সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের স্বাধীনতাস্তম্ভে নির্মাণে গঠিত বিশেষজ্ঞ কমিটি থেকে পদত্যাগ করেছেন ছয় সদস্য। তাঁরা হলেন অধ্যাপক জামিলুর রেজা চৌধুরী, স্থপতি সামসুল ওয়ারেস, শিল্পী হাশেম খান, স্থপতি মোবাশ্বের হোসেন, স্থপতি রবিউল হুসাইন ও অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন।
স্বাধীনতাস্তম্ভ নিয়ে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী তাজুল ইসলামের বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলে তাঁরা প্রথম আলোকে জানিয়েছেন। আজ রোববার মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী তাজুল ইসলামকে দেওয়া এক চিঠিতে তাঁরা এই পদত্যাগের কথা জানান।
এই ছয়জন জানিয়েছেন, ২৩ জানুয়ারি একটি দৈনিকে দেওয়া সাক্ষাত্কারে প্রতিমন্ত্রী বলেছেন, ‘বিশেষজ্ঞ কমিটির কারণেই স্বাধীনতাস্তম্ভের প্রকল্প ঝুলে যায়। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী সার্বিক তদারকি আর মন্ত্রীর দৌড়ঝাঁপে এখন কাজে গতি আসবে।’ তিনি বলেন, ‘বিশেষজ্ঞ কমিটিতে যারা ঠাঁই পান, তাঁরা কোনো বিষয়ে একমত হতে পারেন না। তাঁদের কারণে সিদ্ধান্ত গ্রহণে বিলম্ব হয়। তাঁদের কারণে সব উদ্যোগই ব্যাহত হয়। তাঁরা এতটাই মর্যাদা সচেতন যে কার আগে কার নাম থাকল, তা নিয়ে গাল ফুলিয়ে গোস্বা করেন। এতে দুর্নাম হয় সরকারের, মন্ত্রী হন সমালোচিত। মানুষকে তো আর ডেকে দেখানো যায় না বিশেষজ্ঞদের আচরণ। এটা দুঃখজনক।’
প্রতিমন্ত্রীর এই বক্তব্যের জবাবে ওই পদত্যাগপত্রে গতকাল ছয় বিশেষজ্ঞ বলেন, ‘প্রতিমন্ত্রীর কোনো অভিযোগই সত্য নয়। অন্যায়ভাবে সব দায়িত্ব বিশেষজ্ঞ কমিটির ওপর চাপানো হয়েছে।’ এই ছয়জন বলেন, ‘বিশেষজ্ঞ কমিটির ১২ জন সদস্যের মধ্যে পাঁচজন বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা। মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়ের সচিব বিশেষজ্ঞ কমিটির কো-চেয়ারম্যান। কিন্তু এ পর্যন্ত নয়টি সভার মাত্র তিনটিতে তিনি উপস্থিত ছিলেন।’
ছয় বিশেষজ্ঞ বলেন, ‘প্রকল্পের স্থবির অবস্থা দেখে বারবার আমরা তাগাদা দিয়েছি। এর প্রেক্ষিতে প্রতিমন্ত্রী আমাদের দ্রুত কাজ শেষ করার প্রতিশ্রুতিও দিয়েছিলেন। কিন্তু কাজ বাস্তবায়ন হয়নি।’
ছয় বিশেষজ্ঞ বলেন, ‘আমাদের এই প্রকল্পটি একটি জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প এবং ১৯৯৬ সাল থেকে আমরা এর সঙ্গে জড়িত। আমরা গত চার দশক নিজ নিজ ক্ষেত্রে এবং জাতীয় ক্ষেত্রে কাজ করেছি। কিন্তু কেউ কখনো এ ভাষায় আমাদের অসত্য অপবাদ দেয়নি। এর প্রতিবাদে আমরা বিশেষজ্ঞ কমিটির পদ থেকে পদত্যাগ করছি।’ মন্ত্রীকে উদ্দেশ করে চিঠিতে বলা হয়, ‘আশা করি, এর ফলে আপনাকে কোনো শৃঙ্খলে আবদ্ধ থাকতে হবে না এবং আগামী ৭ মার্চ আপনার কথামতো আপনি স্বাধীনতাস্তম্ভ দেশবাসীর জন্য উন্মুক্ত করে দেবেন।’
প্রতিমন্ত্রী পদত্যাগপত্র পাওয়ার কথা স্বীকার করেছেন।