Friday, January 28, 2011

বৈঠক শেষে অর্থমন্ত্রী ব্যাংকগুলোতে কিছু তদবির হয়, নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা রয়েছে


রাষ্ট্রমালিকানাধীন ব্যাংকগুলোতে কিছু তদবির হয় বলে স্বীকার করেছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। তিনি বলেছেন, এই তদবির যে দেশ থেকে খুব উঠে যাবে, এমনটা ভাবা ঠিক নয়। তবে তদবির যাতে নিয়ন্ত্রণের মধ্যে থাকে, সেই চেষ্টা থাকতে হবে।
গতকাল বৃহস্পতিবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন ‘পদ্মা’য় রাষ্ট্রমালিকানাধীন সোনালী ও অগ্রণী ব্যাংকের সঙ্গে বৈঠক শেষে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে অর্থমন্ত্রী এসব কথা বলেন।
বৈঠকে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আতিউর রহমান, অর্থসচিব মোহাম্মদ তারেক, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব শফিকুর রহমান পাটোয়ারী, ডেপুটি গভর্নর নজরুল হুদা, সোনালী ব্যাংকের চেয়ারম্যান কাজী বাহারুল ইসলাম, ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) হুমায়ুন কবির, অগ্রণী ব্যাংকের চেয়ারম্যান খন্দকার বজলুল হক, এমডি সৈয়দ আবদুল হামিদ এবং দুই ব্যাংকের পরিচালকেরা উপস্থিত ছিলেন।
সংবাদ সম্মেলনের শুরুতেই দুই ব্যাংকের সঙ্গে বৈঠকের কারণ তুলে ধরেন অর্থমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘২০০৯ সালের আগস্ট-সেপ্টেম্বরের দিকে ব্যাংকের পরিচালকদের নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল। অনেক দিন থেকেই তাগিদ অনুভব করছিলাম যে তাদের সঙ্গে বসা দরকার এবং তাদের বক্তব্য শোনা দরকার। কারণ, তাদের জনসেবার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।’
অর্থমন্ত্রী বলেন, সরকারি ব্যাংকের বিশেষত্বই হলো এর শাখা ছড়ানো গ্রামে গ্রামে। একদিকে তারা জাতীয় সঞ্চয় বাড়াচ্ছে, অন্যদিকে ভূমিকা রাখছে বিনিয়োগে। কিন্তু খারাপ বিষয় হলো ‘খেলাপি সংস্কৃতি’ শুরু হয়েছে। ব্যাংকের টাকা ফেরত না দিলে তো এরা পথে বসে যাবে। তবে এ বছর ব্যাংকগুলো খেলাপির মাত্রা কমাতে সক্ষম হয়েছে।
ব্যাংকের পর্ষদে পরিচালকদের নিয়োগ বিষয়ে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘২৭ বছর আগে একবার বাণিজ্য বোঝেন, এমন লোকদের নিয়োগ দিয়েছিলাম। যেমন একবার দিয়েছিলাম সৈয়দ মঞ্জুর এলাহীকে। ভালো কাজ হয়েছিল।’ অন্যদিকে অন্য রকম কাজও হয়েছে বলে উল্লেখ করে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘ব্যবসা-বাণিজ্যের সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের টাকা-পয়সার লেনদেনের কারণে অনেক সময় লোভটা বেড়ে যায়। এবার তাই রাজনীতির সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের পরিচালক নিয়োগ দিই। তারা ভালোই কাজ করছে। যে রকম চেয়েছি, ঠিক সে রকমই। তবে কষ্টও আছে। আর তা হলো খেলাপি সংস্কৃতি।’
প্রথম আলোয় প্রকাশিত প্রতিবেদন বিষয়ে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘কাগজ তো খুব ওস্তাদ। আজই (গতকাল) তারা খবর ছাপিয়েছে। এতে কিছু পরিচালকের নাম বাদ দিয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক অবশ্য আমাকে চিঠি লিখেছে বহু আগেই। এতে কারও নাম বা ব্যক্তির কথা বলা নেই।’ অর্থমন্ত্রী আরও বলেন, ‘প্রকাশিত প্রতিবেদনটি একটি নেতিবাচক প্রতিবেদন বলে আমি মনে করি। তবে অনেকে বলেছেন ভালোই হয়েছে।’
সূত্র জানায়, রাজনৈতিক পরিচালকেরা বৈঠকে সংবাদপত্রে তাঁদের নাম ছাপা হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন। অনেক সময় ধরেই আলোচনা হয় সংবাদপত্রের প্রতিবেদন নিয়ে। এক পর্যায়ে পরিচালকেরা বলেন, তাঁরা রাতে মানসিক শান্তি নিয়ে ঘুমিয়েছিলেন। কিন্তু সকালে উঠে দেখেন পত্রিকাতে তাঁদের চরিত্র হনন করা হয়েছে। এতে তাঁদের মনে হচ্ছে তাঁরা যেন আসামি। তাঁদের কাঠগড়ায় দাঁড় করানো হয়েছে।
পরিচালকেরা বলেন, কিন্তু তাঁরা তো ব্যাংকের জন্য ভালো কাজ করেছেন। অতীতের যেকোনো সময়ের চেয়ে তাঁরা ভালোভাবে ব্যাংক চালাচ্ছেন, উন্নতি করেছেন।
সংবাদপত্রে চিঠি কীভাবে গেল, ছাপা হলো এ বিষয়ে তাঁরা বাংলাদেশ ব্যাংকের ওপর কিছুটা ক্ষোভ দেখান। বলেন, গভর্নর কেনই বা অর্থমন্ত্রীকে চিঠি দিতে গেলেন। তিনি তো তাঁদের ডেকে বলতে পারতেন। তাঁরা বলেন, তারা তো ব্যাংকের দৈনন্দিন কাজে হস্তক্ষেপ করেননি। বরং ঋণ আদায়ের প্রচেষ্টা নিয়েছেন এবং তাতে আদায় বেড়েছে।
কেউ কেউ বলেন, তাঁরা রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব এটা ঠিক আছে এবং এটাও ঠিক যে তাঁরা রাজনৈতিকভাবে নিয়োগ পেয়েছেন। কিন্তু তাঁরা কোনোভাবেই ব্যাংকগুলোতে রাজনৈতিক কারণে হস্তক্ষেপ করেননি। কেউ কেউ বলেন, তাঁরা খুবই কম ক্ষেত্রে হয়তো কিছুটা তদবির করেছেন, কিন্তু হস্তক্ষেপ করেননি।
সূত্র জানায়, গভর্নর বৈঠকে বলেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে কোনো তথ্য বা চিঠি সংবাদপত্রে যায়নি। ইচ্ছা করলে পরিচালকেরা পত্রিকাতে জিজ্ঞাসা করেও তা দেখতে পারেন। উপরন্তু, গভর্নর বলেন, তিনি অর্থমন্ত্রীকে যে চিঠি দিয়েছেন, তাতে কারোর নামও ছিল না।
সূত্র জানায়, অর্থমন্ত্রী বৈঠকে বলেন, পরিচালকদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আছে, তাঁরা যখন জেলা শহরে যান তখন সেখানে গিয়ে ব্যাংকের কাছ থেকে গাড়ি নিয়ে ব্যবহার করেন, এটা করবেন না। তিনি পরামর্শ দিয়ে বলেন, রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব বলেই তাঁদের নিয়োগ দেওয়া হয়েছে জনস্বার্থে কাজ করার জন্য। মন্ত্রী বলেন, পরিচালকেরা ব্যক্তিগতভাবে ব্যাংকের কাজে হস্তক্ষেপ করবেন না। তাঁরা পর্ষদে নীতিনির্ধারণী সিদ্ধান্ত নেবেন। ব্যবস্থাপনাতে কোনো ত্রুটি থাকলে তাঁরা তা পর্ষদে বসে দিকনির্দেশনা দেবেন।
সূত্র জানায়, তদবিরের জন্য কেউ ব্যাংকে যেন বড় ও দামি গাড়ি নিয়ে না আসেন, সে ব্যাপারেও আলোচনা হয়েছে বৈঠকে।
ব্যাংকের দৈনন্দিন কর্মকাণ্ডে হস্তক্ষেপ না করলে বাংলাদেশ ব্যাংক আপনাকে চিঠি লিখত না—এমন প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘এ কথা আপনারাই (সাংবাদিকেরা) বলেন, ব্যাংকের এমডিরা তো বলেন না।’