। আমার ধারণা, এসব যারা করে, তাদের বেশির ভাগেরই ক্রিকেট সম্পর্কে পুরো ধারণা নেই। তারা বোঝে শুধু জয়-পরাজয়। কাজেই তাদের এই আচরণ নিয়ে আমাদের কোনো আফসোসও নেই। আপনি যতই বলুন, এসব তাদের দিক থেকে হতেই থাকবে। সুতরাং এই প্রতিক্রিয়াকে আমরা পাত্তা দিতে চাচ্ছি না। দুনিয়ায় ভালো-খারাপ মিলিয়েই মানুষ। সকালে ফুল নিয়ে যারা এসেছে, এ রকম ভালো মানুষও তো এ দেশে আছে!
শিক্ষিত কিংবা রুচিশীল মানুষ বা যাঁরা কাজের মধ্যে থাকেন, তাঁদের কষ্টের প্রকাশ কখনো এমন দুঃখজনক হতে পারে না। আমরা খারাপ খেললে তাঁদেরও খারাপ লাগে। কিন্তু সেই খারাপ লাগাটা তাঁরা এভাবে প্রকাশ করেন না। তাঁরা বরং আমাদের কষ্টটা বুঝতে চেষ্টা করেন। বাংলাদেশ দল খারাপ খেললে মানুষ কষ্ট পায়, আমরা কি আনন্দে থাকি? সবচেয়ে বেশি কষ্ট যে আমাদেরই, সেটা অনেকেই বুঝতে চায় না।
সবচেয়ে খারাপ লাগে, যখন দেখি জাতীয় দলের সাবেক ক্রিকেটাররাও আর দশজন সাধারণ দর্শকের মতো কথা বলেন। তাঁরা অনেক বোঝেন, অনেক খেলেছেন, এ রকম পরিস্থিতিতেও অনেকবারই পড়েছেন। তাঁদের কথাগুলোই তাই বেশি হতাশাজনক। একটা জিনিস অন্তত তাঁদের চিন্তা করা উচিত, তাঁরা কী ক্রিকেট খেলে এসেছেন। আমি চাই না কাউকে ছোট করতে। তবে কে কত দূর খেলে এসেছেন, সেটা রেকর্ড ঘাঁটলেই পাওয়া যায়। আমরা জানি, কার কেমন রেকর্ড আছে, কারা কোন ক্রিকেট খেলে এসেছেন, কী ধরনের ক্রিকেট খেলে এসেছেন। এটা স্বীকার করি, তাঁরা ওই সময় শুরু না করলে আমরা হয়তো আজ এই পর্যন্ত আসতে পারতাম না। তবে আমার মনে হয় না, বাংলাদেশে এমন কোনো ক্রিকেটার আছেন, যিনি এ রকম বাজে পরিস্থিতিতে পড়েননি। গত টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের পর এই প্রথম আমরা এমন একটা পরিস্থিতিতে পড়লাম। আমরা দু-তিন বছরে একদিন যে পরিস্থিতিতে পড়ছি, আমাদের তো মনে হয়, তাঁরা প্রায়ই সে রকম পরিস্থিতিতে পড়তেন! ভালো পরিস্থিতির দেখা পেতেন মাঝেমধ্যে। কাজেই সবারই বোধ হয় একটু বুঝেশুনে কথা বলা উচিত। তবে সব সাবেক ক্রিকেটারই যে এমন বলছেন, তা নয়। অনেকে আমাদের দিকে সমর্থনের হাতও বাড়িয়ে দিচ্ছেন। এই সমর্থন আমাদের কাছে মহার্ঘ্য।
আমার কাছে ১ রানে হারলে যা, ১০০ রানে হারলেও তা, ১০০০ রানে হারলেও তা-ই। হার হারই, জয় জয়ই। আমি কোনো পার্থক্য দেখি না। তার পরও ৫৮ রানে অলআউট হওয়ার পর দলের সবার মনই খারাপ ছিল। ড্রেসিংরুমে, হোটেলে সবাই সবাইকে সান্ত্বনা ও সাহস দেওয়ার চেষ্টা করেছি। এখনো তো সব শেষ হয়ে যায়নি—সামনে তিনটি ম্যাচ আছে। কোচও আমাদের সঙ্গে কথা বলেছেন। পরের ম্যাচগুলোতে ভালো খেলার জন্য অনুপ্রাণিত করার চেষ্টা করছেন। তিনটি ম্যাচের মধ্যে দুটো জিতলেও পরের রাউন্ডে যাওয়ার ভালো সুযোগ থাকবে। খেলার আগেই তাই হেরে বসা যাবে না। আমরা জানি, ভালো ক্রিকেট খেলার সামর্থ্য আমাদের আছে। একটা ম্যাচ খারাপ হলেও ওটা নিয়ে এত চিন্তার কিছু নেই।
অনেকে বলছেন, সেদিন নাকি আমাদের কোনো পরিকল্পনাই ছিল না! এটা কি সম্ভব? কেউ কি কোনো দিন পরিকল্পনা ছাড়া খেলতে নামে? হ্যাঁ, হতে পারে আমাদের পরিকল্পনাটা কাজে লাগেনি। তবে আট নম্বর ব্যাটসম্যান উইকেটে থাকা পর্যন্তও আমার মনে হয়েছে হয়তো একটা জুটি হবে, মোটামুটি একটা রান দাঁড়াবে। ওয়েস্ট ইন্ডিজ বোলাররা খুব অসাধারণ বোলিং না করলেও ভালো জায়গায় বল ফেলেছে। ওরা খুব দৃঢ়প্রতিজ্ঞও ছিল। আর আমরা নিজেদের প্রয়োগ করার দিক দিয়ে ঠিক উল্টো। ভালো ব্যাটিং করিনি, ভালো ক্রিকেট খেলিনি।
তবে আবারও বলি, এখনো সব শেষ হয়ে যায়নি। আমাদের এখন প্রথম কাজ পরের ম্যাচটাতে ভালো ক্রিকেট খেলা। তারপর যা হওয়ার হবে।

Saturday, March 5, 2011

দুঃস্বপ্নের এক দিন


৫৮! ৫৮!! ৫৮!!! 
শুধুই একটা সংখ্যা।
শুধুই একটা সংখ্যা!
এই ৫৮ শুধুই একটি সংখ্যা নয়। নিদারুণ স্বপ্নভঙ্গের একটা গল্প লেখা এতে। দুঃখ আছে, হতাশা আছে, একটু লজ্জাও বোধ হয় মিশে আছে এই ৫৮-তে। বিশ্বকাপের আলোয় ঝলমলে বাংলাদেশে একটু কি আঁধারও নামিয়ে আনল এই ৫৮!
ক্রিকেটে মাঝেমধ্যে এমন কিছু দিন আসে, যেটির কোনো ব্যাখ্যা মেলে না। ব্যাটিং-বোলিংয়ের সীমানা ছাড়িয়ে যা পৌঁছে যায় অব্যাখ্যনীয় রহস্যময়তায়। কাল মিরপুর স্টেডিয়ামে নেমে এল তেমনই একটা দিন। স্বপ্নের মায়াঞ্জন চোখে ঘুম ভেঙেছিল যে দিনটির, বিকেল আসতে আসতে স্বপ্নভঙ্গের বেদনায় কাতর নিকষ কালো হয়ে গেল সেটিই।
৫৮! ৫৮!! ৫৮!!! ওয়ানডেতে একটা দল কীভাবে ৫৮ রানে অলআউট হতে পারে! বিস্ময়চিহ্নগুলো থাকুক, তবে ঘটনা এটাও যে ওয়ানডেতে ৩৫ রানে ইনিংস শেষ হয়ে যাওয়ার ঘটনাও আছে। কাল বাংলাদেশের ৫৮, ওয়ানডেতে তো নয়ই, বিশ্বকাপেরও সর্বনিম্ন স্কোর নয়। বিশ্বকাপে এর চেয়েও ছোট স্কোর আছে আরও তিনটি। তবে বাংলাদেশের কপালে ঠিকই লজ্জার তিলক এঁকে দিল একটা ‘রেকর্ড’—বিশ্বকাপে কোনো টেস্ট খেলুড়ে দেশের সর্বনিম্ন স্কোর এটাই।
বিশ্বকাপে বাংলাদেশের সর্বনিম্ন স্কোর—এটা তো না বললেও চলছে (আগের সর্বনিম্ন ১০৮, বিপক্ষ দক্ষিণ আফ্রিকা, ব্লুমফন্টেইন, ২০০৩)। ওয়ানডেতেই বাংলাদেশের ব্যাটিংয়ের করুণতম গল্প এই ৫৮। ২০০৮ সালে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ডারউইনে ৭৪ রানকেও যা অনেক ‘ভালো’ মনে করাচ্ছে!
প্রত্যাশার সঙ্গে চরমতম প্রতারণার গল্পও এই ৫৮। বিশ্বকাপের গ্রুপিং হওয়ার পরই বাংলাদেশ পাখির চোখ করেছিল এই ম্যাচটাকে। ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেট অনেক দিন ধরে নামছে তো নামছেই। মাঝখানে ওদের মাটিতে ওদের হোয়াইটওয়াশ করে এসেছে বাংলাদেশ। বিশ্বকাপ আসতে আসতে ওয়ানডে র্যাঙ্কিংয়েও বাংলাদেশ পেছনে ফেলে দিয়েছে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে। এই ম্যাচের আগে ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান অধিনায়ক ড্যারেন স্যামিকে তাই ‘বাংলাদেশই ফেবারিট কি না’ এই প্রশ্নেরও উত্তর দিতে হয়েছে। এই একটা ম্যাচ, যেটিতে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই দেখার প্রত্যাশায় তাকিয়ে ছিল বিশ্বকাপ। এই একটা ম্যাচ, যেটির বাংলাদেশকে উৎসবের রঙে রাঙানোর কথা ছিল। সেই ম্যাচ কিনা ৩১.১ ওভারেই শেষ!
সেটিও তো ৫৯ রান করতেই ওয়েস্ট ইন্ডিজ ১২.২ ওভার লাগিয়ে ফেলল বলে। বাংলাদেশের ইনিংস তো ১৯ ওভারও স্থায়ী হলো না! কী ব্যাখ্যা এই ব্যাটিংয়ের? ব্যাখ্যা একটাই—কোনো ব্যাখ্যা নেই। কেমার রোচ নিয়মিতই ১৪৫ কিলোমিটারের আশপাশে বল করেছেন। এমন গতির বল কি বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা আর খেলেননি! ড্যারেন স্যামি একেবারে জায়গামতো বল ফেলেছেন। কিন্তু সেটি কি আর আনপ্লেয়েবল কিছু ছিল! সুলিমান বেন ফ্লাইটের খেলা দেখিয়েছেন। এর চেয়ে অনেক ভালো স্পিনারকেও কি বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা তুলাধোনা করেননি!
ইনিংসের তৃতীয় বলেই তামিম ইকবালের আউট হয়ে যাওয়াটা বড় একটা ধাক্কা ছিল। তাই বলে সেটি তো আর এমন ধাক্কা নয় যে হুড়মুড় করে ভেঙে পড়বে বাংলাদেশের ইনিংস! একজন ব্যাটসম্যানও স্রোতের বিরুদ্ধে বুক চিতিয়ে দাঁড়াতে পারলেন না। উইকেটে যাওয়া-আসার মিছিল দেখে রোচকে মনে হলো ম্যালকম মার্শাল! বেনকে আলফ ভ্যালেন্টাইন! স্যামিকে বোঝাতে কোনো ওয়েস্ট ইন্ডিয়ানের নাম মনে পড়ছে না, ধরে নিন ইংলিশ কন্ডিশনে ব্রায়ান স্ট্যাথাম!
স্যামি করলেন সর্বোচ্চ ৭ ওভার। রোচ ৬, বেন ৫.৫। আর কোনো বোলারকে বলই হাতে নিতে হলো না। ১৮.৫ ওভারে মাত্র ৫৮ রানে কোনো ইনিংস শেষ হয়ে যাওয়ার পর অবধারিতভাবে প্রশ্ন উঠবে উইকেট নিয়ে। এখানে উঠছে না। উইকেটে কোনো জুজু ছিল না। ম্যাচ-উত্তর সংবাদ সম্মেলনে বোলিংয়ের প্রশংসা করতে গিয়ে ড্যারেন স্যামি, ‘এটা যে একেবারেই ফ্লাট উইকেট ছিল’ মনে করিয়ে দিতে ভুললেন না। জানালেন, উইকেট ব্যাটসম্যানদের দিকে তাকিয়ে হাসছিল বলে টসে জিতলে তিনিও প্রথমে ব্যাটিংই করতেন।
৫৮ রানের তাই কোনো ক্রিকেটীয় ব্যাখ্যা নেই। তাহলে কি চাপ? পাহাড়প্রমাণ প্রত্যাশার চাপেই এমন চিড়েচ্যাপ্টা হয়ে গেলেন বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা? নাকি চিরন্তন সেই আপ্তবাক্যেই খুঁজতে হবে কারণ—ক্রিকেটে এমন কিছু দিন আসে, যেটির কোনো ব্যাখ্যা মেলে না। কারণ নিয়ে বিতর্ক থাকতে পারে, তবে সেটির ফল নিয়ে খুব একটা থাকার কথা নয়। বিশ্বকাপ ইতিহাসে জঘন্যতম ব্যাটিং প্রদর্শনীটা সম্ভবত এটাই। সাকিব আল হাসান যথার্থই বলেছেন, শুধু বাংলাদেশের এই দলের নয়, এটা বাংলাদেশ ক্রিকেটের জন্যই ‘ব্যাড ডে’।
‘খারাপ দিন’টা ‘সবচেয়ে খারাপ দিন’-এ পরিণত হলো ম্যাচ শেষ হওয়ার ঘণ্টা দেড়েকের মধ্যেই। সেটির দায় ক্রিকেট দলের নয়। সমর্থকদের আবেগের বাড়াবাড়ির। আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে জয়ের পর যা হয়েছে, সেটি ছিল বাড়াবাড়ি। কালকের বিপর্যয়ের পর যা হলো, সেটি তো অবশ্যই। বাংলাদেশের ইনিংস শেষ হওয়ার আগেই মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে দর্শক। শেষ ২-৩টি উইকেট পড়ার সময় তুমুল করতালি উঠেছে গ্যালারি থেকে। মাঠে ঢিল-টিলও পড়েছে। অগ্রহণযোগ্য হলেও প্রত্যাশাভঙ্গের নিদারুণ হতাশায় তা-ও সেটির একটা ব্যাখ্যা পাওয়া যায়। কিন্তু খেলা শেষে যা হলো, সেটির কী ব্যাখ্যা?
ওয়েস্ট ইন্ডিজের টিম বাসের কাচ ভাঙল ঢিলে। বাস থেকে ক্রিস গেইলের টুইট মুহূর্তেই ক্রিকেট-বিশ্বে ছড়িয়ে দিল সেই খবর। বিশ্বকাপের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানকে ঘিরে উৎসবমুখর জনতা ক্রিকেট-বিশ্বে অন্য আলোয় আলোকিত করেছিল বাংলাদেশকে। আর কাল ক্রিস গেইল টুইটারে লিখলেন, তিনি এই দেশে আর এক মুহূর্তও থাকতে চান না।
এটি বোধ হয় ৫৮ রানে অলআউট হওয়ার চেয়েও অনেক বড় লজ্জা।

Monday, February 28, 2011

জয় ক্রিকেটের


গোটা গ্যালারিতে তখন উৎকণ্ঠা। টিভি পর্দায় যারা খেলা দেখছিলেন, উৎকণ্ঠার কমতি ছিল না তাদেরও। শেষ তিন বলে ইংল্যান্ডের চাই ৫ রান। অতিরিক্ত থেকে একটি রান নিলেন আজমল শেহজাদ। পরের বলে দুটি রান নিলেন সোয়ান। শেষ বলে চাই ২ রান! উৎকণ্ঠা ছাড়িয়ে তখন একটা দম বন্ধ করার মতো পরিবেশ!
জয় যেতে পারে যে কারও ঘরে। যেন ফাঁসির মঞ্চে বোলার মুনাফ প্যাটেল আর ব্যাটসম্যান সোয়ান। মুনাফ যখন শেষ বলটা করতে দৌড়ালেন, তখন সোয়ান উত্তেজনায় নিজের ভেতরে ছিলেন কি না কে জানে! বল ব্যাটে লাগিয়েই দৌড়ালেন সোয়ান, এলো একটি রান। ভারত ৩৩৮, ইংল্যান্ডও ৩৩৮—ম্যাচ টাই, জয় হলো ক্রিকেটেরই!
ক্রিকেট যে সত্যিই ‘অনিশ্চয়তায়’ মোড়ানো খেলা, তা আরেকবার দেখা গেল ব্যাঙ্গালোরে। শচীন টেন্ডুলকার করলেন ১২০ রান। বিশ্বকাপের ইতিহাসে সর্বোচ্চ পাঁচটি সেঞ্চুরি হাঁকানোর কৃতিত্বটা এখন শুধুই তাঁর। শচীনের সেঞ্চুরি মাটি করে দিতে বসেছিলেন অ্যান্ড্রু স্ট্রাউস। খেললেন ১৫৮ রানের এক ‘অবিশ্বাস্য’ ইনিংস। শেষ পর্যন্ত ম্যাচসেরাও হয়েছেন ইংলিশ অধিনায়ক। তবে ভারত হারেনি বলে বিষাদে ডুবতে হয়নি শচীন ভক্তদের।
৩৩৯ রান তাড়া করতে নেমে ৪০ ওভারে ২ উইকেটে ২৭২ তুলে ফেলেছিল ইংল্যান্ড। ৬০ বলে দরকার মাত্র ৬৭ রান। গোটা গ্যালারিতে তখন উৎকণ্ঠা। ম্যাচ যে চলে যাচ্ছে ভারতের নাগালের বাইরে! পরের অংশটুকু ছিল উৎকণ্ঠা আর রুদ্ধশ্বাসের। ম্যাচ যেন এগিয়ে যাচ্ছিল হেলে-দুলে। অবশেষে ম্যাচের সমাধান আসে শেষ বলের নাটকীয়তায়।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
ভারত ৩৩৮/১০ (৪৯.৫ ওভার)
শচীন ১২০, যুবরাজ ৫৮, গম্ভীর ৫১
ব্রেসনান ৪৮/৫
ইংল্যান্ড: ৩৩৮/৮ (৫০ ওভার)
স্ট্রাউস ১৫৮, ইয়ান বেল ৬৯
জহির ৬৪/৩, মুনাফ ৭০/২, চাওলা ৭১/২

Saturday, February 26, 2011

 টাইগারদের প্রতিশোধ


২০০৭ সালের বিশ্বকাপ, এরপর ২০০৯ সালের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ—বিশ্ব আসরে দুই-দুবার আয়ারল্যান্ডের কাছে হার মানতে হয়েছিল টাইগারদের। প্রতিশোধের ম্যাচে ব্যাটসম্যানরা জ্বলে উঠতে পারেননি। তবে বোলারদের হাত ধরে মিরপুরে আজ ঠিকই ‘প্রতিশোধটা’ নিয়ে নিয়েছে বাংলাদেশ।
ব্যাটসম্যানরা ২০৫ রানে অল আউট হওয়ার পর সংশয় জেগেছিল, শেষ পর্যন্ত প্রতিশোধ নেওয়া সম্ভব হবে কি না। তবে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত আইরিশদের যন্ত্রণায় রাখেন শফিউল-সাকিব-আশরাফুলরা। যার পরিণতি, ৪৫ ওভারে ১৭৮ রানে অল আউট আয়ারল্যান্ড। টাইগারদের জয় ২৭ রানের!
পেসার শফিউল ইসলাম একাই চারটি উইকেট নিয়েছেন। বিনিময়ে আইরিশদের দিয়েছেন মাত্র ২১ রান। অধিনায়ক সাকিব আল হাসান ও মোহাম্মদ আশরাফুল শিকার করেন দুটি করে উইকেট। বোলারদের নৈপুণ্যে অসাধারণ জয় এলেও ব্যাটসম্যানদের নিয়ে একটু আক্ষেপ থেকেই যায়।
বাংলাদেশের ইনিংসটা এবার দেখুন—প্রথম পাঁচ ওভারে আসে ৪৯ রান, আর উদ্বোধনী জুটিতে ৫৩। এর পরই ব্যাটিং বিপর্যয়। সর্বোচ্চ ৪৪ রান করেন তামিম ইকবাল। এ ছাড়া রকিবুল হাসান ৩৮ এবং মুশফিকুর রহিম করেন ৩৬ রান। তবে নাঈম ইসলামকে আলাদা করে ধন্যবাদ দিতে হয়। ব্যাটসম্যানদের বিপর্যয়ের মধ্যেও শেষের দিকে এই ব্যাটসম্যানের ২৯ রানের ইনিংসের কল্যাণেই তো ২০০-র ঘর স্পর্শ করে বাংলাদেশ।
বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের সবচেয়ে বেশি কষ্ট দিয়েছেন আয়ারল্যান্ডের আন্দ্রে বোথা। এই বোলার শিকার করেন দলের হয়ে সর্বোচ্চ তিনটি উইকেট। দুটি করে উইকেট নেন জনস্টন ও ডকরেল।

রাজনীতিতে যোগ দেওয়ার ইচ্ছে নেই শেখ রেহানার

বাংলাদেশের আগামী নির্বাচনে প্রার্থী হওয়া কিংবা রাজনীতিতে যোগ দেওয়ার কোনও ইচ্ছে এই মুহূর্তে নেই শেখ রেহানার। তবে পরিবর্তিত রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে প্রয়োজন হলে তিনি নির্বাচনে দাঁড়াতে পারেন। আজ শুক্রবার তিনি কলকাতায় এই কথা বলেন।
বঙ্গবন্ধুর কনিষ্ঠা কন্যা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছোট বোন শেখ রেহানা আজ দক্ষিণ কলকাতার গ্যাঞ্জেস আর্ট গ্যালারিতে বাংলাদেশের চিত্রশিল্পী শাহাবুদ্দিন আহমেদের একক চিত্র প্রদর্শনীর উদ্বোধন করার পর সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এ কথা বলেন। 
শেখ রেহানা বলেন, এই মুহূর্তে তার রাজনীতিতে যোগ দেওয়ার ইচ্ছে নেই। তিনি বলেন, রাজনীতিতে যোগ না দিয়েও নানা সমাজসেবামূলক কাজ করা যায়। তিনি সেই ধরনের কাজেই মনোনিবেশ করতে চান। বড় বোন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপর যেভাবে চাপ বাড়ছে, সেই চাপ তিনি কিছুটা শেয়ার করতে চান কিনা—এ সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তরে রেহানা বলেন, নতুন করে শেয়ার করার কিছু নেই। আর কাজের ব্যাপারে শেখ হাসিনা একাই যথেষ্ট।

Monday, February 21, 2011

পর্দার আড়ালের নায়কেরা


দলকে নিয়ে পরিকল্পনা করেন, প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করতে ফন্দি আঁটেন, দলকে প্রশিক্ষণ ও টেকনিক্যালি সহযোগিতা করেন, দলকে সাফল্যের মুখ দেখাতে কৌশল নির্ধারণ করেন, তিনি খেলেন না খেলান। হ্যাঁ, বলছিলাম কোচদের কথাই। খেলোয়াড়ের পাশাপাশি তারাও দলে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন। আর দলের সফলতা ও ব্যর্থতা অধিকাংশ নির্ভর করে তাদের ওপর। দলকে সাফল্যের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে যান। খেলোয়াড়দের উত্সাহ-প্রেরণা জোগান। দলকে জেতাতে আগে থেকেই রণকৌশল ঠিক করে রাখেন। কোন স্টাইলে ব্যাটিং আর বোলিং করতে হবে, ফিল্ডিং কীভাবে দিতে হবে, কার কোন স্থান পরিবর্তন করতে হবে, কোন বোলার বল করবে, এসব সিদ্ধান্ত নেন মূলত কোচরাই। তবে মাঠে দলনেতা এসব সিদ্ধান্ত প্রয়োগ করেন। পর্দার অন্তরালে থেকে যারা দলকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন তাদের নিয়ে আমাদের আজকের আয়োজন।
টিমোথি জন নেলসন (অস্ট্রেলিয়া)
এবারের বিশ্বকাপে অস্ট্রেলিয়ার কোচ টিমোথি জন নেলসন। গত বিশ্বকাপের পর জন বুকানন কোচের দায়িত্ব ছেড়ে দিলে অস্ট্রেলিয়ার কোচ হিসেবে দায়িত্ব নেন তিনি। বিশ্বচ্যাম্পিয়ন অস্ট্রেলিয়াকে পঞ্চমবারের মতো বিশ্বকাপ শিরোপা এনে দিতে তিনি সেভাবেই তৈরি করেছেন দলকে। জন নেলসন জম্মগ্রহণ করেন ব্রিটেনে ১৯৬৮ সালের ৫ মে। ১৯৯৯ সালে তিনি অবসরে যান। ২০০৭ সালে ৫ ফেব্রুয়ারি জন বুকাননের স্থলাভিষিক্ত হন তিনি।
গ্যারি কারস্টেন (ভারত)
এবারের বিশ্বকাপের হট ফেভারিট ভারত। কোচের দায়িত্বে আছেন দক্ষিণ আফ্রিকার সাবেক খেলোয়াড় গ্যারি কারস্টেন। ৪৩ বছর বয়সী গ্যারি ১৯৬৭ সালে ২৩ নভেম্বর দক্ষিণ আফ্রিকায় জন্মগ্রহণ করেন। প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেটার পল কারস্টেনের ভাই গ্যারি কারস্টেন দক্ষিণ আফ্রিকার হয়ে ১৮৫টি ওয়ানডে ও ১০১টি ম্যাচ খেলেছেন। তিনি দলের হয়ে টেস্টে ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ ২৭৫ রানের রেকর্ড গড়েছিলেন। ২০০৩ সালে ২৭৭ রান করে জ্যাক ক্যালিস এ রেকর্ড ভাঙেন। ২০০৮ সালে তিনি ভারতের কোচের দায়িত্ব নেন।
এন্ডি ফ্লাওয়ার (ইংল্যান্ড)
এন্ডি ফ্লাওয়ার জিম্বাবুয়ের সাবেক খেলোয়াড়। ২০০৭ সালে ইংল্যান্ড দলের গুরুদায়িত্ব নেন। ১৯৬৮ সালে দক্ষিণ আফ্রিকায় তিনি জম্মগ্রহণ করেন। ১৯৯২ সালে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলা শুরু করেন। তিনি মোট ৬৩টি টেস্ট ম্যাচ খেলেছেন। এরমধ্যে ছিল ১২টি সেঞ্চুরি আর ২৭টি হাফসেঞ্চুরি। ওয়ানডে ক্রিকেটেও তিনি সংগ্রহ করেছিলেন ৬৭৮৬ রান। ৪টি সেঞ্চুরি ও ৫৫টি হাফসেঞ্চুরি ছিল এর মধ্যে।
ট্রেভর বেলিস (শ্রীলঙ্কা)
ট্রেভর বেলিস। তিনি শ্রীলঙ্কা দলের কোচ। ১৯৬২ সালের ২১ ডিসেম্বর তিনি শ্রীলঙ্কাই জন্মগ্রহণ করেন। দেশের ক্রিকেটকে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে দিতে ২০০৭ সালে তিনি কোচের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। দেশকে ১৫ বছর পর আবারও শিরোপা এনে দিতে এবারের বিশ্বকাপে তিনিই থাকবেন কোচের দায়িত্বে। বিশ্বের যে কোনো ক্রিকেট দলকে টক্কর দিতে শ্রীলঙ্কান দলকে প্রশিক্ষণ দিয়ে আসছেন।
ওয়াকার ইউনুস (পাকিস্তান)
এক সময়ের বিশ্বের সবচেয়ে দ্রুতগতির পাকিস্তানি বোলার। নাম তার ওয়াকার ইউনুস। তবে পুরো নাম হচ্ছে ওয়াকার ইউনুস মাইতলা। তিনি ১৯৭১ সালে পাকিস্তানের পাঞ্জাবে জন্মগ্রহণ করেন। বর্তমানে পাকিস্তানের কোচের দায়িত্বে আছেন। ২০০৬ সালে তিনি দেশের বোলার কোচ হিসেবে দায়িত্ব পান। বিশ্বব্যাপী যখন পাকিস্তানি দলকে নিয়ে সমালোচনা আর অন্তর্কোন্দল, ফর্মহীনতা তখন ওয়াকার ইউনুস খুবই সতর্কভাবে এবারের বিশ্বকাপের জন্য দল গুছিয়েছেন। বিশ্বজয়ের স্বপ্নে শীর্ষদের এরই মধ্যে কৌশল ঠিক করে দিয়েছেন।
জন রাইটস (নিউজিল্যান্ড)
এবারের বিশ্বকাপে নিউজিল্যান্ডের কোচ হিসেবে আছেন জন রাইটস। ১৯৫৪ সালের ৫ জুলাই তিনি নিউজিল্যান্ডে জন্মগ্রহণ করেন। কিউইদের সাবেক এ অধিনায়ক কোচের অভিজ্ঞতা ১৮ বছরের। কিউইদের হয়ে ১৪৯টি ওয়ানডে ও ৮২টি টেস্ট ম্যাচ খেলেছেন। সংগ্রহে ছিল ৫৫৩৪ রান টেস্টে আর ৩৮৯১ রান ওয়ানডে ম্যাচে। ২০১০ সালে জন রাইটস নিউজিল্যান্ডের কোচের দায়িত্ব নেন।
জেমি সিডন্স (বাংলাদেশ)
টাইগারদের সাফল্যের পেছনে কাজ করে যাচ্ছেন অস্ট্রেলিয়ার সাবেক খেলোয়াড় জেমি সিডন্স। ১৯৬৪ সালে অস্ট্রেলিয়ায় তার জন্ম। ২০০৭ সালের ২৮ অক্টোবরে তিনি বাংলাদেশে কোচ হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। আগে তিনি ভিক্টোরিয়া ও সাউথ অস্ট্রেলিয়ার হয়ে খেলেছিলেন প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেট। ১৬ বছরের ক্যারিয়ারে তিনি মাত্র একটি ওয়ানডে ক্রিকেট খেলেন। তবে খেলায় অভিজ্ঞতা যাই হোক, তিনি কোচ হিসেবে বেশি সফল।
অ্যালন বুচার (জিম্বাবুয়ে)
জিম্বাবুয়ের কোচ অ্যালন বুচার। ১৯৫৪ সালে তিনি ইংল্যান্ডে জন্মগ্রহণ করেন। খেলতেন ইংলিশদের হয়ে। ২০১০ সালে তিনি জিম্বাবুয়ে দলের কোচের দায়িত্ব নেন।
ফিল সিমন্স (আয়ারল্যান্ড)
ফিল সিমন্স আয়ারল্যান্ডের কোচ। তিনি ১৯৬৩ সালের ১৮ এপ্রিল ত্রিনিদাদে জন্মগ্রহণ করেন। ওয়েস্ট ইন্ডিজের অলরাউন্ডার ছিলেন। খেলেছেন ২৬টি টেস্ট ও ১৪৩টি ওয়ানডে ম্যাচ। ২০০৭ সালে তিনি আইরিশদের কোচ হিসেবে যোগ দেন।
গিবসন (ওয়েস্ট ইন্ডিজ)
প্রথম বিশ্বকাপ চ্যাম্পিয়ন ওয়েস্ট ইন্ডিজের কোচ গিবসন। ১৯৬৯ সালের ১৬ মার্চ বার্বাডোজে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। ওয়েস্ট ইন্ডিজের হয়ে দুটি টেস্ট ও ১৫টি ওয়ানডে ম্যাচ খেলেছেন তিনি। ২০০৭ সালে ইংল্যান্ডের বোলিং কোচের দায়িত্ব পালন করেন।
পিটার ড্রিনেন (নেদারল্যান্ডস)
নেদারল্যান্ডসের কোচ হিসেবে আছেন পিটার ড্রিনেন। ১৯৫৫ সালে তিনি নেদারল্যান্ডসেই জন্মগ্রহণ করেন। ২০১০ সালে নিজের দেশে কোচ হিসেবে নিযুক্ত হন।
বেনজাইল (দক্ষিণ আফ্রিকা)
দক্ষিণ আফ্রিকার কোচের দায়িত্বে আছেন বেনজাইল। তিনি ১৯৬১ সালে দক্ষিণ আফ্রিকায় জন্মগ্রহণ করেন। ক্রিকেট জীবনে তিনি মাত্র দুটি ওয়ানডে ম্যাচ খেলেছেন।
পাডুমো ডাসানায়েক (কানাডা)
কানাডা দলে আছেন পাডুমো ডাসানায়েক। ১৯৭০ সালে তিনি শ্রীলঙ্কায় জন্মগ্রহণ করেন। তিনি কানাডা ও শ্রীলঙ্কার হয়ে খেলেছেন। ২০০৭ সালে তিনি কানাডার কোচের দায়িত্ব নেন।
এলডিন বেপটিন্স (কেনিয়া)
কেনিয়ার কোচ এলডিন বেপটিন্স। ১৯৬০ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ওয়েস্ট ইন্ডিজের হয়ে ৪৩টি ওয়ানডে ও ১০টি টেস্ট ম্যাচ খেলেছিলেন। ২০০৯ সালে তিনি কেনিয়ার কোচ হিসেবে দায়িত্ব পান।

প্রভার অপূর্ববিচ্ছেদ

http://dc142.4shared.com/img/386393608/ce3af9eb/dlink__2Fdownload_2FZ_5FT8qSE-_2FProva_5Fscandal_5Fpart_5F3.3gp_3Ftsid_3D20110220-140806-a2f161be/preview.flv
শেষ পর্যন্ত বিচ্ছেদই ঘটল অপূর্ব-প্রভার। প্রায় পাঁচ মাস আলাদা থাকার পর আনুষ্ঠানিকভাবে হয়ে গেল তাদের ডিভোর্স। এ জন্য অপূর্বকে শরিয়ত মোতাবেক দেনমোহরের টাকাও গুনতে হয়েছে। ডিভোর্সের পর অপূর্ব মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছেন। তবে প্রভার মধ্যে তেমন কোনো প্রভাব পড়েনি। প্রসঙ্গত, বহুল আলোচিত একটি ভিডিও ক্লিপই এ বিচ্ছেদের অন্যতম কারণ বলে মনে করছেন অনেকেই।

টসে জিতে ফিল্ডিং নেওয়ার নেপথ্যে

টস হারাটা যেন মহেন্দ সিং ধোনির শাপেবর হলো। বাংলাদেশের অধিনায়ক সাকিব আল হাসান টস জিতে ফিল্ডিং নিয়ে যেন নিজের পায়ে নিজেই কুড়াল মারলেন। ভারতকে ব্যাটিং করতে দেওয়ার মজাটা হাড়ে হাড়ে টের পেলেন। বিরেন্দর শেবাগের ক্যারিয়ার সেরা ১৭৫ রান এবং বিরোট কোহলির দুর্দান্ত সেঞ্চুরিতে ৩৭০ রানের পাহাড়ে পেঁৗছে ভারত। মূলত তখনই ম্যাচ হাতছাড়া হয়ে যায় বাংলাদেশের। তবে মিরপুরের এই চেনা উইকেটে ফিল্ডিং নেওয়ার পেছনে সাকিবের যুক্তিও রয়েছে। 'ভারতকে প্রথমে ব্যাটিং করে চাপে ফেলতে চাই' টস জয়ের পর এভাবেই নিজের অভিমত ব্যক্ত করেছেন। ভারত এবারের আসরের হট ফেভারিট। তাই তাদের বিরুদ্ধে জিততে হলে কিছুটা তো ভাগ্যের সহায়তাও চাই। এ কথা আগেই বলেছিলেন টাইগার দলপতি। তবে ভাগ্যদেবী কাল সাকিবদের দিকে মুখ ফিরে তাকায়নি। তাই ভারত চাপে রাখার বদলে উল্টো বাংলাদেশের ঘাড়েই চাপের মস্ত এক বোঝা চেপে যায়। শেষ পর্যন্ত সেই চাপ থেকে আর বাড়াতে পাড়েনি টাইগাররা।

বাংলাদেশের প্রধান শক্তি স্পিন, তাই দিনের আলোতে উইকেটে টার্ন থাকতে পারে। তাছাড়া পোর্ট অব স্পেনে তো প্রথমে ফিল্ডিং করে ভারতকে ১৯১ রানেই অল আউট করেছিল টাইগাররা, হয়তো সেই স্মৃতিও উঁকি মারছিল সাকিবের মনে। তাই ভারতের মারকুটে ব্যাটিং লাইন আপের সামনে ফিল্ডিং সিদ্ধান্ত নিতে দ্বিধাবোধ করেননি সাকিব।

বাংলাদেশ ভালো লড়লেও জয় ভারতের

 ভারত : ৩৭০/৪ (৫০ ওভার), বাংলাদেশ : ২৮৩/৯ (৫০ ওভার), ফলাফল : ভারত ৮৭ রানে জয়ী

বাংলাদেশ ভালো লড়লেও জয় হলো ভারতের। উৎসবের আমেজে যাত্রা শুরু হলো বিশ্বকাপ ক্রিকেট-২০১১ এর। শুরুর দিনই টাইগারদের ম্যাচ থাকায় সারাদেশেই ছিল বাড়তি উত্তেজনা। মিরপুর যেন উন্মাদনার সাগরে পরিণত হয়েছিল। গতকাল স্টেডিয়াম এলাকা ছিল সারাবিশ্বের ক্রিকেটামোদীদের পদচারণায় মুখরিত। স্টেডিয়ামের বাইরেও ছিল জনসে াত। লাখ লাখ দর্শক বাংলাদেশ বাংলাদেশ বলে চিৎকারে স্টেডিয়াম এলাকা প্রকম্পিত করেছিল। সরাসরি খেলা দেখা যাবে না তাতে কি! স্টেডিয়ামের বাইরে থেকেই যেন তারা অভিনন্দন বার্তা জানিয়ে দিচ্ছিল সাকিবদের। স্টেডিয়ামের ভেতরের চিত্র অন্য রকম। লাল-সবুজ চাদরে মোড়ানো পুরো মাঠ, গ্যালারিও। সমর্থকদের গায়ে প্রিয় দলের জার্সি, হাতে লাল-সবুজের গর্বের পতাকা। পুরো স্টেডিয়ামেই ছিল উৎসবের আমেজ। তবে টস জিতে বাংলাদেশের অধিনায়ক সাকিব আল হাসান ভারতকে ব্যাটিংয়ের আমন্ত্রণ জানালে চিত্র পাল্টে যায়। শেবাগ-কোহলির মারকুটে ব্যাটিংয়ে দর্শকদের আনন্দ যেন বেদনায় রূপান্তরিত হয়। সবার মুখেই তখন হতাশার ছাপ। স্বপ্নের বিশ্বকাপে পরাজয় দিয়ে যাত্রা শুরু করল সারথিরা। টাইগারদের প্রিয় মাঠ মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামই মৃত্যুকূপে পরিণত হয়েছিল গতকাল। বড় একটা ধাক্কা খেল স্বপ্নকাতর দেশবাসী। দিবা-রাত্রির ম্যাচে টস সব সময়ই বড় ফ্যাক্টর। ক্রিকেট বিশেষজ্ঞদের মতে, দিবা-রাত্রির ম্যাচে টস জিতলেই ৫০ ভাগ ম্যাচ নিয়ন্ত্রণে চলে আসে। কিন্তু টস জিতে ফিল্ডিং নিয়ে গতকাল সাকিব কি তাহলে নিজের পায়ে নিজেই কুড়াল মারলেন? সেটা যাদের ভাবার তারাই ভাববেন। তবে প্রথমে ফিল্ডিং নেওয়ার সিদ্ধান্ত ভুল ছিল না বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশের অধিনায়ক সাকিব আল হাসান। ম্যাচ শেষে সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, 'আজ আমাদের খারাপ দিন ছিল। পেসাররা ভালো করতে পারেননি। তবে পরের ম্যাচেই ফিরব।' প্রথমে ফিল্ডিং নেওয়ার পেছনে পোর্ট অব স্পেনের সেই স্মৃতিও সাকিবকে প্রভাবিত করতে পারে। কেননা গত বিশ্বকাপের সেই ম্যাচে বাংলাদেশ প্রথমে ভারতকে ব্যাটিং করতে দিয়ে ১৯১ রানেই অলআউট করেছিল। তারপর ব্যাটিংয়ে নেমে তামিম, সাকিব, মুশফিকের দুর্দান্ত হাফ সেঞ্চুরিতে মহাকাব্যিক সে জয়, যা এখনো বাংলাদেশের কাছে মধুর স্মৃতি হয়ে আছে। তবে কাল সাকিবদের বাস্তবে নামালেন ধোনিরা। ভারত ৮৭ রানে জিতে বুঝিয়ে দিল পুরনো স্মৃতি যতই মধুর হোক তা এখন শুধুই অতীত। গতকাল এক শেবাগের কাছেই হেরে গেল বাংলাদেশ। বিরাট কোহলির অভিষেক সেঞ্চুরিও কম গুরুত্বপূর্ণ নয়। শেবাগ-কোহলি মিলে তৃতীয় উইকেটজুটি ২০৩ রান করে ভারতকে পেঁৗছে দেয় দুর্গম পাহাড়ের চূড়ায়। ৩৭০ রান বিশ্বকাপে ভারতের তৃতীয় সর্বোচ্চ (বিশ্বকাপে সর্বোচ্চ ৪১৩ বারমুডার বিরুদ্ধে ২০০৭ ওয়েস্ট ইন্ডিজে)। শেবাগ তার ক্যারিয়ারসেরা ১৭৫ রানের অসাধারণ একটি ইনিংস খেলেছেন। ১৪০ বলে ১৪টি চার ও ৫টি ছয়ে সাজানো ইনিংসটি ওয়ানডের ইতিহাসে দশম সর্বোচ্চ রানের তালিকায় স্থান পেয়েছে। শেবাগের দিনে সুবিধা করতে পারেননি লিটল মাস্টার শচীন টেন্ডুলকার। তিনি দুর্ভাগ্যজনকভাবে ২৮ রান করেই রানআউট হয়ে যান। দুর্ভাগ্যের ছোঁয়ায় ব্যাটিং জিনিয়াস তার ক্যারিয়ারের শেষ বিশ্বকাপ শুরু করলেও ষষ্ঠ বিশ্বকাপ খেলে পাকিস্তানি তারকা জাভেদ মিয়াঁদাদকে ছুঁয়ে ফেলেন কালই। সাকিব বাহিনীও ৬৯ রানের মাথায় প্রথম উইকেটের পতন ঘটিয়ে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেন। উইকেটে এসে নামের প্রতি সুবিচার করে খেলতে পারেননি বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ভারতের সবচেয়ে সফল ব্যাটসম্যান গৌতম গম্ভীরও। তবে শেবাগ-কোহলিরা যখন তাণ্ডব চালাচ্ছিলেন তখন গ্যালারি ছিল সুনসান। যেন খেলা হচ্ছে মরুভূমিতে, আর হাজারও মানুষের মূর্তি তা ঠায় দাঁড়িয়ে তা দেখছে। তাদের অনুভূতি নেই। নেই আবেগও। মাঝে মাঝে স্টেডিয়ামের বাইরে থেকে আসছিল ভুভুজেলার আওয়াজ। সাকিবদের সংকটের দিনে সে শব্দও খুবই বিদঘুটে শোনাচ্ছিল। পুরো গ্যালারি তখন শোকে বিহ্বল। টাইগাররা ব্যাটিংয়ে নামার সঙ্গে প্রাণ ফিরে আসে গ্যালারিতে। প্রথম ৫ ওভারে তামিম ইকবাল ও ইমরুল কায়েসের ঝড়ো ব্যাটিংয়ে ৫১ রান করেন টাইগাররা। উত্তেজনায় কাঁপতে থাকে পুরো স্টেডিয়াম। কিন্তু ৫৬ রানের মাথায় ইমরুল ২৯ বলে ৩৪ রান করে আউট হয়ে গেলে বাংলাদেশের ইনিংসও কিছুটা ঝিমিয়ে পড়ে। তারপর জুনায়েদ সিদ্দিকের সঙ্গে তামিম ৭৩ রানের জুটি গড়ে পাহাড় টপকে বাংলাদেশকে জয়ের স্বপ্ন দেখান। সেই স্বপ্নে বাড়তি রঙ ঢেলে দেয় অধিনায়ক সাকিবের সঙ্গে তামিমের গড়া ৫৯ রানের পার্টনারশিপটি। তবে ১৮৮ রানের মাথায় ব্যক্তিগত ৭০ রান করে তামিম আউট হয়ে গেলে দেশবাসীর স্বপ্নও অনেকটা ফেকাসে হয়ে যায়। স্তব্ধ হয়ে যায় পুরো গ্যালারি। মুনাফ প্যাটেলের বলে দুর্দান্ত একটি ক্যাচ ধরে যুবরাজ সিং তামিমকে ফিরিয়ে দেন। স্ট্যাম্পিংয়ের ফাঁদে পড়েন জুনায়েদ। তবে এ আউটটি ঘিরে বাতাসে বিতর্কের গন্ধ ছড়িয়ে বেড়াচ্ছে। কেননা ক্রিকেটে সব সময় ফিফটি ফিফটি সুযোগ তৈরি হলে তা ব্যাটসম্যানের পক্ষেই যায়। কিন্তু কাল হলো তার উল্টো। টাইগাররা শেষ পর্যন্ত লড়াই করে দেখিয়ে দিলেন, দুর্গম গিরি হলেও বুকে সাহস থাকলে তা টপকানো অসম্ভব নয়। সাকিব যতক্ষণ উইকেটে ছিলেন ততক্ষণ তো বাংলাদেশের আশা ছিলই। ৫৫ রানে সাকিব আউট হয়ে যাওয়ার পড়েই ম্যাচ থেকে ছিটকে যায় বাংলাদেশ। তবে ৮৭ রানের এই হারেই টাইগারদের সব সম্ভাবনা কিন্তু শেষ হয়ে যায়নি। বাকি ম্যাচগুলোতে সাকিবরা কেমন করেন তা দেখার অপেক্ষায় দেশবাসী। 

শ্রীশান্তের দুঃস্বপ্ন!


ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি হয়নি। গত বিশ্বকাপের মতো এবার আর ভারতকে বধ করা যায়নি। কিন্তু তাতে কী! টাইগাররা ভারতকে জবাবটা মন্দ দেয়নি। অন্তত তুলোধুনো তো করেছে ভারতের আগ্রাসী বোলার শ্রীশান্তকে। আর বেচারা ধোনি তো তাতে ভয়ই পেয়ে গিয়েছিলেন। আর কী চাই!
বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচে বাংলাদেশের পারফরমেন্সে হতাশ হয়েছেন, এমন মানুষ খুব কমই পাওয়া যাবে। ভারতের মতো শক্তিশালী ব্যাটিংনির্ভর দলের বিপক্ষে শুরুতে ফিল্ডিং করার সিদ্ধান্তটা না নিলে ফলাফলটা হয়তো অন্য রকমও হতে পারত। আমাদের ব্যাটসম্যানরা এমন আশা বেশ ভালোভাবেই জাগিয়ে তুলেছিলেন। আর গতকালকের নখ-দন্তহীন বোলিং আক্রমণ মাশরাফির অনুপস্থিতিটা বারবারই মনে করিয়ে দিচ্ছিল।
তবে ৮৭ রানের হার দিয়ে শুরু হলেও প্রাপ্তিটা কিন্তু একেবারেই কম না টাইগারদের। ঘরের মাটিতে বিশ্বকাপের যে উত্তেজনা তাতে অন্তত পানি ঢেলে দেননি ইমরুল-তামিম-সাকিবরা। বরং বাংলাদেশের আপামর ক্রিকেটপাগল মানুষকে অন্তত কিছুক্ষণের জন্য হলেও আনন্দে মাতিয়েছিলেন তারা। বিশেষত ইমরুল কায়েস।
উপলক্ষটা করে দিয়েছিলেন শ্রীশান্ত। মাঠের উগ্র আচরণের কারণে হয়তো শুরু থেকেই ভারতীয় এই ফাস্ট বোলারের ওপর আলাদাভাবেই কিছুটা ক্ষুব্ধ ছিল বাংলাদেশ সমর্থকেরা। যেন টাইগাররা শুধু শ্রীশান্তকে উড়িয়ে দিতে পেরেছে বলেই আলাদাভাবে খুশি বাংলাদেশের মানুষ। মাত্র পাঁচ ওভার বল করে বেচারা শ্রীশান্ত দিয়েছেন ৫৭ রান।
ইনিংসের প্রথম ওভারে বল করতে আসলেন শ্রীশান্ত। একটা চারসহ সেই ওভারে তামিম নিলেন আট রান। শ্রীশান্ত দ্বিতীয় ওভারে মুখোমুখি হলেন ইমরুল কায়েসের। এই ওভার থেকেও এল আট রান। তবে এবার দুটাই চার। কিন্তু শ্রীশান্তের তৃতীয় ওভারটা রীতিমতো দুঃস্বপ্নে পরিণত করলেন ইমরুল। শুরুতেই একটা সিঙ্গেল নিয়ে ইমরুলকে স্ট্রাইকে পাঠালেন তামিম। দ্বিতীয় বলেই চার। তৃতীয় বলে স্কোয়ার লেগ দিয়ে আবারও বল চলে গেল সীমানার বাইরে। আম্পায়ার নো বলের ইশারা করতেই দর্শকদের উল্লাস আরও বেড়ে গেল। ফ্রি-হিট। এবার আরও হাত খুলে ব্যাট চালালেন ইমরুল। সেই স্কোয়ার লেগ দিয়ে আবারও চার। দর্শকেরা যেন প্রায় ফেটে পড়ল উল্লাসে। ওভারের পঞ্চম বলটা ইমরুল খেললেন রক্ষণাত্মক ভঙ্গিতে। কোনো রান হলো না। এবার টিভি স্ক্রিনে শ্রীশান্তকে একপলক দেখা যেতেই মাশরাফির বাক্য ধার করে এক দর্শককে বলতে শোনা গেল, ‘দাঁড়া, ধরে দেবানি!’ এই কথার মান রাখতেই বোধহয় পরের বলটা আবারও সীমানার বাইরে পাঠালেন ইমরুল। চার! শ্রীশান্ত যে রীতিমতো নাজেহাল হয়ে পড়েছেন, তার প্রমাণ পাওয়া গেল পরের বলটায়। বলটা ডেলিভারি দিলেন উইকেটের প্রায় বাইরে দিয়ে। এত বড় ওয়াইড, যে উইকেটরক্ষক ধোনি অনেক চেষ্টা করেও বলটা আটকাতে পারলেন না। ওয়াইড বলে আবারও চার। ওভারের শেষ বলটাও যদি সীমানার বাইরে যেত, তাহলে বোধহয় ষোলকলা পূর্ণ হতো। কিন্তু এবার শুধু এক রান। ওই ওভার থেকে এসেছিল মোট ২৪ রান। ধোনি পরবর্তী ওভারে আর শ্রীশান্তের হাতে বল তুলে দেওয়ার সাহস দেখালেন না। তিন ওভারে ৪০ রান দিয়ে প্রথম স্পেল শেষ করলেন ভারতীয় এই ফাস্ট বোলার।
ইমরুল আউট হয়ে যাওয়ার পর দ্বিতীয় স্পেলে আরও দুই ওভার বল করেছিলেন তিনি। কিন্তু এবারও তাঁকে খুব বেশি স্বস্তিতে থাকতে দিলেন না তামিম আর সাকিব। একটা চারসহ ওই দুই ওভার থেকে বাংলাদেশের অধিনায়ক আর সহ-অধিনায়ক নিলেন ১৭ রান। পরে আর শ্রীশান্তের হাতে বল তুলে দেননি ধোনি। ভারতের বিশ্বকাপ মিশন জয় দিয়ে শুরু হলেও শ্রীশান্তের স্বপ্নে বোধহয় বেশ কিছুদিন হানা দিতে পারে ইমরুল, সাকিব, তামিমদের ব্যাট। দুঃস্বপ্ন হয়ে!

বাংলাদেশ-ভারত ম্যাচে


শেবাগের ১৭৫
 শেবাগের সর্বোচ্চ রান, আগের সর্বোচ্চ ১৪৬ (শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে, রাজকোট, ২০০৯)।
 বাংলাদেশের মাটিতে সর্বোচ্চ ইনিংস। আগের সর্বোচ্চ ১৪১, টেন্ডুলকার, ভারত-অস্ট্রেলিয়া, ১৯৯৮।
 মিরপুরে সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত ইনিংস। আগের সর্বোচ্চ অপরাজিত ১২৯, সালমান বাট, পাকিস্তান-ভারত, ২০০৮।
 বাংলাদেশের বিপক্ষে ২য় সর্বোচ্চ, সর্বোচ্চ ১৯৪*, চার্লস কভেন্ট্রি, জিম্বাবুয়ে, ২০০৯।
 শেবাগের ১৪তম ওয়ানডে সেঞ্চুরি।
 বিশ্বকাপে শেবাগের ২য় সেঞ্চুরি, বাংলাদেশের বিপক্ষে প্রথম।

ভারতের ৩৭০
 বাংলাদেশের মাটিতে সর্বোচ্চ রান
 বাংলাদেশের বিপক্ষে ভারতের সর্বোচ্চ
 বিশ্বকাপের উদ্বোধনী ম্যাচের সর্বোচ্চ রান
 ওয়ানডেতে বাংলাদেশের বিপক্ষে ৩য় সর্বোচ্চ
 বাংলাদেশের মাটিতে তিন শ পেরোনো ১৫তম স্কোর।

কোহলির ১০০*
 ওয়ানডেতে ভারতীয় ব্যাটসম্যানের পঞ্চম সেঞ্চুরি।
 বাংলাদেশের বিপক্ষে কোহলির দ্বিতীয় সেঞ্চুরি (আগেরটিও ছিল মিরপুরে)।

২০৩ রানের জুটি
 শেবাগ-কোহলির ২০৩ রানের জুটি তৃতীয় উইকেটে মিরপুরে সর্বোচ্চ (আগের রেকর্ড ১৩০*, আশরাফুল-নাফিসের, আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে, ২০০৮)।
 বিশ্বকাপে যেকোনো উইকেটে অষ্টম সেরা।
 বিশ্বকাপে তৃতীয় উইকেট জুটিতে তৃতীয় সর্বোচ্চ। সেরা টেন্ডুলকার-দ্রাবিড়ের অপরাজিত ২৩৭ (কেনিয়ার বিপক্ষে, ১৯৯৯)।
 বাংলাদেশের বিপক্ষে যেকোনো জুটিতে ষষ্ঠ সর্বোচ্চ রান।
 বাংলাদেশের মাটিতে ৫ম ও মিরপুরের ৪র্থ সর্বোচ্চ জুটি।

Saturday, February 19, 2011

উত্সবের সাজে উত্তাল বাংলাদেশ


‘এখানে এসেছি বিশ্বকাপের আনন্দমুখর পরিবেশের স্বাদ নিতে। দুই দিন লম্বা লাইনে দাঁড়িয়ে থেকেও উদ্বোধনী ম্যাচটার টিকিট পাইনি। তাই আমার জন্য বিশ্বকাপ উপভোগের এটাই সবচেয়ে ভালো উপায়।’ কথাগুলো বলছিলেন একজন ব্যাংক কর্মকর্তা বিপুল সরকার। বাংলাদেশ ক্রিকেট দলকে শুভকামনা জানাতে আরও অনেকের মতো তিনিও উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের দিন সকালেই চলে এসেছিলেন বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে। টিকিট পাওয়া নিয়ে আক্ষেপ না করে হাজারও মানুষ এভাবেই খুঁজে নিয়েছে আনন্দের উপলক্ষ। মেতে উঠেছে ক্রিকেটের আনন্দে।
শুধু আজ সকালেই না। ১৭ ফেব্রুয়ারি বিশ্বকাপের দশম আসরের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনটা হয়ে যাওয়ার পরপরই নেচে উঠেছে বাংলাদেশের ক্রিকেটপাগল মানুষ। বিশ্বকাপ উপলক্ষে পুরো ঢাকাই সেজেছে উত্সবের সাজে। বর্ণিল আলোকসজ্জায় ঝলমল করছে চারদিক। গতকাল শুক্রবার রাতেও ঢাকার কিছুটা ফাঁকা রাস্তায় মাঝেমধ্যে দেখা গেছে বাংলাদেশের পতাকা বা বিশ্বকাপ ‘ট্রফি’ হাতে উল্লসিত তরুণদের। অনেকেই বলেছে, ক্রিকেট বিশ্বকাপটা এবার বাংলাদেশের জন্য একেবারেই নতুন ধরনের অভিজ্ঞতা। গার্মেন্টস মার্চেন্ডাইজার শফিউল ইসলামের ভাষায়, ‘আমি ২২ বছর ধরে ঢাকায় আছি। কিন্তু কখনোই এই শহরের এত বর্ণিল, প্রাণবন্ত চেহারা দেখিনি।’
আজ বেলা আড়াইটায় বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচে ভারতের মুখোমুখি হবে বাংলাদেশ। যে সৌভাগ্যবানেরা সরাসরি মাঠে বসে এই মহারণটা দেখার সুযোগ পাবে, তাদের আনন্দ তো বোধহয় ভাষায় প্রকাশ করা কঠিন। আর যারা টিকিট পায়নি, তারাও কোনো না কোনোভাবে অংশ হতে চাইছে বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসের এই মাহেন্দ্রক্ষণের। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী নীলিমা রায় বলেছেন, ‘এটা আমাদের জন্য খুবই বিরল একটা মুহূর্ত। আমি এটা কোনোভাবেই হারাতে চাইনি। সে জন্য আমি সকালেই চলে এসেছি স্টেডিয়ামে।’ খেলা চলার সময় মাঠে স্বেচ্ছাসেবকের দায়িত্ব পেয়েছেন আবদুল আজিজ। এ দায়িত্বটা পেয়ে নিজেকে খুবই সৌভাগ্যবান উল্লেখ করে তিনি বলেছেন, ‘ সত্যিই আজ আমাদের জন্য বিশেষ একটা দিন। আমি জানি না, আমার জীবদ্দশায় এ রকম অভিজ্ঞতা আর কখনো হবে কি না।’ রয়টার্স।

Thursday, February 17, 2011


বিশ্বকাপের আসর মাতালেন যাঁরা


দেশের সেরা শিল্পীদের পাশাপাশি কানাডা, শ্রীলঙ্কা ও ভারতের জনপ্রিয় শিল্পীদের পরিবেশনায় বিশ্বকাপের জমকালো উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শেষ হলো। সন্ধ্যা ছয়টা ২০ মিনিটে ছায়ানটের শিল্পীদের জাতীয় সংগীতের মধ্য দিয়ে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের সূচনা হয়। এর পরই জুলফিকার রাসেলের কথায় বিশ্বকাপের স্বাগত ‘ও পৃথিবী এবার এসো...বাংলাদেশ নাও চিনে, ও পৃথিবী...তোমায় স্বাগত জানাই এই দিনে...গানটি গেয়ে শোনান ইবরার টিপু, বালাম, অর্ণব, মিলা, কণা ও এলিটা। গানটির সুর ও সংগীত পরিচালনা দুটোই করেছেন ইবরার টিপু। ইবরার টিপুর গানের পরই ১৪টি দেশের অধিনায়ককে সামনে রেখে ভারতের জনপ্রিয় শিল্পী সনু নিগম পরিবেশন করেন ‘লেটস গো ফর গ্লোরি’ গানটি।
স্বাগত সংগীতের পরই বেশ কিছুক্ষণ চলে বক্তৃতা পর্ব। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আইসিসি বিশ্বকাপ ক্রিকেটের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন ঘোষণার পরপরই শুরু হয় তিন দেশের বিভিন্ন ঐতিহ্যগত বিষয়গুলোর ওপর প্রামাণ্যচিত্র। তিন দেশের ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সাংস্কৃতিক বিষয়গুলো প্রাধান্য পায় এসব প্রামাণ্যচিত্রে।
ভারত ও শ্রীলঙ্কার ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির নানা পরিবেশনার পর মঞ্চে আসেন সাবিনা ইয়াসমিন। তিনি গেয়ে শোনান ‘উত্তর দক্ষিণ পূর্ব পশ্চিম’, ‘ও আমার রসিয়া বন্ধু রে’ এবং ‘একটি বাংলাদেশ’। সাবিনার গান শেষ হতে না হতেই মঞ্চে আসেন ফোক সম্রাজ্ঞি খ্যাত শিল্পী মমতাজ বেগম। তিনি ‘মরার কোকিলে’ ‘খায়রুন লো’, এবং ‘নান্টু ঘটক’—এই তিনটি গান গেয়ে শোনান। আর সবশেষে মঞ্চে আসেন উপমহাদেশের প্রখ্যাত কণ্ঠশিল্পী রুনা লায়লা। তাঁর পরিবেশনায় ছিল ‘শিল্পী আমি তোমাদেরই গান শোনাব’ এবং ‘দমাদম মাস্ত কালান্দার’ গানগুলো। এঁদের পরিবেশনা স্টেডিয়ামভর্তি দর্শক প্রাণভরে উপভোগ করেন। সাবিনা-রুনা-মমতাজের গানের পরই বাংলাদেশের ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির ওপর একটি চমত্কার প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শিত হয়। এর মাধ্যমে বিশ্ববাসী বাংলাদেশের রূপবৈচিত্র ও লড়াই-সংগ্রামের বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে জানতে পারে। এতে প্রাধান্য পায় ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন থেকে ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ, বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ, নববর্ষসহ বিভিন্ন উত্সব এবং চাকমা, রাখাইন, মারমা, সাঁওতাল, গারোদের সংস্কৃতিসহ আরও অনেক কিছু।
প্রামাণ্যচিত্রের পর মঞ্চে আসেন উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের অন্যতম আকর্ষণ কানাডার রকশিল্পী ব্রায়ান অ্যাডামস। তিনি পরিবেশন করেন ‘সামার ৬৯’সহ জনপ্রিয় আরও দুটি গান। সবশেষে বিশ্বকাপের থিম সং ‘আরও জোরে সবার আগে, চতুর্পার্শ্বে ক্রিকেট তাপে চার-ছক্কা মাঠ পেরিয়ে, খেলছে দ্যাখো দামাল ছেলে। পেরিয়ে বাধা, ঘূর্ণি ধাঁধা কিংবা গতির তুমুল কোনো ঝড়/বাতাস কেটে, তুমুল বেগে, হাজার উল্লাসে জয়ের নিশান গড়ো, মারো ঘুরিয়ে, জিতবে এবার জিতবে ক্রিকেট।’ গানটির পরিবেশনার মধ্য দিয়ে শেষ হয় এই বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠান।
গানটি গেয়েছেন রাঘব চ্যাটার্জি। সুর ও সংগীত পরিচালনা করেছেন শংকর-এহসান-লয়। গানটির গীতিকার বাংলাদেশের শেখ রানা।
পুরো কোরিওগ্রাফি পরিচালনা করেন ভারতের কোরিওগ্রাফার সন্তোষ শেঠজি।
বাংলাদেশ পর্ব পরিচালনা করেন নৃত্যশিল্পী শিবলী মহম্মদ ও শামীম আরা নিপা।
বিশ্বকাপ ক্রিকেটের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের সার্বিক দায়িত্বে ছিল উইজ ক্রাফট ও বাংলাদেশের এশিয়াটিক ইভেন্ট।

বিশ্বকাপ ক্রিকেটের বর্ণিল উদ্বোধন


সুরের ঝংকার ও আতশবাজির ঝলকানির মধ্য দিয়ে পর্দা উঠল বিশ্বকাপের দশম আসরের। স্বাগতিক দেশগুলোর শিল্প-সংস্কৃতির অনন্য পরিবেশনার মধ্য দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হলো ক্রিকেটের সবচেয়ে বড় এই প্রতিযোগিতা। সঙ্গে বিশেষ আকর্ষণ হিসেবে দর্শকদের মনোরঞ্জন করেছেন কানাডার রকশিল্পী ব্রায়ান অ্যাডামস। আর শঙ্কর-এহসান-লয়—সবাইকে নতুন উদ্দীপনায় জাগিয়েছেন বিশ্বকাপের থিম সং (মার ঘুরিয়ে) দিয়ে।
সন্ধ্যা সোয়া ছয়টায় শুরু হয় দশম বিশ্বকাপ ক্রিকেটের বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠান। ছায়ানটের শিল্পীদের জাতীয় সংগীত পরিবেশনার পরপরই মঞ্চে আসন গ্রহণ করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। জাতীয় সংগীতের পর এবারের বিশ্বকাপের স্বাগত সংগীত পরিবেশন করেন ইবরার টিপুর নেতৃত্বে বালাম, অর্ণব, মিলা, এলিটা, কনাসহ আরও অনেকে। এরপর বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী বাহন রিকশায় চড়ে মূল মঞ্চে আসেন বিশ্বকাপের ১৪ অধিনায়ক। এ সময় তাঁরা হাত নেড়ে স্টেডিয়ামে উপস্থিত দর্শকদের অভিবাদন জানান। ভারতের প্রখ্যাত সংগীতশিল্পী সনু নিগমের ‘লেটস গো ফর গ্লোরি’ শিরোনামের পরিবেশনা ছিল পরবর্তী আকর্ষণ। বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের সভাপতি আ হ ম মোস্তফা কামাল, ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী আহাদ আলী সরকার, অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত ও আইসিসির সভাপতি শারদ পাওয়ারের স্বাগত বক্তব্যের পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিশ্বকাপের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন ঘোষণা করেন।
স্বাগতিক দেশগুলোর শিল্পীদের পরিবেশনার শুরুতে মঞ্চে আসেন ভারতীয় কলাকুশলীরা। তাঁদের পরিবেশনা ‘ম্যাগনিফিসেন্ট ইন্ডিয়া’য় চমত্কারভাবে প্রতিফলিত হয়েছে ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলের সংস্কৃতি। তাঁদের এই অসাধারণ পরিবেশনার রেশ ফুরাতে না ফুরাতেই মঞ্চে আসেন শ্রীলঙ্কান শিল্পীরা। ‘অ্যামেজিং শ্রীলঙ্কা’ নামের পরিবেশনার মধ্য দিয়ে তাঁরা দর্শকদের নিয়ে যান স্বপ্নের জগতে। এর পরই আসে বাংলাদেশের পালা। একে একে মঞ্চে আসেন সাবিনা ইয়াসমিন, মমতাজ ও রুনা লায়লা। দেশের সংগীতজগতের প্রধান এই তিন শিল্পী উপস্থিত দর্শকদের মুগ্ধ করেন সুরের মূর্ছনায়। এরপর দেশবরেণ্য নৃত্যশিল্পী শিবলী মোহাম্মদ ও শামীম আরা নিপার নেতৃত্বে নৃত্য পরিবেশন করেন শিল্পীরা। নাচের তালে তালে তাঁরা চমত্কারভাবে তুলে ধরেন বাংলাদেশের গৌরবময় ইতিহাস-ঐতিহ্য।
দীর্ঘ প্রতিক্ষার অবসান ঘটিয়ে এরপর মঞ্চে আসেন কানাডার রকশিল্পী ব্রায়ান অ্যাডামস। একে একে গেয়ে শোনান ‘সামার ৬৯’সহ আরও তিনটি গান। সবশেষে বিশ্বকাপের থিম সং ‘দে ঘুমাকে/মার ঘুরিয়ে’ গানটির পরিবেশনার মধ্য দিয়ে শেষ হয় এই বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠান। পুরো সময়ই আতশবাজির ঝলকানি দর্শকদের মুগ্ধ করে রাখে।

Sunday, February 13, 2011

বিশ্বকাপের প্রস্তুতি টাইগারদের কাছে ধরাশায়ী কানাডা


অঘটন না ঘটলে বিশ্বকাপে দেখা হওয়ার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। প্রস্তুতি ম্যাচেই তাই যেন আট বছর আগের হিসাবটা চুকিয়ে নিল টাইগাররা। চট্টগ্রামে আজ অনুষ্ঠিত দিবা-রাত্রির খেলায় কানাডাকে বাংলাদেশের কাছে হার মানতে হয়েছে ৯ উইকেটের বিশাল ব্যবধানে।
কানাডার আত্মবিশ্বাস বলতে ছিল ২০০৩ সালের বিশ্বকাপে বাংলাদেশকে হারানোর সুখস্মৃতি। কিন্তু সেই দিন যে এখন আর নেই, তা প্রমাণ করে দিয়েছে সাকিব আল হাসানের দল। বাংলাদেশের বোলারদের ঝড়ে কবলে পড়ে কানাডার ইনিংস শেষ হয় মাত্র ৩৭.৩ ওভারে, ১১২ রানে। জবাবে তামিম ইকবালের হাফ সেঞ্চুরিতে মাত্র একটি উইকেট হারিয়ে জয় তুলে নেয় বাংলাদেশ।
লক্ষ্যটা সহজ, মাত্র ১১৩ রান। এ সহজ যাত্রায় বাংলাদেশকে বেগ পেতে হয়নি একটুও। তামিম ইকবাল ও ইমরুল কায়েসের উদ্বোধনী জুটিতে আসে ১০৬ রান। ব্যক্তিগত ৬৯ রানে সাজঘরে ফেরেন তামিম। কিন্তু কায়েসকে ফেরাতে পারেননি কানাডার বোলাররা। বাংলাদেশকে জয়ের বন্দরে নিয়ে এই ব্যাটসম্যান অপরাজিত থাকেন ৩৯ রানে। সঙ্গে ১ রানে অপরাজিত থাকেন জুনায়েদ।
শুরু থেকেই ভাগ্য সহায় ছিল বাংলাদেশের। টসে জিতে সাকিব আল হাসান ফিল্ডিং নেন। প্রথম ওভারেই উইকেট তুলে নিয়ে অধিনায়কের সিদ্ধান্তের যথার্থতা প্রমাণ করেন শফিউল ইসলাম। এর পর নিয়মিত বিরতিতে উইকেট পড়তে থাকে কানাডার। বাংলাদেশের হয়ে সর্বোচ্চ তিনটি উইকেট শিকার করেন অধিনায়ক সাকিব। দুটি করে উইকেট নেন শফিউল, মাহমুদউল্লাহ ও রুবেল হোসেন।

Wednesday, February 9, 2011

দ্বিতীয় রাউন্ডে যেতে পারলে বড় কিছু নয় কেন: সাকিব


এবারের বিশ্বকাপ আসরের কনিষ্ঠতম অধিনায়ক তিনি। সংবাদ সম্মেলনে আসা সাকিব আল হাসানের দিকে দেশ-বিদেশের সাংবাদিকদের উত্সুক চোখে তাকিয়ে থাকার কারণ তাঁর বয়স নয়। কারণ, প্রাক-বিশ্বকাপ সংবাদ সম্মেলনে আসা প্রথম অধিনায়ক সাকিব।
বয়সে একবারেই তরুণ, চব্বিশে পা দেবেন আগামী মাসে। তবে সাকিব নিজেকে উপস্থাপন করেছেন ‘পরিপূর্ণ’ একজন অধিনায়ক হিসেবেই। উপস্থিত সাংবাদিকদের প্রশ্নবাণকে সামলেছেন কৌশলে।
বিশ্বকাপে দলের লক্ষ্য কী? সামনে অধিনায়ককে পেলে সবার মাথায় এ প্রশ্নটিই ঘুরপাক খাওয়ার কথা। তবে সরাসরি নিজেদের লক্ষ্যটা প্রকাশ করেননি সাকিব। ‘বিশেষ টার্গেট নেই। প্রথম ম্যাচের অপেক্ষায় আছি আমরা। এক-দেড় বছর ধরে ভালো ক্রিকেট খেলছি। দ্বিতীয় রাউন্ডে যেতে পারলে বড় কিছু নয় কেন’—বলেছেন টাইগারদের অধিনায়ক।
ঘরের মাঠে বিশ্বকাপ। সমর্থকের প্রত্যাশাটা ‘চাপ’ হয়ে দাঁড়াবে না তো? চাপ নয়, সাকিব বরং এটিকে ‘বোনাস’ হিসেবেই দেখছেন, ‘আমরা এটিকে বোনাস হিসেবেই দেখছি। কন্ডিশন জানা। অনুশীলন ক্যাম্প ভালো হয়েছে। সব মিলিয়ে আমরা আত্মবিশ্বাসী।’
সমর্থকদের প্রত্যাশার চাপ না হয় বাদ দিলাম। কিন্তু অধিনায়কত্বের চাপটা কীভাবে সামলাবেন? এ প্রশ্নেও কৌশলী সাকিব, ‘অধিনায়কত্ব কখনো সমস্যা মনে হয় না। ড্রেসিং রুমে আগের মতোই আছি আমি।’

সপ্তাহে পাঁচটি করে সাবান খান তিনি


প্রতি দিন সাবান খান তিনি। সপ্তাহে গায়ে মাখার অন্তত গোটা পাঁচেক সাবান লাগে তাঁর। এ ছাড়া মুঠি মুঠি কাপড় ধোয়ার গুঁড়ো সাবান তো আছেই। চিকিৎসকেরা এরই মধ্যে তাঁকে সতর্ক করেছেন, সাবান খাওয়ার খেসারত হিসেবে প্রাণ যেতে পারে। এর পরও কোনো ভ্রূক্ষেপ নেই তাঁর। সাবান খাওয়া চলছেই।
সাবান খাওয়ার বাতিকে ভোগা ১৯ বছরের এই তরুণীর নাম টেম্পেস্ট হেনডারসন। বাড়ি যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডায়। গুঁড়ো সাবান চেখে দেখার মধ্য দিয়ে তাঁর সাবান খাওয়া শুরু। এ ব্যাপারে তিনি বলেন, ‘প্রথম যেদিন গুঁড়ো সাবান খেলাম, ওই দিনটির কথা এখনো বেশ মনে পড়ে। প্রথমে আঙুলে একটুখানি গুঁড়ো সাবান নিয়ে স্বাদ নিলাম। দেখলাম, নোনতা নোনতা মজার স্বাদ, যা ভালো লেগে গেল। এর পর থেকে সাবান খেতে শুরু করলাম।’
সেবিকা হওয়ার প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন টেম্পেস্ট হেনডারসন। তিনি জানান, সাবান খাওয়ার পরিণতি যে মারাত্মক হতে পারে, তা তিনি জানেন। তার পরও এই অভ্যাস ছাড়তে পারছেন না। রোজ সকাল থেকে ঘুমানোর আগ পর্যন্ত কয়েক দফায় চলে তাঁর এই সাবান ভক্ষণ।
টেম্পেস্ট বলেন, ‘স্নান করার সময় সাবানের ফেনা খাই। আরও খাই গুঁড়ো সাবান। এ ছাড়া এক টুকরো সাবান মুখে পুরে তা শেষ না হওয়া পর্যন্ত চুষতে থাকি।’
চিকিৎসকদের মতে, টেম্পেস্ট ‘পাইকা’ নামে এক ধরনের সমস্যায় আক্রান্ত। এই সমস্যায় ভোগা ব্যক্তিরা অস্বাভাবিক খাবারে অভ্যস্ত হয়ে পড়ে, যা প্রচলিত নয় এবং এসব খাবারে পুষ্টি বলে কিছু নেই। আক্রান্ত ব্যক্তিরা ধাতব মুদ্রা, চক, ব্যাটারি ও টুথব্রাশের মতো অখাদ্যে অভ্যস্ত হয়ে পড়ে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, শরীরে খনিজ উপাদানের ঘাটতি থেকে এই সমস্যা দেখা দিতে পারে। এ ব্যাপারে ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে বিশেষজ্ঞরা বলেন, অনেক সন্তানসম্ভবা নারীকে গর্ভকালীন কয়লা খেতে দেখা যায়। গবেষণায় দেখা গেছে, এসব নারী তখনই কয়লা খান, যখন তাঁদের শরীরে লৌহ উপাদানের ঘটতি দেখা দেয়।
টেম্পেস্টের বেলায় শারীরিক কোনো পুষ্টির ঘাটতি রয়েছে মনে করছেন না চিকিৎসকেরা। মানসিক অবসাদ থেকে তাঁর এই ক্ষতিকর অভ্যাসটি হতে পারে বলে ধারণা করছেন তাঁরা। টেম্পেস্ট অবশ্য মানসিক অবসাদে ভোগার কথা স্বীকারও করেছেন। তিনি বলেন, ‘বন্ধু জেসনের সঙ্গে সম্পর্ক ছেদ হওয়ার পর থেকে তিনি সত্যিই অবসাদে ভুগছেন।’ ডেইলি মেইল অনলাইন।

Tuesday, February 8, 2011

পুঁজি হারিয়ে বিনিয়োগকারীরা এখন দিশেহারা


‘আপনারা আমার বুকে অস্ত্র ঠেকিয়ে একটি গুলি করেন। আমি মরতে চাই। আমি শেষ হয়ে গেছি। এভাবে বেঁচে থাকার চেয়ে মরাই ভালো।’ আজ সোমবার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) মূল ভবনের সামনে পুলিশকে লক্ষ্য করে এমন আকুতি করেন একজন বিনিয়োগকারী।
শুধু ওই বিনিয়োগকারীই নন, তাঁর মতো পুঁজি হারিয়ে আরও অনেকে এখন দিশেহারা। অনেকে শুরু করেন অস্বাভাবিক আচরণ। এক বিনিয়োগকারী সড়ক দ্বীপে থাকা একটি সাইনবোর্ড ভেঙে নিয়ে সেখানে কর্তব্যরত ক্যামেরাম্যানদের দিকে তেড়ে আসেন। এ সময় সেখানে অবস্থান করা বেশ কয়েকজন লোক তাঁর কাছ থেকে সাইনবোর্ডটি কেড়ে নেন। অনেককে আবার পুঁজি হারিয়ে কান্নাকাটি করতে দেখা যায়। অনেকে জুতা মিছিল করেন। কেউ কেউ আবার সড়কে আগুন জ্বালিয়ে অবরোধ সৃষ্টি করেন। মতিঝিলের শাপলা চত্বর থেকে ইত্তেফাক মোড় পর্যন্ত ডিএসইর সামনের সড়কে আজ সারা দিনই ছিল এমন চিত্র।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, প্রধান বিরোধী দলের ডাকা হরতালের দিনে আজ কোরাম পূর্ণ হওয়ায় বেলা ১১টায় ডিএসইতে লেনদেন শুরু হয়। গত দুই দিনের মতো আজও দরপতনের মধ্য দিয়ে শুরু হয় লেনদেন। পাঁচ মিনিটে ডিএসইর সাধারণ মূল্যসূচক ২৩৭ পয়েন্ট নেমে যায়। এরপর সূচক ঘুরে দাঁড়ালেও ১১টা ৫০ মিনিটের পর থেকে আবার পতন শুরু হয়, যা সারা দিনই অব্যাহত থাকে। তবে দুপুর একটার দিকে সূচক প্রায় ২৮০ পয়েন্ট পড়ে গেলে ক্ষতিগ্রস্ত বিনিয়োগকারীরা রাজপথে নেমে আসেন। প্রথমে সংখ্যা কম থাকলেও কিছুক্ষণের মধ্যে বিভিন্ন ব্রোকারেজ হাউস থেকে বিনিয়োগকারীরা রাস্তায় নামেন। তাঁরা ডিএসইর সামনের সড়কে আগুন জ্বালিয়ে অবরোধ করে দফায় দফায় বিক্ষোভ মিছিল করতে থাকেন। বিক্ষোভকারীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে কয়েকদফা ইট নিক্ষেপ করেন। তাঁরা অর্থমন্ত্রী ও বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরসহ এসইসির চেয়ারম্যান ও ডিএসইর প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে স্লোগান দেন। ওই সব ব্যক্তির পদত্যাগেরও দাবি করেন তাঁরা। বেশ কিছু বিনিয়োগকারী খালি গায়ে মিছিল করেন। একপর্যায়ে কিছু বিনিয়োগকারীকে সেখানে জুতা মিছিলও বের করতে দেখা যায়। দুপুর দুইটার দিকে একদল বিক্ষুব্ধ বিনিয়োগকারী মতিঝিলের জীবনবিমা টাওয়ারের (এসইসির কার্যালয়) নিচতলায় কাচ ভাঙচুর করেন। এ সময় চার/পাঁচটি যানও ভাঙচুর করা হয়।
বেলা সাড়ে তিনটার দিকে মতিঝিল শাপলা চত্বরের পাশে অবস্থিত আইএফআইসি ব্যাংক, এনসিসি ব্যাংক, সিটি ব্যাংক এবং ডিএসই ভবনের বিপরীত পাশের জনতা ব্যাংকের অফিসে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে কাচ ভাঙচুর করেন বিনিয়োগকারীরা। এ সময় পুলিশ ধাওয়া দিলে বিনিয়োগকারীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট নিক্ষেপ করেন। এ ছাড়া কয়েকটি ব্রোকারেজ হাউসেও ভাঙচুরের খবর পাওয়া যায়।
প্রায় তিন ঘণ্টা বন্ধ থাকার পর বেলা পৌনে চারটার দিকে মতিঝিলের শাপলা চত্বর থেকে ইত্তেফাক মোড় পর্যন্ত সড়কে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়।
বাজার পরিস্থিতি: আজ দিন শেষে ডিএসইতে সাধারণ মূল্যসূচক ৩২৪ দশমিক ৫১ পয়েন্ট বা ৪ দশমিক ৮২ শতাংশ কমে ৬ হাজার ৩৯৪ দশমিক ৫৩ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। লেনদেন হওয়া ২৫৫টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে দাম বেড়েছে ১২টির, কমেছে ২৪১টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে দুটি প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের দাম। আজ স্টক এক্সচেঞ্জটিতে ৬০৯ কোটি টাকার লেনদেন হয়েছে। গতকালও স্টক এক্সচেঞ্জটিতে ৪০৬ পয়েন্ট পতন হয়।
আজ ডিএসইতে লেনদেনে শীর্ষে থাকা ১০ প্রতিষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে ইউসিবিএল, গ্রামীণফোন, এনবিএল, বেক্সিমকো, তিতাস গ্যাস, এবি ব্যাংক, প্রাইম ব্যাংক, ইউনাইটেড এয়ারওয়েজ, পিপলস লিজিং অ্যান্ড ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস ও সাইথইস্ট ব্যাংক।
অপরদিকে চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জেও (সিএসই) আজ দরপতন হয়েছে। সিএসইর সাধারণ মূল্যসূচক আজ ৭৮৩ দশমিক ৭ পয়েন্ট কমে ১৮৪২৯ দশমিক ১৪ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। সিএসইতে লেনদেন হওয়া ১৮৮টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে দাম বেড়েছে মাত্র ছয়টির, কমেছে ১৮০টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে দুটি প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের দাম। আজ স্টক এক্সচেঞ্জটিতে ৮৪ কোটি টাকার লেনদেন হয়েছে।

সংবাদপত্রের সমালোচনা করলেন প্রধানমন্ত্রী


সংবাদপত্রের সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, মন্ত্রীদের সমালোচনা হচ্ছে বা হবে, এটা ঠিক। তবে পত্রিকাগুলো অনেক সময়ই অসত্য, বানোয়াট তথ্য দিয়ে সংবাদ পরিবেশন করে। এর প্রতিকার হওয়া উচিত।
আজ সোমবার রাশেদ খান মেননের বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রী বলেন, মন্ত্রীর সমালোচনা করবেন, এটা সাংবিধানিক অধিকার, এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু পত্রিকাগুলো যখন মিথ্যা, বানোয়াট, ভিত্তিহীন সংবাদ পরিবেশন করে তখন এর প্রতিকার কী হবে। আপনিও যে আজকের অবস্থায় পড়বেন না, তারই বা নিশ্চয়তা কী? কাল যখন আপনি এ অবস্থায় পড়বেন তখন কী হবে, এটা ভেবে দেখা উচিত।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘যোগাযোগসচিব আমার কাছে কোনো চিঠি পাঠাননি। আইন অনুসারে তিনি এটা পাঠাতে পারেন না। মন্ত্রী আমার কাছে চিঠি পাঠিয়েছেন। আজ এটি আমি দেখেছি। প্রধানমন্ত্রীর কাছে ফাইল যাওয়ার আগেই গণমাধ্যমে কীভাবে তা যায়, এর রহস্যও জানা দরকার।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর সাম্প্রতিক যুক্তরাজ্য সফরের কথা তুলে ধরে বলেন, ‘একটি পত্রিকা সম্পাদকীয় লিখে ফেলল, আমি নাকি হলিডে কাটাতে গেছি, আয়েশ করতে গেছি। অথচ আমি যুক্তরাজ্য পৌঁছে কর্মব্যস্ত সময় কাটিয়েছি। সেখানে গিয়ে আমি দুই ঘণ্টাও বিশ্রাম পেলাম না। সেখানকার প্রধানমন্ত্রী, স্পিকার, অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে আমাকে কাজ করতে হয়েছে।’
প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের এ পর্যায়ে মাগরিবের নামাজের বিরতি হয়। এরপর অধিবেশন শুরু হলে তোফায়েল আহমেদ পয়েন্ট অব অর্ডারে ফ্লোর চান। কিন্তু স্পিকার তাঁকে ফ্লোর না দিয়ে বলেন, এ বিষয়ের ওপর আলোচনার আর কোনো সুযোগ নেই। তোফায়েল আহমেদ তখন কিছু না বলে বসে পড়েন।
এ সময় আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি ও স্বতন্ত্র সদস্যরা একযোগে যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের পাঠানো চিঠি নিয়ে পয়েন্ট অব অর্ডারে কৌশলে বক্তব্য দেন।
সরকারি দলের সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত বলেন, সংসদ নেতার বক্তব্যের পর আলোচনা শেষ হয়ে যায়, এটা ঠিক। স্পিকারের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘সবার মুখ খুলে দেন। শত ফুল ফুটতে দিতে হবে।’
আওয়ামী লীগের আবদুল মতিন খসরু বলেন, উচ্চ আদালতের রায়েই পরিষ্কারভাবে সাংসদদের মর্যাদা ঠিক করা রয়েছে। সাংসদ হলেন দেশের মালিক জনগণের প্রতিনিধি। আর আমলারা হলেন জনগণের কর্মচারীদের প্রতিনিধি। জনগণকে অপমান বা অবমূল্যায়ন করার সুযোগ কারও নেই।
জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের মাঈন উদ্দীন খান বাদল বলেন, সংসদ বোবা এবং বধিরদের জায়গা নয়। তিনি সাংসদদের কথা বলতে দেওয়ার দাবি জানিয়ে বলেন, ‘সংসদে আজ ইশান কোণে মেঘ দেখছি। এটি ভালো লক্ষণ নয়।’ তিনি বলেন, প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীরা কোথাও ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্স অনুসারে সাংসদদের ওপর নন। কিন্তু তা নিয়ে আজ প্রশ্ন তোলার চেষ্টা করা হচ্ছে। তিনি বলেন, ‘বিরোধী দল আসে না, আমাদের সংসদে কথা বলতে দেন। ওনারা আসুক বা না আসুক, আমাদের কথায় মানুষের কথার প্রতিধ্বনি থাকবে। নইলে এ সংসদে মানুষের কথার প্রতিধ্বনি হবে না।’
এ সময় সংসদে সভাপতিত্বকারী ডেপুটি স্পিকার বিষয়টি সংসদীয় দলের সভায় উত্থাপন করার পরামর্শ দেন।
স্বতন্ত্র সাংসদ ফজলুল আজিম বলেন, ‘গত বৃহস্পতিবার তোফায়েল আহমেদের বক্তব্যের পক্ষে সংসদের সবাই ছিলেন। কিন্তু আজ সেই প্রবীণ সদস্যের ব্যাপারে একজন সচিব যে কাজ করেছেন, তা অমর্যাদাকর। অধিকার ক্ষুণ্নের কথা যদি সংসদে বলতে না পারি, তাহলে কী হবে। সংসদ থেকে বেরিয়ে গিয়ে বিরোধী দলের মতো কি হরতাল করব?’ তিনি বলেন, ‘অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে আমরা শুদ্ধ হচ্ছি না, ক্রমশ ড্রেনের দিকে যাচ্ছি। বিরোধী দলকে আশ্বাস দিচ্ছেন সংসদে এলে সব কথা বলার সুযোগ দেওয়া হবে। কিন্তু এখন সরকারি দলই সে সুযোগ পাচ্ছে না।’
এর আগে এ বিষয়ে রাশেদ খান মেননের বক্তব্যের সময় সরকারি দলের সাংসদেরা টেবিল চাপড়ে তাঁকে সমর্থন জানান। আরও কয়েকজন সাংসদ তখন ফ্লোর চাইলে প্রধানমন্ত্রী দাঁড়িয়ে বক্তৃৃতা দিতে শুরু করেন।

Wednesday, February 2, 2011

ফেসবুকের তথ্য নিরাপত্তায় ৫ টিপস


ফেসবুক ব্যবহারকারীর সংখ্যা এখন ৫০০ মিলিয়ন

ফেসবুকে ব্যক্তিগত তথ্যের নিরাপত্তা নিয়ে অনেকেই আজকাল বেশ চিন্তিত। যেকোনো মুহূর্তে হ্যাকারা ঢুকে পড়তে পারে আপনার ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্টে, নিয়ে নিতে পারে ছবি কিংবা ব্যক্তিগত তথ্য। তারপর কেবলই হয়রানি। এ রকম আরও কত দুঃশ্চিন্তা!
ফেসবুক ব্যবহারকারীদের এ ধরনের দুঃশ্চিন্তা দূর করতে তথ্যপ্রযুক্তিবিদেরা কাজ করে যাচ্ছেন। ফেসবুকে ব্যক্তিগত তথ্যের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার পাঁচটি কৌশল আবিষ্কার করেছেন তাঁরা। তো আর দেরি কেন; জেনে নিন নিরাপত্তার সেই কৌশলগুলো।

এক. ব্যক্তিগত গোপন (প্রাইভেসি) সেটিং সম্পর্কে জানা
আপনি দীর্ঘদিন ফেসবুক ব্যবহার করলেও নিজের গোপন সেটিং সম্পর্কে ধারণা না-ও থাকতে পারে। এমন অনেকেই আছেন, যাঁরা কখনো এই অপশনটিতে প্রবেশ করেননি। কিন্তু ফেসবুকে নিজের তথ্য নিয়ন্ত্রণে রাখতে গোপন সেটিং সম্পর্কে জানা জরুরি।
এ জন্য প্রথমেই নিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্টে প্রবেশ করতে হবে। এরপর ওপরে ডান দিকে অ্যাকাউন্ট মেন্যুতে ক্লিক করে প্রাইভেসি সেটিংয়ে আবার ক্লিক করতে হবে। প্রাইভেসি সেটিং পেজটি এলে সেটিং টেবিল থেকে কাস্টমাইজ সেটিংয়ে ক্লিক করতে হবে। এখন নির্ধারণ করুন, বন্ধু, বন্ধুর বন্ধু অথবা সবার সঙ্গে কী কী এবং কোন কোন তথ্য আপনি শেয়ার করতে চান অথবা চান না।
এখানেই শেষ নয়। এরপর ভিউ সেটিংয়ে ক্লিক করুন। এখন দেখতে পাবেন অন্যরা আপনার ফেসবুকের পেজটি কেমন দেখতে পাবেন। এভাবে নিজের কোন ধরনের তথ্য আপনি শেয়ার করতে চান, তা সহজেই নির্ধারণ করতে পারবেন।

দুই. কী তথ্য পোস্ট করছেন, তা ভালোভাবে দেখা
ফেসবুকে আপনি ইচ্ছামতো মনের কথা, কবিতা-গল্প-গানের লাইন, তথ্য পোস্ট করতে পারেন। পোস্টের লেখা দেখতে পাবে আপনার ফেসবুক বন্ধুরা। আপনি হতে পারেন যেকোনো মানুষের বন্ধু। যাঁকে হয়তো কখনো চোখে দেখেননি, এমন মানুষেরও। ডিজিটাল যুগে এ ধরনের অনেক কিছুই সম্ভব। তবে কিছু বিষয় থাকে একান্তই গোপনীয়। তাই আপনি কী তথ্য পোস্ট করছেন, সেটা ভালোভাবে দেখে তারপর পোস্ট করা উচিত। তাই নিজের তথ্যের নিরাপত্তার প্রথম বিষয় হচ্ছে কী তথ্য পোস্ট করছি, সেটা ভালোভাবে ভেবে-চিন্তে পোস্ট করা।

তিন. তৃতীয় পক্ষের অ্যাপলিকেশন নিয়ন্ত্রণে রাখা
বিশ্বব্যাপী ফেসবুকের পাশাপাশি আরও বেশ কিছু সামাজিক যোগাযোগের ওয়েবসাইট রয়েছে। এসব ওয়েবসাইটে বিভিন্ন ধরনের অ্যাপলিকেশন প্রদানের সুযোগ রয়েছে। এ ধরনের ওয়েবসাইট থেকে অনেক সময় আপনার ফেসবুক পেজে অ্যাপলিকেশন ব্যবহারের অনুরোধ আসে। ফেসবুকের পাশাপাশি অন্য কোনো ওয়েবসাইট থেকে এ ধরনের অনুরোধ এলে ভালোভাবে না জেনে তা গ্রহণ করা ঠিক নয়। ওই অ্যাপলিকেশনের কারণে আপনি যতবার বা যতক্ষণ অনলাইনে থাকেন, তার চেয়েও বেশি সময় দেখাতে পারে। এমনকি আপনার ফেসবুক পেজেও তাঁরা প্রবেশ করতে পারেন।
যদি তৃতীয় পক্ষের অ্যাপলিকেশন ব্যবহার করতে চান, তাহলে আপনার ফেসবুক প্রাইভেসি সেটিংয়ের এডিট সেটিংয়ে ক্লিক করুন। এরপর কোন কোন অ্যাপলিকেশন ও ওয়েবসাইটকে আপনি গ্রহণ করবেন, সেটা নির্ধারণ করুন। এর ফলে ওই সুনির্দিষ্ট বিষয়গুলোই আপনার পেজে দেখা যাবে।

চার. নিয়মিত তথ্য কাটছাঁট করা
অনেকেই আপনাকে বন্ধু হওয়ার অনুরোধ পাঠাতে পারে। আপনি সেগুলো গ্রহণও করতে পারেন। কিন্তু যদি কেউ আপনাকে বিভিন্নভাবে বার্তা বা তথ্য দিয়ে বিরক্ত করতে থাকে কিংবা অপ্রয়োজনীয় তথ্য পাঠাতে থাকে; তখন ওই বন্ধুকে তালিকা থেকে বাদ দেওয়াই ভালো। তা ছাড়া মাঝেমধ্যে বন্ধুদের তালিকা হালনাগাদ করাও ভালো। এভাবে কাউকে বাদ দিলে এ জন্য ফেসবুক থেকে কোনো ধরনের বার্তা বা সতর্কতা আপনাকে পাঠাবে না। তা ছাড়া অপ্রয়োজনীয় নিজের অনেক তথ্যও বাদ দেওয়া বা মুছে ফেলা যেতে পারে। মোট কথা নিয়মিত নিজের পেজের তথ্য কাটছাঁট করা ভালো। নিজের বার্তা, বন্ধুর অনুরোধসহ অন্যান্য তথ্য নিয়মিত কাটছাঁট করলে তথ্যের নিয়ন্ত্রণ নিজের কাছেই থাকে।

পাঁচ. অ্যাকাউন্ট নিষ্ক্রিয় করে
ফেসবুকে অ্যাকাউন্ট খোলার পর কোনো কারণে যদি আর ব্যবহারের ইচ্ছা না থাকে, তবে অ্যাকাউন্টটি নিষ্ক্রিয় করাই ভালো। তাহলে নিজের তথ্য হারানো বা অন্যের কাছে পৌঁছানোর আর কোনো আশঙ্কা থাকবে না।
অ্যাকাউন্ট নিষ্ক্রিয় করতে অ্যাকাউন্ট সেটিংয়ে গিয়ে একেবারে নিচের দিকে ‘ডিঅ্যাকটিভেট’ লিংকটি পাওয়া যাবে। এটিতে ক্লিক করলে আপনার অ্যাকাউন্টটি নিষ্ক্রিয় হয়ে যাবে। তবে অ্যাকাউন্ট নিষ্ক্রিয় হওয়া মানেই আপনার অ্যাকাউন্ট একেবারে হারিয়ে যাওয়া (ডিলিট) নয়। আপনি ফেসবুক অ্যাকাউন্ট একেবারে মুছে ফেলতে চাইলে তাও করতে পারবেন। স্থায়ীভাবে অ্যাকাউন্ট মুছে ফেলতে অ্যাকাউন্টের মধ্যে হেল্প সেন্টারে ক্লিক করতে হবে। এরপর পারমানেন্টলি ডিলিট অপশনটিতে ক্লিক করতে হবে। এ ছাড়া http://on.fb.me/3qsIFP এই লিংকের মাধ্যমেও সরাসরি মুছে ফেলা অপশনে যাওয়া যাবে।

সংবাদ ব্রিফিংয়ে জয়নাল আবদিন ২৪ ঘণ্টার মধ্যে খালেদার মামলা প্রত্যাহার না হলে গণ-আন্দোলন

আড়িয়ল বিলের ঘটনায় বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলা ২৪ ঘণ্টার মধ্যে প্রত্যাহার না করলে সারা দেশে গণ-আন্দোলনের কর্মসূচি দেবে বিএনপি।
আজ মঙ্গলবার সংসদের মিডিয়া সেন্টারে বিএনপির সংসদীয় দল আয়োজিত সংবাদ ব্রিফিংয়ে দলের চিফ হুইপ জয়নাল আবদিন এসব কথা বলেন।
সরকারকে হুঁশিয়ার করে জয়নাল আবদিন বলেন, মামলা প্রত্যাহার না হলে সারা দেশে দাউ দাউ করে আগুন জ্বলবে। আড়িয়ল বিলে নতুন বিমানবন্দর নির্মাণের প্রতিবাদে মুন্সিগঞ্জবাসী সড়ক অবরোধসহ বিভিন্ন আন্দোলন করছে। যে নাশকতা ঘটেছে, তার সঙ্গে সরকারদলীয় স্থানীয় সাংসদেরা জড়িত, বিএনপি নয়। জনগণের আন্দোলনের প্রতি বিএনপির নৈতিক সমর্থন রয়েছে। জনগণের আন্দোলন বানচাল করার জন্য সাংসদেরা নিজেদের ক্যাডার বাহিনী দিয়ে নাশকতা চালিয়েছেন।
ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত দাবি করে জয়নাল আবেদিন বলেন, বিএনপি যখনই সংসদে যাওয়ার ইচ্ছা পোষণ করে, তখনই সরকার বিরোধী দলের ওপর নানা ধরনের নির্যাতন চালাতে শুরু করে। এতে বোঝা যায়, বিরোধী দল সংসদে আসুক, সরকারই তা চায় না।
সংবাদ ব্রিফিংয়ে অন্যান্যের মধ্যে সাংসদ নজরুল ইসলাম, এ বি এম আশরাফ উদ্দীন নিজান, শহীদ উদ্দিন চৌধুরী, জেড আই এম মোস্তাফা আলী, শাম্মী আক্তার ও নিলুফার চৌধুরী।

Monday, January 31, 2011

পিরোজপুরে খাদ্যমন্ত্রী স্বীকার করছি এই মুহূর্তে চালের মূল্য বেশি


খাদ্য ও দুর্যোগব্যবস্থাপনা মন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক বলেছেন, ‘স্বীকার করছি এই মুহূর্তে চালের মূল্য বেশি। এ কারণে মানুষের একটু কষ্ট হচ্ছে। কিন্তু দেশে এখন কোনো দুর্ভিক্ষ নাই, খাদ্যসংকট আছে বলেও আমি মনে করি না।’ পিরোজপুরের জিয়ানগর উপজেলার পাড়েরহাট বন্দর এলাকায় স্পেনপ্রবাসীদের সহায়তায় নির্মিত ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্রের উদ্বোধনের সময় আজ রোববার তিনি এ কথা বলেন।
স্পেনপ্রবাসীদের উদ্দেশে মন্ত্রী বলেন, ‘আমি বিদেশে ছিলাম, প্রবাসজীবন কত কষ্টের তা আমি জানি। আপনাদের কষ্টের টাকা দিয়ে সিডরবিধ্বস্ত এই জনপদে আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণ করায় আপনাদের ধন্যবাদ জানাই।’
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ৯০ লাখ টাকা ব্যয়ে ওই দোতলা আশ্রয়কেন্দ্রটি নির্মাণ করা হয়। দুর্যোগের সময় এলাকাবাসী এখানে আশ্রয় নেবে। বছরের অন্য সময় এটি প্রাথমিক বিদ্যালয় হিসেবে কাজে লাগানো হবে।
জেলা প্রশাসক মো. রুহুল আমীনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য দেন বাংলাদেশে নিযুক্ত স্পেনের রাষ্ট্রদূত আরতুরো মানুয়েল পেরেজ, পিরোজপুর-১ আসনের সাংসদ এ কে এম এ আউয়াল ও স্পেনপ্রবাসী আবদুস ছোবান।
স্পেনের রাষ্ট্রদূত বলেন, নতুন নতুন ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণে বাংলাদেশকে সহযোগিতা দেওয়া অব্যাহত রাখবে স্পেন।

স্বাধীনতাস্তম্ভ নির্মাণ কমিটি থেকে ছয়জনের পদত্যাগ


সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের স্বাধীনতাস্তম্ভে নির্মাণে গঠিত বিশেষজ্ঞ কমিটি থেকে পদত্যাগ করেছেন ছয় সদস্য। তাঁরা হলেন অধ্যাপক জামিলুর রেজা চৌধুরী, স্থপতি সামসুল ওয়ারেস, শিল্পী হাশেম খান, স্থপতি মোবাশ্বের হোসেন, স্থপতি রবিউল হুসাইন ও অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন।
স্বাধীনতাস্তম্ভ নিয়ে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী তাজুল ইসলামের বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলে তাঁরা প্রথম আলোকে জানিয়েছেন। আজ রোববার মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী তাজুল ইসলামকে দেওয়া এক চিঠিতে তাঁরা এই পদত্যাগের কথা জানান।
এই ছয়জন জানিয়েছেন, ২৩ জানুয়ারি একটি দৈনিকে দেওয়া সাক্ষাত্কারে প্রতিমন্ত্রী বলেছেন, ‘বিশেষজ্ঞ কমিটির কারণেই স্বাধীনতাস্তম্ভের প্রকল্প ঝুলে যায়। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী সার্বিক তদারকি আর মন্ত্রীর দৌড়ঝাঁপে এখন কাজে গতি আসবে।’ তিনি বলেন, ‘বিশেষজ্ঞ কমিটিতে যারা ঠাঁই পান, তাঁরা কোনো বিষয়ে একমত হতে পারেন না। তাঁদের কারণে সিদ্ধান্ত গ্রহণে বিলম্ব হয়। তাঁদের কারণে সব উদ্যোগই ব্যাহত হয়। তাঁরা এতটাই মর্যাদা সচেতন যে কার আগে কার নাম থাকল, তা নিয়ে গাল ফুলিয়ে গোস্বা করেন। এতে দুর্নাম হয় সরকারের, মন্ত্রী হন সমালোচিত। মানুষকে তো আর ডেকে দেখানো যায় না বিশেষজ্ঞদের আচরণ। এটা দুঃখজনক।’
প্রতিমন্ত্রীর এই বক্তব্যের জবাবে ওই পদত্যাগপত্রে গতকাল ছয় বিশেষজ্ঞ বলেন, ‘প্রতিমন্ত্রীর কোনো অভিযোগই সত্য নয়। অন্যায়ভাবে সব দায়িত্ব বিশেষজ্ঞ কমিটির ওপর চাপানো হয়েছে।’ এই ছয়জন বলেন, ‘বিশেষজ্ঞ কমিটির ১২ জন সদস্যের মধ্যে পাঁচজন বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা। মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়ের সচিব বিশেষজ্ঞ কমিটির কো-চেয়ারম্যান। কিন্তু এ পর্যন্ত নয়টি সভার মাত্র তিনটিতে তিনি উপস্থিত ছিলেন।’
ছয় বিশেষজ্ঞ বলেন, ‘প্রকল্পের স্থবির অবস্থা দেখে বারবার আমরা তাগাদা দিয়েছি। এর প্রেক্ষিতে প্রতিমন্ত্রী আমাদের দ্রুত কাজ শেষ করার প্রতিশ্রুতিও দিয়েছিলেন। কিন্তু কাজ বাস্তবায়ন হয়নি।’
ছয় বিশেষজ্ঞ বলেন, ‘আমাদের এই প্রকল্পটি একটি জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প এবং ১৯৯৬ সাল থেকে আমরা এর সঙ্গে জড়িত। আমরা গত চার দশক নিজ নিজ ক্ষেত্রে এবং জাতীয় ক্ষেত্রে কাজ করেছি। কিন্তু কেউ কখনো এ ভাষায় আমাদের অসত্য অপবাদ দেয়নি। এর প্রতিবাদে আমরা বিশেষজ্ঞ কমিটির পদ থেকে পদত্যাগ করছি।’ মন্ত্রীকে উদ্দেশ করে চিঠিতে বলা হয়, ‘আশা করি, এর ফলে আপনাকে কোনো শৃঙ্খলে আবদ্ধ থাকতে হবে না এবং আগামী ৭ মার্চ আপনার কথামতো আপনি স্বাধীনতাস্তম্ভ দেশবাসীর জন্য উন্মুক্ত করে দেবেন।’
প্রতিমন্ত্রী পদত্যাগপত্র পাওয়ার কথা স্বীকার করেছেন।

Sunday, January 30, 2011

অস্থির মিশর ভাইস প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ, বিক্ষোভ চলছে


কায়রো, জানুয়ারি ২৯ (বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম/রয়টার্স)- পদত্যাগের দাবি প্রত্যাখ্যান করে চলেছেন মিশরের প্রেসিডেন্ট হোসনি মোবারক। নতুন একজন প্রধানমন্ত্রী এবং তার শাসনামলে প্রথমবারের মতো ভাইস প্রেসিডেন্ট নিয়োগ দিয়েছেন।

মিশরের গোয়েন্দা বাহিনীর প্রধান ও তার রাজনৈতিক সহকর্মী ওমর সুলাইমানকে শনিবার ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে নিয়োগ দেন মোবারক। এর পরপরই তিনি বিমান বাহিনীর সাবেক কমান্ডার ও বেসামরিক বিমান চলাচল মন্ত্রী আহমেদ শফিককে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ করেন।

মোবারকের পদত্যাগ দাবিতে বিক্ষোভকারীরা কারফিউ উপক্ষো করে রাজপথে বিক্ষোভ করছে।

রাজধানী কায়রো ও বন্দরনগরী আলেকজান্দ্রিয়ার সড়কগুলো জনসমূদ্রে পরিণত হয়েছে। অন্যান্য শহরেও বিক্ষোভ অব্যাহত রয়েছে।

ওমর সুলাইমান (৭৪) ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে ইতিমধ্যে শপথ নিয়েছেন। ৩০ বছর আগে প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার আগে হোসনি মোবারক ছিলেন ভাইস প্রেসিডেন্ট। তিনি এই প্রথম একজন ভাইস প্রেসিডেন্ট নিয়োগ করলেন।

এর আগে সেনাবাহিনী হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছিলো, স্থানীয় সময় বিকাল ৪ টায় কারফিউ বলবৎ হওয়ার পর কেউ তা অমান্য করলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কিন্তু বিক্ষোভকারীরা এই হুঁশিয়ারিকে আমল না দিয়ে রাজপথে বিক্ষোভ করে চলেছে।

বিক্ষুব্ধ জনতা ঘোষণা দিয়েছে যে, মোবারক পদত্যাগ না করা পর্যন্ত তারা রাজপথ ছাড়বে না। আলেকজান্দ্রিয়ায় বিক্ষোভকারীরা কয়েকটি ভবনে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে।

এশিয়ান কাপের রেকর্ড শিরোপা জাপানের

ফাইনাল ম্যাচ নয়, এ যেন গোল মিসের মহড়া। আর সেই মহড়ায় জয় হয়েছে জাপানের। আজ শনিবার রাতে অস্ট্রেলিয়াকে ১-০ গোলে হারিয়ে রেকর্ড চতুর্থবার এশিয়ান কাপের শিরোপা ঘরে তুলেছে নীল সামুরাইরা।
ম্যাচের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত একই চিত্র—গোল মিস! গোটা সময় ধরে উত্তেজনায় কেটেছে দর্শকদের। দুই দল যে পরিমাণ গোল মিস করেছে, তা মিস না হলে গোলের পাহাড়ের স্বাক্ষী হয়ে থাকতো আজকের ফাইনাল ম্যাচটি।
নির্ধারিত ৯০ মিনিটে গোল হয়নি। অতিরিক্ত সময়েও যথারীতি গোল মিস অব্যাহত। গোল হয়নি অতিরিক্ত সময়ের প্রথম ১৫ মিনিটেও। ১৯ মিনিটে ‘সোনার হরিণটির’ দেখা পেয়ে যায় জাপান। অস্ট্রেলিয়ার গোলবারের সামনে ফাঁকা জায়গায় বল পেয়ে যান লি। এই ফুটবলার যে অসাধারণ নৈপুন্যে বল জালে পাঠালেন, তাতে অস্ট্রেলিয়ার গোলরক্ষকের তাকিয়ে থাকা ছাড়া কিছু করার ছিল না।
এতোদিন ইরান ও সৌদি আরবের সঙ্গে যৌথভাবে সর্বোচ্চ তিনবার শিরোপাজয়ী ছিল জাপান। তবে আজকের ম্যাচ দিয়ে নীল সামুরাইরা ছাড়িয়ে গেছে সবাইকেই। ওয়েবসাইট।

Saturday, January 29, 2011

Grameen Knit fire doused


Savar, Jan 28 (bdnews24.com) — Firefighters managed to douse the fire at Grameen Knitwear in Savar after several hours but the national cricket team's jerseys were unharmed.

Although stacks of yarn were still burning when the fire service reported that the blaze was under control, factory management said that Bangladesh World Cup team jerseys, being manufactured there, were intact.

Fire service director Sheikh Mohammad Shahjalal confirmed bdnews24.com after about eight hours that the fire was under control. But some material was still in flames emitting smoke, he said.

The fire ravaged the ground and first floor of the factory but couldn't reach the second floor where the jerseys had been stored, said the factory general manager.

"We are still not certain about the cause of the fire. But it might been a short circuit," he said.

Meanwhile, Bangladesh Export Processing Zone Authority chief Maj Gen ATM Shahidul Islam has ordered a three-strong committee to probe the fire at the jersey manufacturer.

However, Bangladesh Cricket Board's media chief Jalal Yunus said the factory authorities have assured them that the jerseys are safe.

Fire service chief Abu Nayeem Mohammad Shahidullah also visited the site as the fire still raged.

"The factory was filled with synthetic material which emits a large amount of smoke in a fire. We have tried to enter the facility by drilling into the other side of the building. But visibility was low due to the heavy smoke," he had told reporters.
Parvez Akhter, a fireman on duty at the site, said the fire had broken out from the ground floor store.

The factory's dyeing and knitting sections were open when the fire broke out but the garment section was closed.

Factory officials said that around a fifth of their 3,000-men workforce was in the factory but all of them were evacuated safely.

Dhaka district assistant superintendent of police Monowar Hossain said, "No one was killed. However, a worker named Asaduzzaman was injured. He has been sent to a hospital for first aid."

The factory's managing director Ashraful Hasan said that they had stored yarn worth around Tk 110 million on Thursday. He apprehended that the whole lot has gone up in flames.

The fire broke out at the four-storey factory within the new zone of the EPZ area around 9am on Friday.

রাজধানীতে জবাই করে সাংবাদিক ও তাঁর স্ত্রী খুন

রাজধানীর নয়াপল্টনে একটি বাসায় এক দম্পতি খুন হয়েছেন। নিহত ব্যক্তিরা হলেন ফরহাদ খাঁ (৬০) ও তাঁর স্ত্রী রহিমা খাতুন (৫০)। আজ শুক্রবার বিকেলে পুলিশ তাঁদের লাশ উদ্ধার করে। ফরহাদ খাঁ দৈনিক জনতার জ্যেষ্ঠ সহকারী সম্পাদক। তাঁর গ্রামের বাড়ি টাঙ্গাইলে।
দৈনিক জনতার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মো. আহসানউল্লাহ জানান, গতকাল বৃহস্পতিবার রাত ১১টার দিকে কাজ শেষে ফরহাদ অফিস থেকে বের হন।
নয়াপল্টন থানার উপপরিদর্শক নাসির জানান, অফিসের কাজের প্রয়োজনে ফরহাদকে আজ বারবার ফোন দেওয়া হলেও তিনি ফোন ধরছিলেন না। এমনকি আত্মীয়স্বজনেরা তাঁর খোঁজ দিতে পারছিলেন না। এতে অফিসের লোকজন ও আত্মীয়স্বজনদের সন্দেহ হলে তারা থানায় এসে বিষয়টি জানান। এর পরিপ্রেক্ষিতে ৭৭ নয়াপল্টনে তাঁদের ভাড়াবাসা দোতলার ফ্ল্যাটে যায় পুলিশ। সেখানে বাইরে থেকে দরজায় দুটো তালা দেওয়া ছিল। পরে তালা ভেঙে ভেতরে ঢুকে দেখা যায় ঘরের ভেতরের সব আসবাবপত্র লন্ডভন্ড আর নিহত দুজনের মধ্যে রহিমা বিছানার ওপর এবং ফরহাদ বিছানার পাশে মেঝেতে রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে ছিলেন।
এই দম্পতির একটি কন্যাসন্তান রয়েছে বলে জানা যায়। তিনি ইতালিতে থাকেন।